সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বইপ্রকাশ ও বইপড়া

সাইফুল ইসলাম
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

ভিক্টর হুগো বলেছেন, বই হচ্ছে বিশ্বাসের অঙ্গ, বই মানব সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য জ্ঞান দান করে। অতএব বই হচ্ছে সভ্যতার রক্ষাকবচ। ওমর খৈয়াম লিখেছেন, রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে/ প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে/বই সে তো অনন্ত যৌবনা। হুমায়ুন আজাদ 'বই' কবিতায় বলেছেন, বইয়ের পাতায় আলো জ্বলে/বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে। আলো যেমন অন্ধকার দূর করে আমাদের চোখের সামনে সব কিছুতে মূর্ত করে তোলে, তেমনি বই মানুষের ভেতরে জ্ঞানের আলো এনে যাবতীয় অন্ধকার অজ্ঞানতাকে দূর করে চেতনার আলোতে সবকিছুকে উদ্ভাসিত করে তোলে। বই-ই কেবল সব যুগ, কাল ও দূরত্বকে অতিক্রম করতে পারে। প্রস্তর যুগের শিলালিপি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কত বই পৃথিবীতে মুদ্রিত হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা কেউ বলতে পারে না। ডড়ৎফংজধঃবফ এর এক তথ্য অনুসারে প্রতি বছর বিশ্বে চার মিলিয়ন বা চলিস্নশ লক্ষ বই প্রকাশিত হয়। এদের মধ্যে পাঁচ লাখ গতানুগতিক কাগুজে বই প্রকাশকদের দ্বারা ছাপিয়ে প্রকাশিত হয় এবং কমপক্ষে সতেরো লক্ষ বই সেল্ফ পাবলিশড্‌। ওঝইঘউই-এর তথ্য অনুসারে বিশ্বে প্রতি বছর বাইশ লক্ষ বই প্রকাশিত হয়। সার্চ জায়ান্ট গুগলের তথ্যানুসারে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বে পনেরো কোটি চুরাশি লক্ষ চৌষট্টি হাজার আটশ' আটাশটি ইউনিক বই প্রকাশিত হয়েছে।

আমাদের দেশে এ যাবত কতটি বই প্রকাশিত হয়েছে কিংবা প্রতি বছর কতটি বই প্রকাশিত হয় এর নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই। কেবল একুশে বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের একটা হিসাব বাংলা একাডেমির বরাতে পাওয়া যায়। এ থেকে একটা ধারণা করা যায় যে বিগত কয়েক বছরগুলোতে বইমেলা উপলক্ষে গড়ে চার হাজার করে বই প্রকাশিত হয়েছে। এ সংখ্যাটা নেহায়েত মন্দ না। তবে সবকালে সবদেশে বই প্রকাশের উৎকর্ষতাকে কেবল সংখ্যার হিসাবে বিবেচনা করা সমীচীন বলে আমি মনে করি না। একটি প্রকাশিত বই কতটা মানসম্পন্ন হলে এটাকে ভালো বই বলা যাবে তারও কোনো স্কেল বা মাপকাঠি নেই। কেবল এটাই বলা যেতে পারে, একটি ভালো বই হবে সুখপাঠ্য, যথাসম্ভব ভ্রান্তি বা মুদ্রণপ্রমাদ মুক্ত এবং সমাজের মনন ও মানসের দর্পণ- লেখকের দর্শন ও দক্ষতার প্রামাণ্য দলিলস্বরূপ। আমাদের দেশে প্রতি বছর বইমেলা উপলক্ষে এবং বছরের অন্যান্য সময়জুড়ে যেসব বই প্রকাশিত হয় বিদগ্ধজনের মতে সেগুলোর কিছু কিছু মানসম্পন্ন ও সৃজন গুণে অনন্য হলেও সবগুলোকে নিখুঁত গুণসম্পন্ন বইয়ের তকমা দেওয়া যাবে না কোনোভাবেই। এমনিতেই যান্ত্রিকতার যুগে ওয়েবব্যাকের প্রভাবে পেপারব্যাক প্রকাশনা হুমকির মুখে। এর কারণ হলো- আমরা পড়ছি না এবং সঠিক মানের বইও প্রকাশ করতে পারছি না। বইবিমুখ হয়ে বেড়ে উঠছে একটা প্রজন্ম। আর বইপড়া এবং ভালো বই প্রকাশের যে দীনতা তা জাতি হিসেবে আমাদের প্রতিনিয়ত দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর করে তুলছে। আমরা একটা ঘোর অমানিশার পথ অতিক্রম করতে করতে আরও সুতীব্র অন্ধকার পথে ধাবিত হচ্ছি। আর জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় দরিদ্র মানুষ ও জাতিই দরিদ্রতম। এহেন অবস্থা- এ হীন অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে বইয়ের পাতায় আলো জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে এ আলো থেকে আলোকিত হওয়ার মতো বইপ্রেমী বইবান্ধব মানুষ গড়ে তুলতে হবে। পাঠক সৃষ্টির জন্য প্রকাশ করতে হবে পাঠকের চাহিদা অনুসারে কাঙ্ক্ষিত বই। তাহলেই আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত হবে আমাদের সমাজ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে