দৃশ্যমান উন্নয়নেও প্রশংসা কুড়িয়েছে
বাংলাদেশ
ডক্টর মাহফুজুর রহমান আখন্দ
প্রফেসর,
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বিত ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়। স্বাধীনতার লক্ষ্যে যুদ্ধ করেছি ইংরেজদের বিরুদ্ধে, করেছি পাকিস্তানী শাসকদের বর্বরতার বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার এই দীর্ঘপথ পরিক্রমায় সফলতার জন্য বঙ্গবন্ধুসহ সব মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে থাকি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও আমাদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে 'সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার' এই তিনটিই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্রের আদর্শ ও রাষ্ট্রীয় দর্শন। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের সংবিধান মোতাবেক গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র; এই চারটি বিষয়কে বাংলাদেশের মূলনীতি হিসেবে দেখতে পাই। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মাঝেও স্বাধীনতার ৫২ বছর অতিক্রম করেছি। এর মধ্য দিয়ে আমরা সফলতার অনেক খবর পাচ্ছি। দৃশ্যমান উন্নয়নেও প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাস্তব অর্থে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো এখনো সোনার হরিণের মতো অধরাই থেকে গেছে। গণতন্ত্র এখন নির্বাসিত আসামি। দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বি। ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির যে ঢোল পেটানো হচ্ছে, সেটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। বরং কিছু কিছু মানুষের জন্য দ্রব্যমূল্য কোনো সমস্যাই নয়। টাকা রাখার মতো নেই জায়গা বাংলাদেশে। তাই তারা অন্যদেশে টাকা জমা করছেন। অন্যদিকে দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, হয়রানিমূলক মামলায় অনেকেই মৃতু্যর প্রহর গুনছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে উদারতা দরকার। বিভেদের রাজনীতি থেকে ফিরে এসে ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ার প্রয়াস থাকলেই উন্নয়নের রোডম্যাপে এগিয়ে যাবে আমাদের বাংলাদেশ।
পথচলা হোক গৌরবের
সাফিয়া আফরিন
প্রভাষক,
ফার্মেসি বিভাগ,
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালে ত্রিশ লাখ শহীদ, বাঙালি জাতির হাহাকার, আত্মত্যাগ ও হাজারও মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময় অর্জিত আমাদের বিজয়। সময়ের পরিক্রমায় বিষাদের হওয়া অনুভূতি হারিয়ে যাচ্ছে। বিজয়ের ৫৩ বছরেও আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। বাঙালি হিসেবে নিজস্ব সংস্কৃতি ও স্বনির্ভর জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার কথা ছিল। কিন্তু আমরা চোরাবালিতে আটকে গেছি। উন্নয়নের বিপরীতে সীমাহীন দুর্নীতি ও বিভিন্ন ধরনের অপসংস্কৃতি আমাদের পিছিয়ে রেখেছে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ভবিষ্যতে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ পেতে আশাবাদী আমরা সবাই। সৃজনশীলতার ছোঁয়ায় সৃষ্টি হোক এক নন্দিত সমাজ, গৌরবের হোক আগামীর পথচলা।
দেশ মাতৃকাকে এগিয়ে নিতে একতাবদ্ধ
হওয়া প্রয়োজন
ডক্টর আনোয়ারা আক্তার খাতুন
সহযোগী অধ্যাপক,
ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগ,
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
শুধু জাঁকজমক আয়োজন-উৎসবে বিজয় উদযাপন করাই বিজয় দিবসের উদ্দেশ্য নয়। বরং সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বিশ্বের বুকে প্রিয় দেশমাতৃকার সুনাম ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখায় আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময় আমাদের এই অর্জন। সবার আত্মত্যাগ ও বিসর্জনের মাধ্যমে পেয়েছি আমাদের লাল সবুজের পতাকা। বিজয়ের মাধ্যমে আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে বাঙালির গুণাবলী অর্জন করতে হবে। সকল ধরনের পিছুটান ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ই হবে আমাদের বিজয়ের একমাত্র ভাবনা।
দেশের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগে
প্রস্তুত থাকতে হবে
মো.হাবিবুলস্নাহ বেলালী
প্রভাষক,
রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগ,
গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
এ দেশের সূর্য-সন্তানদের অপরিসীম আত্মত্যাগের বিনিময় আমাদের যে বিজয় অর্জিত হয়েছিল, তাদের শ্রদ্ধাবনতভাবে স্মরণ করার দিন ১৬ ডিসেম্বর। বিজয় বার্ষিকীতে তাদের শ্রদ্ধা ও স্মরণ করার পাশাপাশি যে বিষয়টি বেশি সামনে আসে, সেটি হলো- মুক্তিযোদ্ধারা যে মহান ব্রত নিয়ে তাদের জীবন উৎসর্গ ও সীমাহীন আত্মত্যাগ করেছিলেন, এর কতটুকু স্বাধীনতা পরবর্তী সময় বাস্তবায়িত হয়েছে বা আমরা কি এই বিজয়ের সঠিক মর্মার্থ অনুধাবন করতে পেরেছি?
এ দেশের সচেতন নাগরিকদের অনেকেই মনে করেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আমাদের জীবনযাত্রার মান ও সামগ্রিক অর্থনীতির আকার যে বেড়েছে, এ নিয়ে তেমন সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, কর্মসংস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রেও আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, তার অনেকটাই অপূরণীয় রয়েছে। এ ছাড়া চারদিকে অন্যায়-অত্যাচার, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, স্বজনপ্রীতি, অসহনশীলতা, বিচারহীনতা, দ্রব্য-মূল্যের লাগামহীনতার যে সংবাদ প্রতিনিয়ত কানে আসে, তা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের অবস্থা হতে পারে না! আমাদের সামগ্রিক ব্যবস্থায় বিভাজন না রেখে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা,পরস্পরের প্রতি সহনশীলতা, দেশের প্রয়োজনে যেকোনো আত্মত্যাগে প্রস্তুত থাকা এবং স্বার্থ ও উন্নয়ন প্রশ্নে 'আমি' না ভেবে 'আমরা' ভাবতে পারার মনোভাব আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক হতে পারে।