সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যালেন্টাইন'স ডে ও ভালোবাসা দিবস

প্রকৃতিগতভাবেই জীবন ভালোবাসাময়। ভালোবাসার প্রথম শর্ত হলো একে অন্যের প্রতি পারস্পরিক বিশ্বাস, সততা, সুস্থ মন-মানসিকতার শ্রদ্ধাবোধ। আমাদের ভালোবাসার শিকড় যত গভীরে যাবে বন্ধন আরও নিবিড় হবে। আমরা ভালোবাসা দিয়ে শত্রম্নর মুখে হাসি ফোটাতে চাই। পৃথিবীর সব মানুষ যেন ভালোবাসার পূর্ণতা পায়- এ হোক ভালোবাসা দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।
জ্যোতিষ সমাদ্দার বাবু
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

ভ্যালেন্টাইন'স একটি নাম যে নামটি ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়েছে। বেশ কিছু তথ্য প্রচলিত আছে তার মধ্যে একটি এরকম। অনেক গল্প আছে তবে এ গল্পটি অধিক সমাদৃত। ভ্যালেন্টাইন'স ডে'র গল্পটি শুরু এভাবে, যেখানে অত্যাচারী রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লাডিয়াস এবং খ্রিষ্টান পাদ্রী যিনি একজন চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নিয়ে। রোমে নিষিদ্ধ হওয়া খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের জন্য রোমের তৎকালীন সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে বন্দি করে রাখেন। সেখানে আটক থাকাকালীন একজন কারারক্ষী ভ্যালেন্টাইনের প্রজ্ঞা দেখে মুগ্ধ হন এবং সে কারারক্ষীর একজন জন্মান্ধ মেয়ে জুলিয়াকে পড়ালেখা ও চিকিৎসা করার জন্য ভ্যালেন্টাইনকে জানালে তিনি রাজি হন। ভ্যালেন্টাইন বুদ্ধিমতী জুলিয়াকে রোমের ইতিহাস শোনাতেন, পাটিগণিত শেখাতেন, সবুজ প্রকৃতির বর্ণনা ফুটিয়ে তুলতেন এবং ঈশ্বর সম্পর্কে ধারণা দিতেন। জুলিয়া ভ্যালেন্টাইনের চোখে দেখতেন অদেখা নতুন একটি পৃথিবী। তিনি ভ্যালেন্টাইনের জ্ঞানকে বিশ্বাস করতেন, ভ্যালেন্টাইনের শান্ত প্রতিমূর্তি ছিল জুলিয়ার শক্তি। ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস এবং ভ্যালেন্টাইনের প্রতি তার ভালোবাসায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান জুলিয়া। কিন্তু অত্যাচারী রাজার কোপানল থেকে বাঁচতে পারেননি ভ্যালেন্টাইন। কিন্তু মৃতু্যর আগের দিন ভ্যালেন্টাইন জুলিয়াকে চিরকুটে একটি চিঠি লেখেন। চিরকুটটি কারারক্ষী তার মেয়েকে দিলে মেয়েটি দেখতে পায় চিঠির শেষে লেখা ছিল, 'ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন' এবং চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ত্রৌকস ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখতে পেয়েছিল কারণ, ইতোমধ্যে ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় মেয়েটির দৃষ্টি ফিরে এসেছিল। কথিত আছে ২৭০ অব্দের ১৪ ফেব্রম্নয়ারি ভ্যালেন্টাইনের মৃতু্য কার্যকর হয় ও তাকে বর্তমান রোমের প্রক্সিদেস গির্জার স্থলে সমাহিত করা হয়। ভালোবাসার এসব কীর্তির জন্য ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রম্নয়ারির ১৪ তারিখকে ভ্যালেন্টাইন'স ডে হিসেবে ঘোষণা দিলে সেই থেকেই এ দিনটিকে পৃথিবীর তাবদ মানুষ ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে পালন করে আসছেন।

ভালোবাসা দিবসটি যেভাবেই শুরু হোক না কেন ভালোবাসা ছাড়া শুধু মানুষ না প্রকৃতির কোনো জীবই বেঁচে থাকতে পারে না। ফাগুনের আগুন ছড়িয়ে মন রাঙিয়ে বসন্তের দোলা দেয়। ঋতুরাজের আগমনের দিনই ভ্যালেন্টাইন'স ডে অর্থাৎ ভালোবাসা দিবস। আর তিন দিন পর ১৪ ফেব্রম্নয়ারি। দিনটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পালন করছে। আমাদের দেশে দিনটি প্রায় সর্বজনীন হয়ে গেছে। ভ্যালেন্টাইন'স ডে যে, শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য নয়, দিনটি হোক সবার জন্য। সবার হৃদয়ে প্রেম আসুক, প্রেম থাকুক, প্রেম হোক অবিনশ্বর। হিংসা-দ্বেষ ভুলে আমরা সবাই এক অপরকে নিখাঁদ ভালোবাসা জানাতে চাই, ভালোবাসার বীজ বুনতে চাই যে বীজ পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। বাবা-মা, ভাই-বোন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্বামী-স্ত্রী, শত্রম্ন-মিত্র, বন্ধু-বান্ধব, এক দেশ অপর দেশের সঙ্গে, মোট কথা পৃথিবী জুড়ে ভালোবাসার শিখা প্রজ্বলিত হোক, সবার মনে শান্তি বিরাজ করুক। পৃথিবীর সব মানুষ ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হোক। প্রকৃতিও ফাগুন মাসে ভালোবাসা নিয়ে আসে মানুষের মনে। গাছে গাছে পুরানো পাতা ছেড়ে নতুন পাতা আসে সবুজে সবুজে ফুলে ফুলে প্রকৃতি সাজে।

ভালোবাসা আমাদের মানুষের জীবনের বেঁচে থাকার একটি ইতিবাচক অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত। ভালোবাসা ছাড়া জীবনের কোনো অর্থ নেই। ভালোবাসা শব্দটি আমরা যেভাবেই ব্যবহার করি না কেন! ছোট্ট একটি জীবনে যদি ভালোবাসাই না থাকে তবে জীবন অর্থহীন। প্রকৃতিগতভাবেই জীবন ভালোবাসাময়। ভালোবাসার প্রথম শর্ত হলো একে অন্যের প্রতি পারস্পরিক বিশ্বাস, সততা, সুস্থ মন-মানসিকতার শ্রদ্ধাবোধ। আমাদের ভালোবাসার শিকড় যত গভীরে যাবে বন্ধন আরও নিবিড় হবে। আমরা ভালোবাসা দিয়ে শত্রম্নর মুখে হাসি ফোটাতে চাই। পৃথিবীর সব মানুষ যেন ভালোবাসার পূর্ণতা পায়- এ হোক ভালোবাসা দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।

ফাগুনে মনে আগুন, দিক বসন্তের দোলা সবার হৃদয়ে। বসন্তে পাখা মেলে স্বার্থহীন প্রেম যেন সব মানুষের মনে ভালোবাসার আলো ছড়িয়ে পড়ুক, সবাই সুখী হোক। রঙে রাঙিয়ে সাজুক ধরণী, সাজুক মানুষের হৃদয়। পৃথিবীর সব অস্ত্র ধ্বংস হোক শান্তি বিরাজ করুক সর্বত্র। পৃথিবীতে একটাই অস্ত্র থাকুক যেটা নাম ভালোবাসা। উচ্ছ্বাসে অপ্রতিরোধ্য হোক ভালোবাসা নামের অস্ত্রটি। মানুষের মনে থাকুক শান্তি, জীবনে আসুক সুখ, প্রশান্তিময় হোক পৃথিবী। জয়তু বসন্ত, জয়তু ভালোবাসা দিবস, জয়তু ভ্যালেন্টাইন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে