রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোর কবিতা কিশোরদের মনোজগৎকে কল্পনা ও আনন্দের জগতে নিয়ে যেতে সক্ষম:স ম শামসুল আলম

স ম শামসুল আলম ১৯৬২ সালের ২৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলাধীন শিকজান গ্রামে। পিতা এস এম শাহজাহান আলী এবং মাতা সালেহা শাহজাহান। ১৯৮৫ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরে প্রকাশিত হয় একটি ছোটগল্প 'কোঁকড়ানো চুল'। রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই পরিচালিত এই আসরে গল্পটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে শিশুসাহিত্য অঙ্গনে পদচারণা। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তার অবাধ বিচরণ। বাংলাদেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার লেখা গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, শব্দরম্য, কলাম, উপ-সম্পাদকীয় ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে। তিনি শিশু-কিশোর সংগঠন আনন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আনন ফাউন্ডেশনের মুখপত্র 'আনন' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং মানসম্মত গ্রন্থ প্রকাশের প্রত্যয়ে আনন প্রকাশন নামে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন।
নতুনধারা
  ১১ জুন ২০২৩, ০০:০০

লেখালেখিতে কখন কীভাবে সম্পৃক্ত হলেন?

স.ম : ছোটবেলায় পাঠ্যপুস্তকে ছড়া-কবিতা পড়তে ভীষণ ভালো লাগত। সুর করে ছড়া-কবিতাগুলো পাঠ করতাম। আমার বড় বোন শামসুন নাহার এক ক্লাস উপরে পড়ত। তার বইয়ের কবিতাগুলোও আমার মুখস্ত থাকত। শুধু ছড়া-কবিতা নয়, গল্প পড়েও আনন্দ পেতাম। যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন দু'একটি লিখেছিলাম- না ছড়া, না কবিতা। নাইনে পড়ার সময় 'একটি ছোট দেশের যুদ্ধ' শিরোনামে একটি গল্পও লিখেছিলাম, মনে আছে। তখন আমাদের স্কুলে স.ম. মোতালিব হাসান নামে একজন বিজ্ঞান শিক্ষক ছিলেন- যিনি কবিতা লিখতেন। তার লেখা দেখে অনুপ্রাণিত হই। এরপর এসএসসি পরীক্ষার পর হাতে অনেক সময় পাওয়ায় লেখালেখির শুরুটা বেশ জমে উঠেছিল। সেটা ছিল ১৯৭৯ সাল। অজ পাড়াগাঁ থেকে ফরিদপুর গিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম। ইয়াসিন কলেজে বাংলার শিক্ষক পেলাম কবি আ ন ম আবদুস সোবহান স্যারকে। তাকে আমার কবিতার খাতাটি দেখালাম। তিনি বললেন, তোমার লেখা মন্দ নয়, পত্রিকায় পাঠাও। পত্রিকায় কীভাবে কোথায় লেখা পাঠাতে হয় না-হয় আমি কিছুই জানি না। তিনি ফরিদপুর জেলা পরিষদের মুখপত্র মাসিক গণমনের ঠিকানা দিয়ে লেখা কপি করে পাঠাতে বললেন। প্রথম পাঠানো দুটি কবিতাই সেবার ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হলো।

পত্রিকায় আপনার প্রথম লেখা প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?

স.ম : সে-আনন্দ বলে বোঝাবার নয়। পত্রিকাটি নিয়ে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন সবাইকে দেখাতে লাগলাম। সেদিন মনে হয়েছিল, আমি কবি হয়ে গেছি।

আপনার প্রকাশিত বইগুলো সম্পর্কে পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলতেন যদি...

স.ম : এ পর্যন্ত আমার ৮৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে শিশু-কিশোর গ্রন্থের সংখ্যা বেশি। ১৯৮৭ সালে প্রথম প্রকাশিত কবিতার বইটির নাম 'হিংসার নক্ষত্র এক' এবং প্রকাশ করেছিল নওরোজ সাহিত্য সম্ভার। একই বছর আরো একটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়। আর ছোটদের জন্য প্রথম বই, ছড়ার বই 'হেসে ফাটে দম' প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে, অনামিকা প্রকাশনী থেকে। ২০০১ সালে কিশোর গল্পের বই 'আব্বুর ফিরে আসা' প্রকাশিত হয় সূচিপত্র থেকে এবং কবিতার বই 'দাঁড়াবার পা কোথায়' প্রকাশিত হয় অনামিকা প্রকাশনী থেকে। কিশোর কবিতার বই 'আমার মনের আকাশ জুড়ে' প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। ২০১৬ সালে কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত 'আমার বঙ্গবন্ধু' বইটি এ পর্যন্ত ৮টি মুদ্রণ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে 'আমার দেশের মনের সাথে' শিরোনামে একটি কিশোর কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে ২০১৫ সালে। সময় প্রকাশন থেকে প্রকাশিত দুটি কিশোর উপন্যাস 'গল্পের গাড়ি মিরধা ভাই' এবং 'বহুরূপী দেবশিশু' দুটি সংগঠন থেকে পুরস্কৃত হয়েছে। অনন্যা থেকে প্রকাশিত 'মায়ের অলংকার' কিশোর কবিতার বইটি বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছে।

'ছড়া ও কবিতায় ছন্দ, শ্রম্নতিকল্প ও চিত্রকল্প'- এক্ষেত্রে কোন বিষয়টা সবচেয়ে জরুরি?

স.ম : সবই প্রয়োজন, তবে ছন্দ আমার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ছন্দ ছাড়া লিখলে ছড়া-কবিতা কেন, গদ্য লেখাই শ্রেয় মনে করি।

বর্তমান সময়ের শিশুদের জন্য কেমন গল্প লেখা উচিত?

স.ম : সব ধরনের গল্প। কেউ সত্য ঘটনার কাছে থাকতে চায়, কেউ কল্পনার রাজ্যে ভেসে যেতে চায়। কেউ রহস্য পছন্দ করে, কেউ বিজ্ঞানকল্পকাহিনী, কেউ রূপকথা। তবে আগেকার মতো উপদেশমূলক গল্পে আমি অতটা উৎসাহী নই; কেননা, বর্তমানের শিশুরা উপদেশের বদলে মজা পেতে বেশি পছন্দ করে।

প্রযুক্তির যুগে শিশুদের জন্য রূপকথার গল্প কতটা ফলপ্রসূ?

স.ম : সব শিশুই প্রযুক্তি নিয়ে থাকবে এমন কথা নেই। কেউ কেউ রূপকথাও পছন্দ করে। তবে আমি খুব কম লিখেছি রূপকথা।

নবীন লিখিয়ে এবং যারা ফেসবুকে লিখছেন, তাদের জন্য আপনার উপদেশ ও পরামর্শ জানতে চাচ্ছি।

স.ম : আমি পরামর্শ দিলেই বা তারা শুনবেন কেন, লেখালেখিতে পরামর্শ দরকার নেই। দরকার হলো যিনি লিখবেন তাকে অবশ্যই অন্যের লেখা পড়তে হবে, না হলে ধরতে পারবেন না লেখালেখির মান কোথায় গিয়ে আটকে থাকে।

লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

স.ম : আমি সমগ্র বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা করি না কখনো। তবে, যে বিষয় নিয়ে লিখতে চাই বা লিখতে শুরু করি সেটা নিয়ে অনেক ভাবী। ছড়া-কবিতাই হোক, গল্প-উপন্যাসই হোক বা কলাম-প্রবন্ধই হোক- সেটা যেন পাঠযোগ্য হয়। সামগ্রিকভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলতে হলে বলব, যতদিন বাঁচি লিখে যেতে চাই।

সাক্ষাৎকার গ্রহণঃ প্রিন্স আশরাফ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে