সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

৪৬তম বর্ষে ইবিকে যেমন দেখতে চায় শিক্ষার্থীরা

নতুনধারা
  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

স্বাধীনতাত্তোর দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এর সূচনা হয়েছে ১৯৮৯ সালের ২২ নভেম্বর। গত ২২ নভেম্বর এটি প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর পেরিয়ে ৪৫-এ পদার্পণ করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষণা, ক্রীড়া, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে বিশেষ অবদান রেখে আসছে। এসব অবদানের পাশাপাশি এর সংকটেরও কমতি নেই। মৌলিক সংকটগুলোকে সঙ্গে নিয়ে চলছে এর ভ্রমণকাল। আবাসন সংকট, নিম্ন মানের খাবার পরিবেশন, অপর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা, সেশনজট, প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ও জটিলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রেণিকক্ষ সংকট, বিদেশি শিক্ষার্থীদের তদারকির অভাবসহ নানা সমস্যায় ভুগছে বিদ্যাপীঠটি। এসব কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক কার্যক্রমে নানা সমস্যা-জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আক্ষেপেরও কমতি নেই। শিক্ষার্থীরা তাদের এসব আক্ষেপ থেকে মুক্তি পেতে চায়। নিরসন হোক সব জটিলতা। ক্যাম্পাসের ৪৬তম বছরটি হয়ে উঠুক আলোকিত, রূপান্তর হোক বিশ্বমানের। তাদের সেই আক্ষেপ ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম।

চার যুগ পর হলেও নিরসন হোক ইবির আবাসন সংকট

ইদুল হাসান, আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ।

স্কুল-কলেজের গন্ডি পেড়িয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হবে বিশ্বমানের নাগরিক। প্রথম ক্লাসে এমন কথা শোনার পর দু চোখে স্বপ্ন আর বিশ্বজয়ের তাগিদ অনুভব হয় কোমল শিক্ষার্থীদের মনে। নবীন শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন হয় পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ ও থাকার নিরাপদ আশ্রয়। আর সে আশ্রয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন চেয়ে উপযুক্ত কোনো আবাসস্থল হতে পারে না। অথচ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়য়ের মাত্র ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি ৭৬ শতাংশই এই সুবিধার বাইরে। ফলে তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের আবাসস্থল হিসেবে বেছে নিতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মেস অথবা বাসা ভাড়াগুলোকে। এতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যা পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের, অনেক সময় নিরাপত্তার অভাবে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। এতসব সমস্যা থাকলেও প্রতিষ্ঠার চার যুগেও নিশ্চিত হয়নি আবাসিক ব্যবস্থা। এই অবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অন্যতম চাওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা।

আসন্ন বছরে ইবি হোক সেশনজটমুক্ত

আবু তালহা আকাশ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ।

সেশনজট প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে অভিশাপস্বরূপ! করোনা পরবর্তী সময় এসে তার কুফল প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনকে যেন আরও বিষাক্ত করে ফেলছে। যেখানে আমাদের চাকরির বয়স ৩০ বছর পর্যন্ত, সেখানে শুধুমাত্র সেশনজটের কারণে অনার্স শেষ করতেই আমাদের বয়স ২৬-২৭ হয়ে যাচ্ছে! ফলে পুলিশের এসআইসহ অনেক পোস্টে আমরা চাকরির আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আবার নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি থেকেও পিছিয়ে পড়ছি। এর জন্য আমরা দেখি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শিক্ষকদের সদিচ্ছা না থাকা এবং তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীর জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সোনালি ভবিষ্যৎ। জাতি গড়ার কারিগররা যদি তাদের ব্যক্তি সার্থকে মুখ্য করে না দেখে, শিক্ষার্থীবান্ধব হয়ে তাদের স্বার্থে সবাই সম্মিলিতভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে, তাহলে এই অভিশাপ থেক মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে মনে করি।

স্বাস্থ্যসম্মত খাবারে সমৃদ্ধ হোক প্রিয় ইবি

খালেদ সাইফুলস্নাহ তাহমিদ, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একেকজন দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী ও দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে বিবেচিত হয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলের ডাইনিংয়ের খাবার যথাযথ ও মানসম্মত না হওয়ায় ভোগান্তিতে আছে শিক্ষার্থীরা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে খাবারের মান নিশ্চিত করা জরুরি? প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর পেরিয়ে ৪৫ বছরে পদার্পণ করলেও খাবারের মানের পরিবর্তন ঘটেনি? আবাসিকসহ অনাবাসিক অনেক শিক্ষার্থীকে তিনবেলা খাবারের জন্য আবাসিক হলগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়। শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য মানহীন খাবার খেয়ে জীবনধারণ করছে শিক্ষার্থীরা। হলের তুলনায় হোটেলগুলোতে খাবারের দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীরা চাইলেও হলের খাবার বর্জন করতে পারছে না। বাধ্য হয়েই গ্রহণ করতে হচ্ছে হলের মানহীন খাবার। মানসম্মত খাবার গ্রহণ করতে না পারায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে প্রতিনিয়ত। প্রতিবছর বাজেটের পরিমাণ বাড়লেও খাবারের মান উন্নত হচ্ছে না। উলেস্নখ্য, গত ছয় মাসের ব্যবধানে খাবারের দাম দুই দফা বাড়লেও বাড়েনি খাবারের মান। তাই ডাইনিংয়ের খাবারের মান নিশ্চিত করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ইবির ৪৬তম বর্ষে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা হোক

মুসা হাশেমী, আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে ৪৪টি বসন্ত পার করলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি। যার প্রভাব শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমে প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান। হাতেগোনা কয়েকটি বিভাগে শ্রেণিকক্ষের পর্যাপ্ততা থাকলেও অধিকাংশ বিভাগ ভুগছে এই ঘাতক সমস্যায়। এর মধ্যে কিছু কিছু বিভাগ দুই-একটি শ্রেণিকক্ষ নিয়ে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রায়ই দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা হওয়ার অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকতে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোর্স সম্পন্ন হয় না। এতে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির পাশাপাশি সেশনজটের মতো জটিলতার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসনে যথাযথ ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।

৪৬তম বর্ষে স্বাস্থ্যসেবায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা দেখতে চাই

মুমতাহিনা রিনি, ইংরেজি বিভাগ।

গত ২২ নভেম্বর এই চিরসবুজ ক্যাম্পাস পদার্পণ করছে ৪৫ বছরে। ৪৫ বছরের ভ্রমণে নিঃসন্দেহে প্রাপ্তির খাতা বেশ সমৃদ্ধ। তবে এতসব প্রাপ্তির মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য সেবার মান খুবই অপ্রতুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে, তবে নেই পর্যাপ্ত সেবা। যথাসময় পাওয়া যায় না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ছুটতে হয় ক্যাম্পাসের বাইরে। নানা অসঙ্গতির মধ্য দিয়ে চলছে এই সেক্টরটি। দিন শেষে এর ভুক্তভোগী অবহেলিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

৪৬তম বর্ষে প্রত্যাশা রাখি ১৭৫ একরের এই বিদ্যাপীঠটি স্বাস্থ্য খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দিয়ে সমৃদ্ধ হোক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে