রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা কেন

যাযাদি প্রতিবেদন
  ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতসহ জোটভুক্ত সংগঠনগুলোর সমাবেশের সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সরকারি বাসভবনে সন্ত্রাসী হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে নিন্দা জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। এটিকে বিচার বিভাগের ওপর আঘাত হানার প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

অপরাধ বিশ্লেষক ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটির প্রধান। সেখানে যারা হামলা করেছে ও হামলায় উসকানি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিত এবং এই বিচারপতি যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সেহেতু এটি টার্গেট করে হামলা।

২৮ তারিখ বিএনপির সমাবেশ চলাকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা গাছের ডাল ভেঙে ও হাতের লাঠি দিয়ে নামফলক, গেটে হামলা চালান। তারা ভেতরে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।

ইতোমধ্যে এ ঘটনাকে ন্যক্কারজনক উলেস্নখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি সাংবিধানিক ইনস্টিটিউশন এবং তিনি বিচার বিভাগের অভিভাবক। তার সরকারি বাসভবনে আক্রমণ অর্থ পুরো বিচার বিভাগের ওপর আক্রমণ এবং আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্ত করার হুমকি প্রদর্শন। কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকালে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমণ ও ভাঙচুর চালানোর ঘটনা নজিরবিহীন।

আইনমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেন, আগামীতে রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে দেশে আর কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। জনগণের জানমালের সুরক্ষা ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সরকার কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

২৯ অক্টোবর দুপুরে নিজ কার্যালয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ করার সাহস না পায়।

বর্তমান প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ২০১২ সালের ২৫ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২ এর বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ওই ট্রাইবু্যনালের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২ এ কর্মরত থাকাকালীন তার সহকর্মী বিচারকদের সঙ্গে ১১টি মামলার রায় প্রদান করেন। তিনি বিএনপি ও জামায়াতের বেশকিছু বড় যুদ্ধাপরাধীদের মামলার রায় দিয়েছেন। সে কারণে আক্রোশ বেশি ছিল কিনা প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, 'এ পর্যন্ত আমরা কখনোই প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ওপর হামলা হতে দেখিনি। সাধারণত বিএনপির সমাবেশ-আন্দোলন-মিছিল ওই এলাকায়ই হয়ে থাকে। কিন্তু সুযোগ নিয়ে হামলা করাটা একটা নতুন ঘটনা। আবার তিনি যেহেতু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইবু্যনালের বিচারক ছিলেন সেহেতু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির টার্গেট তিনি হয়ে থাকতে পারেন। এটা তারা বুঝিয়ে দিল। ওই ট্রাইবু্যনালে যাদের বিচার হয়েছে তাদের পক্ষ থেকেও একটা ইঙ্গিতই দিল।'

সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, 'প্রধান বিচারপতি একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করা মানে রাষ্ট্রকে আক্রমণ করা। ভুলে গেলে চলবে না তিনি তিনটি অঙ্গের একটির প্রধান। আমাদের দন্ডবিধি আইনে এ ধরনের ক্ষেত্রে বিচার করার জন্য আলাদা বিধান রয়েছে। এটা পরিষ্কার রাষ্ট্রদ্রোহিতা। আক্রমণ যারা করল তাদের বিচার হওয়া উচিত। একই সঙ্গে যারা হামলার উসকানিদাতা হিসেবে কাজ করেছেন তারা কেউ দায় এড়াতে পারেন না। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা করা বাঞ্ছনীয়।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে