রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের ভাবনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস

১৮৫৮ সালে পুরান ঢাকায় ব্রাহ্ম স্কুল নামে যে প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছিল, ১৮৭২ সালে তার নাম হয় জগন্নাথ কলেজ। তারপর ১৩৩ বছর প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এ বছর প্রতিষ্ঠানটি ১৯ বর্ষে পদার্পণ করছে। গত ১৮ বছরে ক্যাম্পাসের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও দেশের উচ্চশিক্ষা প্রসারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে নিজেদের ভাবনার কথা জানিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের সেই ভাবনা, অনুভূতি ও প্রত্যাশার কথা লিখেছেন আবু সাঈদ চৌধুরী ও তৈমুর মবিন
নতুনধারা
  ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

এটাই এখন আমার স্বপ্নভূমি

মুহাম্মদ মইন উদ্দিন হাসান

নৃবিজ্ঞান বিভাগ।

আমার কাছে জবি স্বপ্নভূমির নাম। ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার এই প্রতিষ্ঠানটি সগৌরবে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধারণে নিজেদের স্বাতন্ত্র্যতা জানান দিচ্ছে। আমি আশাবাদী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভাষা শহীদ রফিকের মতো দেশপ্রেমিক, রিটিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া একমাত্র বাঙালি ব্রজেন দাশের মতো সাহসী পুরুষ এবং ক্ষণজন্মা সৈয়দ শামসুল হকের মতো কথা সাহিত্যিকদের বিচরণভূমি হোক এই জগাবাবুর প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমার একটি বিশেষ আবেদন থাকবে, কোনো জবিয়ান যেন কখনোই পরিস্থিতির বশবর্তী হয়ে আত্মহত্যার মতো ঘৃণ্য পথটা বেছে না নেয়। প্রত্যেক জবিয়ানদের কাছে তার ক্যাম্পাসটি হোক শান্তির ও নিরাপদের।

মেয়েদের একমাত্র হল আমাদের পূর্ণতা দিয়েছে

মাকসুদা আক্তার

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মেয়ে হল বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। একটা মেয়ের জন্য নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মেসে সবমিলিয়ে সুযোগ-সুবিধা যেমন থাকে না, তেমনি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ততটা ভালো না। মূলত হলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণেই হলে ওঠা। পুরান ঢাকার বাসা বা মেস নেওয়ার ঝামেলা থেকে অবশ্যই হলে থাকার বিষয়টাকে আমার কাছে নিরাপদের, আনন্দের ও স্বাচ্ছন্দ্যের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চাওয়া থাকবে- দ্রম্নতই আমাদের জন্য পর্যাপ্ত হল ব্যবস্থার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক।

দ্রম্নত দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন চাই

রেজাউল হক রিসাদ

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ।

আমাদের ক্যাম্পাস আঙিনা ছোট হলেও একে-অপরের সঙ্গে প্রতিনিয়ত দেখা হওয়ায় তৈরি হয়েছে একটি বিশাল পরিবার। শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত হল সুবিধা না থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় চলমান নতুন ক্যাম্পাসের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করে সব সংকট, প্রতিকূলতার অবসান ঘটিয়ে সাফল্যের দিকে অগ্রসর হোক; একজন জবিয়ান হিসেবে আমার এটাই প্রত্যাশা রইল।

লোকের ভাবনায় আমার জগন্নাথ

নিশাত তাবাসসুম জেবা

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।

স্বপ্ন ভেঙে আবারো নতুন স্বপ্ন দেখার পিপাসায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুয়ারে এসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেতরে গিয়েছিলাম ভর্তির দিনে। ভাবনার একটা সময় পেরিয়ে আমার মাকে বলে বসলাম, এই ছোট্ট ক্যাম্পাস এবং অধিকাংশ লোকের ভাবনায় আমার বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে শোনা অনেক কিছুর সীমাবদ্ধতা যেন আমাকে ভীষণভাবে হতাশ করছে প্রত্যেক মুহূর্তে। মা বললেন, একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করে দেখ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা, উদ্ভাবনে অবদানের জন্য স্বীকৃত এবং প্রতিনিয়ত সবার যৌথ প্রচেষ্টায় পড়াশোনার সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করে একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে পেরেছে বলেই তোমার প্রতিষ্ঠান স্বনামধন্য এবং তুমি এই প্রতিষ্ঠানের আজ থেকে একজন। আমরা স্বনামধন্য এবং আলোচিত বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। সেদিন মায়ের কথা আমার ভেতরে অন্যরকম এক শক্তির এবং মানসিক শান্তির সঞ্চার করেছিল। আর আজ আমি উপলব্ধি করতে পারি আমরা সেরাদের কাতারে দাঁড়াচ্ছি।

'রেখেছি চরণ এই ধূলিতে যেহেতু একবার,

হেরে গিয়েও চেষ্টা চালিয়ে, জয় এনে দেখিয়ে দিব

আমাকে আটকানোর সাধ্যি আছে কার।'

জগন্নাথ তুমি আমার হৃদয়ে চির অম্স্নান

জাকিয়া আক্তার

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।

হে প্রিয়তম! কোনো এক বসন্তের দিনে পাগলা হাওয়ার মতো তুমি আমার হৃদয়কে উতলা করে তুলেছিলে।

জান হে প্রিয়! চাতক যেমন বৃষ্টির জন্য প্রহর গুনে, আমিও তোমার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনেছি। তোমাকে আমি পেয়েছি এটাই আমার স্বার্থকতা।

দুর্যোগ-সংকট, আঘাত-অভিঘাত, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-প্রাপ্তি, আন্দোলন-সংগ্রাম, বিরহ-মিলনের আজ ১৮টি বছর পূর্ণ হয়েছে তোমার। আমি মনে করি, প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছে বিশেষ কিছু গুণ। আজ প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসাব না খুলে, অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে তোমার কাছে আবেদন জানাই- তুমি আমাদের বিকশিত হওয়ার পথের সারথি হও। আমাদের অন্তর্নিহিত সৃজনশীলতা প্রকাশের ক্ষেত্র প্রসারিত করো। শৃঙ্খলা, আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম, উন্নত চরিত্র, পরোপকারী, উদার মানবিকতাসম্পন্ন যোগ্য শিক্ষার্থী তৈরিই যেন হয় তোমার শপথ।

স্বপ্ন যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মো. ইমদাদুল হক

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।

প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে একটা স্বপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেইরকম স্বপ্ন আমারও ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেই স্বপ্ন বুকে আগলে রেখে দীর্ঘ চার-পাঁচটা মাস পরিশ্রম করে অবশেষে আলস্নাহর অশেষ রহমতে স্বপ্নটা পূরণ হলো। দিন শেষে আমিও আমার নামের শেষে লাগাতে পারছি, আমিও একজন গর্বিত জবিয়ান। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পরিবারটি আমার নিজের পরিবারের মতোই মনে হয়। এখানে শিক্ষকরা বাবা-মায়ের মতো আর সিনিয়ররা ভাই-বোনদের মতো ভালোবাসা দিয়ে আমাদের আগলে রাখে। গৌরব ও সাফল্যের ১৯ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে আমার ক্যাম্পাস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে