রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

পেতনি কন্যার জন্মদিন

সুমিতা রাণী
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

পেতনিদের ছোট্ট এক মেয়ে। বাবা-মা আদর করে নাম রেখেছে পেতিনা। পেতিনার বয়স খুব বেশি না। এবার সে মাত্র দুইশ' বছরে পা দেবে। গতবার কি এক মরোনা রোগ এলো ভূত রাজ্যে, তাইতো ঘটা করে কেউই জন্মদিন পালন করতে পারেনি। পেতিনার খুব ইচ্ছে এবার মহাধুমধামে জন্মদিনটা পালন করবে। মা পেতনিরও তেমন ইচ্ছে। ভূতং মামাকেও এবার দাওয়াত দিতে হবে। ভূতং মামা ছাড়া অত আনন্দ করা যায়!

বুড়ো পাকুড় গাছটায় ওদের বাস। সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে এলেই পেতিনার বাবা বেরিয়ে যায় অনেক দূরে। খাবার খুঁজতে যেতে হয় সেই কালোঝুপড়ি বনে। কালোঝুপড়ি বনে থাকা পশুপাখির রক্ত কী সুস্বাদু! বাবা বাইরে থাকলে পেতিনাকে আর পায় কে। এক ডাল থেকে আরেক ডালে ঝুলে ঝুলে বেড়ায়, পচা ডোবায় ডুব দেয়। ওপাশের এক শেওড়া গাছে থাকা বান্ধবী এলেই চলে ভোর রাত পর্যন্ত খেলাধুলা। দিনের বেলা বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুমায় পেতিনা। রাত্রিজুড়ে ভূত-পেতনির রাজ্যে শুরু হয় চলাচল, হাটবাজার আর ইশকুলের পড়ালেখা।

মায়ের আশপাশে ঘুরঘুর করছিল পেতিনা। জন্মদিনে এটা কিনতে হবে, ওটা দিতে হবে। আহ্লাদি মেয়ে বলে কথা! মা পেতনি পেতিনাকে কাছে টেনে দুই গালে ভীষণ আদর করে দিল। বলল, মেয়েটা আমার দিনদিন কী দারুণ কালো হচ্ছে! এইতো মুখখানা কালো কয়লার মতো হয়ে এলো বলে। পেতনির মেয়ে কালো না হলে মানায়! আমিও কি কম কালো? কত ভূত-পেতনি আমার প্রশংসা করে।

গর্বের স্বরে বলল, মা পেতনি, কালো হওয়ার জন্য আমাকে কখনো কয়লা মাখতে হয়নি, হঁ্যা। মেয়েকে একটি পচা শামুক খেতে দিল সে। খাবার মুখে নিয়েই বলতে শুরু করল পেতিনা। মা, আমাকে কিন্তু এবার মানুষের মাথার একটা মালা দিতে হবে। হ্যাঁ-না কিছুই বলল না মা পেতনি।

প্রতি অমাবস্যা-পূর্ণিমার রাতে ভূত পেতনিদের বাজার বসে আগাবিলের শ্মশান ঘাটে। পরশু মেয়ের জন্মদিন, তাইতো বাবা-মায়ের সঙ্গে বাজারে এসেছে পেতিনা। কত খাবার-দাবার আর মালামালে টইটম্বুর! পচা মাংসের গন্ধে পচা পচা ঘ্রাণ। পচা শুঁটকি আর কেউটে সাপের ডিম বিক্রি হয় একপাশে। পেতিনার জন্য কেনা হলো সাপের চামড়ার এক ধরনের পোশাক। নিমন্ত্রিত ভূতদের জন্য কেনা হয়েছে নানান খাবার। মেছো ভূত, গেছো ভূত, শাঁকচুন্নি, পেঁচা- পেঁচি সবাই আসবে পেতিনার জন্মদিনে।

সব আয়োজন করা হয়েছে ঠিকঠাক। ভূতং মামাও এসেছেন দূরের দেশ থেকে। সন্ধ্যা হতেই আনন্দের ছড়াছড়ি বুড়ো পাকুড় গাছে। চলছে গানবাজনা। সবইকে পরিবেশন করা হচ্ছে ধূসররঙা শিয়ালের রক্ত। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুকরের মাংসের কেক কেটে জন্মদিন পালন করবে পেতিনা। পেতিনার গলায় শোভা পাচ্ছে নানান পশুর হাগগোড়। হাড়ের তৈরি মালা। কয়েকশত ভূতপ্রেত এসেছে পেতিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে!

হঠাৎ সবাই চুপচাপ। একেবারে শান্ত দুপুরের মতো। ব্যাপারটা প্রথমে বুঝতে পারেনি পেতিনা। কথা বলতে চাইলেই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো মা পেতনি।

বলল, চুপ-চুপ...একেবারে চুপ। দেখছিস না গাছের দিকে টর্চ হাতে হেঁটে আসছে এক মানবশিশু। এলাকা পার হয়ে যাক শিশুটি, তবেই আবার শুরু হবে আমাদের অনুষ্ঠান। জন্মদিনের অনুষ্ঠান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে