সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীতের আমেজে বেরোবিতে চলছে ব্যাডমিন্টন খেলার ধুম

ইভান চৌধুরী
  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

শীতের আমেজকে ঘিরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) চলছে ব্যাডমিন্টন খেলার ধুম। চলছে রাতভর খেলার উৎসব। বিভিন্ন স্থানেই কাটা হয়েছে ব্যাডমিন্টনের কোর্ট। বিশেষত প্রশাসনিক ভবনের পার্শ্বে, হলের সামনে, স্বাধীনতা স্মারক মাঠে একাধিক খেলার জন্য কোর্ট তৈরি করেছেন শিক্ষার্থীরা। এক পক্ষে দু'জন করে মোট চারজনের অংশগ্রহণে মেতে উঠছে।

শীতে যেমন লেপ প্রধান অনুষঙ্গ, তেমনি আরও এক অনুষঙ্গ ব্যাডমিন্টন। শীতের শিরশির হাওয়ার আগমনি বার্তা হলো গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের অলি-গলিতে ব্যাডমিন্টনের কোর্ট। নভেম্বর-ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে খেলাটির প্রতি প্রবল আগ্রহ জানান দেয় শীত আর ব্যাডমিন্টন যেন একই সুতোয় গাঁথা। শীতের সন্ধ্যায় পাড়া-মহলস্না, শহর কিংবা গ্রামে ব্যাডমিন্টন খেলার চিত্র পরিচিত। গ্রামে বাড়িতেও আঙিনায় হয়ে উঠে মৌসুমি এই খেলার প্রাণকেন্দ্র।

প্রকৃতিতে শীত হলো রিক্ততার প্রতীক। এ সময় শীতের রিক্ততা মনকে অবসাদ করে তোলে। যেমনটি করেছিল কবি সুফিয়া কামালের। কিন্তু শীতের রিক্ততা আর অবসর মনকে চাঙা করে দেওয়ার জন্য শীতের শিরশির হাওয়ায় আগমন ঘটে ব্যাডমিন্টনে। উচ্চস্বরে আউট! ব্যাট টাচ! পয়েন্টস অনেকের কাছে এগুলো পরিচিত নাম। প্রকৃতিতে শুরু হয়েছে শীতের হাওয়া। আর শীত মানেই কোর্ট কাটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি। শীত প্রকৃতিতে এসেছে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই খেলাটি। শীত এলেই শহর কিংবা গ্রামে ব্যাডমিন্টন খেলার ধুম পড়ে। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি খেলায় মাতোয়ারা হন তরুণরা। তালিকা থেকে বাদ পড়ে না বিভিন্ন বয়সের মেয়েরাও। তারাও শীতের পরশ বুলানো কুয়াশায় মত্ত থাকেন ব্যাডমিন্টন খেলায়।

গ্রামের কথা ভিন্ন। সেখানে অনেক ফাঁকা জায়গা। অনায়াসে বড় করে খেলার আয়োজন করা যায়। কিন্তু শহরের চিত্র অনেকটা ভিন্ন। মাঠ থাকলেও খেলার মতো অবস্থা নেই। তাই বলে কি খেলা বন্ধ থাকবে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের পাশেই শুরু হয়ে যায় মাঠ সাজানোর প্রস্তুতি। লাইট, নেট, কর্ক, স্ট্যান্ড। টানা খেলতে খেলতে শরীরে ক্লান্তি চলে আসে। তবুও মানুষ উপভোগ করে খেলাটি। বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতে অভ্যস্ত থাকলেও ব্যাডমিন্টন নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা কোনো অংশেই কম নয়। বরং শীতকাল এলেই এই খেলাটি সব খেলাকে ছাপিয়ে যায়।

ব্যাডমিন্টন জানান দিচ্ছে শীত এসেছে ৭৫ একরের সবুজ ক্যাম্পাসে। ব্যাডমিন্টন কোটকে কেন্দ্র করে আড্ডা জমেছে দর্শকদের। ক্লাস, পরীক্ষার দৌড়ঝাঁপ শেষ করে কেউবা খেলে আবার কেউবা দর্শক সারিতে বসে বন্ধুরা অপেক্ষা করছে। কখন একটা রাউন্ড শেষ হবে এবং বন্ধুদের ব্যাটটা দৌড়ে আগে গিয়ে নেবে। এই খেলায় অংশ নিতে মেয়েরাও ভিড় করে। তারা ছেলেদের সঙ্গে সমান তালে খেলাটিকে বিভিন্ন ভাবে জাঁকজমক করে তুলেছে।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাফওয়ান মাহির রিফাত বলেন, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের জন্য খেলাধুলা অপরিহার্য নিয়ামক। তারই ধারাবাহিকতায় বেরোবি ক্যাম্পাসে ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন প্রশংসার দাবিদার। আমরা ক্যাম্পাস এ ব্যাডমিন্টন খেলার মাধ্যমে একদিকে যেমন কায়িক শ্রম করতে পারি, তেমনি এটি সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক মজবুত করার সেরা পস্ন্যাটফর্মও বটে। সারা দিনের ক্লাস শেষে যখন খেলতে আসি, মানসিকভাবে খুব শান্তি পাই। একদিকে শারীরিক ব্যায়াম, অন্যদিকে মানসিক প্রশান্তি। সব মিলিয়ে অসাধারণ অনুভূতি।

এ বিষয়ে রসায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জাকির হাসান তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, মাত্র সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হলো। সারা দিনের অবসাদ শেষে বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে যখন ব্যাডমিন্টন খেলি, এটা আমাদের অবসাদ দূর করে যেন মনের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া ফোন- ভার্চুয়াল জগত থেকে বের হয়ে এসে, সবার সঙ্গে কথা বলা দেখা হওয়া এটিও আমাদের মননের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে।

ব্যাডমিন্টন খেলার যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাসের এ ব্যাডমিন্টন খেলার বিষয়ে জানতে চাইলে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক ডক্টর আল হেলাল বলেন, ক্যাম্পাস এ যে কোনো ধরনের খেলাকে আমি পজিটিভ দেখি। ব্যাডমিন্টন তার ব্যতিক্রম নয়। তবে সব শিক্ষার্থী নিরাপত্তা নিশ্চিত করে খেলবে এই প্রত্যাশা থাকবে। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটুক এই প্রত্যাশা থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে