রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুবান্ধব পরিবেশে যেভাবে প্রথমবারের মতো বসল চট্টগ্রামের শিশু আদালত

২০২০ সালে আইন সংশোধন করে দেশের সবগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনালকে শিশু আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ৭ম ট্রাইবু্যনালে প্রথমবারের মতো এ আইনের নিয়ম মেনে শিশু আদালত বসানো হয়। এ উপলক্ষে পর্দা দিয়ে মোড়ানো হয় সংশ্লিষ্ট ট্রাইবু্যনালের বিচারক বেগম ফেরদৌস আরার এজলাস। যাতে লালসালু মোড়ানো এজলাস শিশুরা দেখতে না পায়। একই রকম পর্দা দিয়ে বেঞ্চ সহকারী, সাক্ষীদের দাঁড়ানোর মঞ্চ ও কাঠগড়া মোড়ানো হয়।
আইন ও বিচার ডেস্ক
  ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

লালসালু ঘেরা প্রচলিত এজলাসে বিচার কার্যক্রম হয়নি। এদিন শিশু আইন অনুযায়ী শিশুদের জন্য আলাদা এজলাস তৈরি করা হয় আদালতে। সেখানে ছিল না আসামি ও সাক্ষীর কাঠগড়া। বিচারক বসেননি তার জন্য নির্ধারিত প্রচলিত এজলাসের চেয়ারে। সরকারি কৌঁসুলি ও আইনজীবীদের কারও গায়ে ছিল না কোট, গাউন। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের পরনে ছিল না ইউনিফর্ম।

এজলাসের ভেতর বিচারক ও সরকারি কৌঁসুলি ছোট ছোট টেবিলে বসেন। সামনে আইনজীবীরা তাদের নির্ধারিত আসনে। এজলাসের ভেতরে ছিলেন না কোনো পুলিশ সদস্য। শিশুবান্ধব পরিবেশে শিশুদের মামলার বিচার কার্যক্রম হয়।

২৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনাল-৭ ও শিশু আদালত চট্টগ্রামের বিচারক ফেরদৌস আরার আদালতের চিত্র ছিল এমন।

অন্যদিন বিচারক এজলাসে বসলেও নেমে এসেছেন ভবনের নিচে। আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুদের বসানো হলো টুলে। এজলাসের নিচে বিচারক চেয়ার-টেবিল বসিয়ে কথা বললেন শিশুদের সঙ্গে।

এদিন বাহিনীর পোশাক পরে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন পুলিশের এক সদস্য। তবে শিশু আইন অনুযায়ী তাকে বাহিনীর পোশাক খুলে স্বাভাবিকভাবে সাক্ষ্য দিতে হয়েছে, যেন তিনি যে পুলিশ এটা শিশুরা বুঝতে না পারেন।

এভাবে প্রতি মাসে চারবার এই ট্রাইবু্যনালে শিশু আদালত বসবে।

দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে চট্টগ্রামেই প্রথম শিশু আইন অনুযায়ী আলাদাভাবে সুসজ্জিত শিশু আদালতে শিশুদের মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিশু আইনে শিশুদের জন্য আদালত কীভাবে গড়ে উঠবে তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতদিন কাগজেই সীমাবদ্ধ ছিল এ নিয়ম। যথাযথভাবে বড়দের মতো শিশুদের বিচার হতো আদালতে।

২০২০ সালে আইন সংশোধন করে দেশের সবগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনালকে শিশু আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ৭ম ট্রাইবু্যনালে প্রথমবারের মতো এ আইনের নিয়ম মেনে শিশু আদালত বসানো হয়। এ উপলক্ষে পর্দা দিয়ে মোড়ানো হয় সংশ্লিষ্ট ট্রাইবু্যনালের বিচারক বেগম ফেরদৌস আরার এজলাস। যাতে লালসালু মোড়ানো এজলাস শিশুরা দেখতে না পায়। একই রকম পর্দা দিয়ে বেঞ্চ সহকারী, সাক্ষীদের দাঁড়ানোর মঞ্চ ও কাঠগড়া মোড়ানো হয়।

এদিন আইনজীবীদের সঙ্গে টুলে দুজন শিশুকে এনে বসানো হয়। বিচারক এজলাস ছেড়ে নেমে টেবিলে বসে পরিচালনা করেন কার্যক্রম। তিনি নিজেই শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। অর্থাৎ অভিযুক্ত কোনো শিশু বুঝতেই পারছেন না তাকে কোন আদালতে হাজির করা হয়েছে।

২০১৩ সালে শিশু আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০১৮ সালে আইনটির কয়েকটি ধারা সংশোধন করা হয়। সংশোধিত আইনে শিশুদের জন্য আলাদা আদালত বা পৃথক এজলাসের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

২০১৩ সালের শিশু আইনের ১৭(৪) ধারায় বলা হয়েছে, যেসব দালান বা কামরায় এবং যেসব দিবস ও সময়ে প্রচলিত আদালতের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়, তাছাড়া যতদূর সম্ভব, অন্য কোনো দালান বা কামরায়, প্রচলিত আদালতের মতো কাঠগড়া ও লালসালু ঘেরা আদালতকক্ষের পরিবর্তে একটি সাধারণ কক্ষে এবং অন্য কোনো দিবস ও সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ব্যতীত শুধু শিশুর ক্ষেত্রে শিশু-আদালতের অধিবেশন অনুষ্ঠান করতে হবে।

একই আইনের ১৯ (২) ধারায় বলা হয়েছে, শিশু আদালতের আসন বিন্যাস এমনভাবে করতে হবে যেন সব শিশু বিচার প্রক্রিয়ায় মাতা-পিতা বা তাদের উভয়ের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ বা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা বর্ধিত পরিবারের সদস্য এবং প্রবেশন কর্মকর্তা ও আইনজীবীর, যতদূর সম্ভব, সন্নিকটে বসতে পারে।

১৯(৩) ধারায় বলা হয়েছে, আদালতকক্ষে শিশুর জন্য উপযুক্ত আসনসহ প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য, প্রয়োজনে, বিশেষ ধরনের আসন প্রদানের বিষয়টি শিশু-আদালত নিশ্চিত করবে।

১৯ (৪) ধারায় উলেস্নখ রয়েছে, অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, শিশু আদালতে বিচার চলাকালীন, আইনজীবী, পুলিশ বা আদালতের কোনো কর্মচারী আদালতকক্ষে তাদের পেশাগত বা দাপ্তরিক ইউনিফর্ম পরিধান করতে পারবেন না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে