সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

যৌন নিগ্রহের মিথ্যে মামলায় গুরুত্ব হারাচ্ছে সত্যি ঘটনা এলাহাবাদ হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

এলাহাবাদ হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি সিদ্ধার্থ তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, আইন পুরুষদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট এবং এই জাতীয় বিষয়ে জামিনের আবেদন খতিয়ে দেখার সময় আদালতের আরও সতর্ক হওয়া উচিত
আইন ও বিচার ডেস্ক
  ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্ট এক মামলার শুনানিতে পর্যবেক্ষণ হিসেবে মন্তব্য করেছেন যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ নিয়ে মিথ্যে অভিযোগের ভিড়ে এখন যৌন অপরাধের সত্যি ঘটনাগুলোই ব্যতিক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আদালত তার পর্যবেক্ষণে আরও জানিয়েছেন, অনৈতিকভাবে সুবিধা নেওয়ার জন্য অনেক মেয়ে এবং মহিলাই স্বেচ্ছায় কোনো পুরুষের সঙ্গে দীর্ঘ সময় শারীরিক সম্পর্কে থাকার পর থানায় গিয়ে সঙ্গীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের মিথ্যে অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করছেন, এমন ঘটনার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি সিদ্ধার্থ তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, আইন পুরুষদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট এবং এই জাতীয় বিষয়ে জামিনের আবেদন খতিয়ে দেখার সময় আদালতের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

যে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এলাহাবাদ আদালত একথা জানিয়েছেন- সেই মামলায় অভিযুক্তকে ভারতীয় দন্ডবিধি এবং পকসো আইনে ধর্ষণসহ আরও বেশ কয়েকটি অপরাধে আটক করা হয়েছিল। অভিযুক্ত জামিন চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। সেই জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়ার দাবি তুলে অভিযোগকারিণীর আইনজীবী আদালতে জানান, অভিযুক্ত নাবালিকার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। শুধু তাই নয়, পরে যৌনতা উপভোগ করার জন্যই সে অভিযোগকারিণীকে বিয়ে করে।

এমনকি, সে নাকি তার তুতো ভাইয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য স্ত্রীকে চাপ দিত এবং তাতে অভিযোগকারিণী আপত্তি জানালে তাকে দুই ভাই মিলে বেধড়ক মারধরও করে।

যদিও অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, অভিযোগকারিণী একজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং গত এক বছর ধরে অভিযুক্তের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। তিনি স্বেচ্ছায় তার বাড়ি ছেড়ে অভিযুক্তের কাকার বাড়িতে যান, যেখানে সম্মতিক্রমে তার মক্কেলের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এরপর স্বেচ্ছায় তারা বিয়েও করে নেন। যদিও পরে মেয়েটির বাবা-মা তাকে এসে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর দুই পরিবারের মধ্যে এই নিয়ে বিবাদ শুরু হলে অভিযোগকারিণী স্বামীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন।

সেই মামলায় আবেদনকারীকে জামিন দেওয়ার সময় আদালত খেয়াল করেন যে, মিথ্যা অভিযোগ এবং ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। আদালত আরও জানিয়েছেন যে, অভিযোগকারিণী এবং আবেদনকারীর মধ্যে বিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয়েছিল এবং আইনিভাবে বা আদালতের মাধ্যমে বিয়েবিচ্ছেদ হয়নি, কিংবা বিয়ে বাতিল করেও দেওয়া হয়নি। বিচারপতি জানিয়েছেন, আইনি বিশেষজ্ঞ কিংবা হেড ক্লার্ককে দিয়ে খুব সুচারুভাবে থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। এই ধরনের ঘটনায় বহুক্ষেত্রেই মিথ্যে অভিযোগ দায়ের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এবং এক্ষেত্রেও তাই-ই ঘটেছে।

এরপরেই তার পর্যবেক্ষণে আদালত জানিয়েছে, বর্তমান ঘটনার মতো ইচ্ছে মতো যে কোনো অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করা খুব সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের ওপর সোশ্যাল মিডিয়া, সিনেমা এবং টিভি শোগুলোর প্রভাব থাকছে, যার ফলে 'মুক্তমনা সংস্কৃতি' আরও প্রচার পাচ্ছে। যখন এই আচরণ ভারতীয় সামাজিক এবং পারিবারিক মূল্যবোধের সঙ্গে বিরোধ ঘটায়- যা পরিবার এবং মেয়েদের সম্মান রক্ষার ক্ষেত্রে জরুরি হয়ে ওঠে, তখন অনেক ক্ষেত্রেই তার পরিণতিতে এভাবেই মিথ্যে মামলা দায়ের হয়।

'এই ধরনের এফআইআরগুলো দায়ের করা হয় যখন অল্প সময়/দীর্ঘ সময় লিভ-ইন-রিলেশনে থাকার পরে কোনো বিষয়ে যুগলের মধ্যে বিবাদ হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এক সঙ্গীর সামনে অন্য সঙ্গীর প্রকৃতি প্রকাশ পায় এবং তারপরে তারা বুঝতে পারেন যে তাদের সম্পর্ক আজীবন চলতে পারে না, তখন ঝামেলা শুরু হয়,' জানিয়েছেন বিচারপতি।

আদালত আরও জানিয়েছেন, যেহেতু আইনে মেয়ে এবং মহিলাদের কিছু অতিরিক্ত সুবিধা রয়েছে, তাই তারা সহজেই এই মামলার মতো মামলায় ছেলেদের জড়িয়ে ফেলতে সফল হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে