মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

লোহার সিলিন্ডারে বেঁচে থাকা আইনজীবী 'পোলিও পল' মারা গেছেন

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
লোহার সিলিন্ডারে বেঁচে থাকা আইনজীবী 'পোলিও পল' মারা গেছেন

পোলিও থেকে সেরে উঠেছিলেন। জীবনের ৭০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন লোহার ফুসফুস দিয়ে। ৭৮ বছর বয়সে সম্প্রতি মারা গেলেন আইনজীবী পল আলেকজান্ডার, যিনি 'পোলিও পল' নামে পরিচিত। উত্তরসূরিদের জন্য তিনি রেখে গেছেন বিশাল সম্পত্তি।

১৯৫২ সালে পলের বয়স যখন ছ'বছর। তখন পোলিয়োমাইলাটিস ধরা পড়ে তার। পোলিও ভাইরাসের সংক্রমণে এই ছোঁয়াচে রোগ হয়। তার প্রভাব ছিল ভয়ংকর। কিন্তু পল হাল ছাড়েননি।

১৯৪৬ সালের ৩০ জানুয়ারি আমেরিকার টেক্সাসের ডালাসে জন্ম পলের। পোলিও থেকে সেরে উঠেছিলেন। কিন্তু তার প্রভাব পড়েছিল শ্বাসযন্ত্রে। শ্বাসযন্ত্রে পক্ষাঘাত হয়েছিল। কৃত্রিমভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস চালানোর জন্য লোহার ফুসফুস বসানো হয়েছিল শরীরে।

২০২০ সালে দ্য গার্ডিয়ান-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে লেখা হয়েছিল, পোলিওর কারণে গলার নিচ থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় পলের। পরের ৭২ বছর কেটেছিল একটি লোহার সিলিন্ডারের ভেতর। সিলিন্ডারের বাইরে ছিল শুধু পলের মাথা। বালিশের উপর রাখা থাকত মাথা। গলা থেকে বাকি শরীর সিলিন্ডারের ভেতর।

যন্ত্রের মাধ্যমে সিলিন্ডারের ভেতর থেকে হাওয়া বার করে আনা হতো। সিলিন্ডারের ভেতর বায়ুচাপ কমে যাওয়ায় প্রসারিত হতো ফুসফুস। এ ভাবে চলত শ্বাসক্রিয়া।

এত কিছু পরেও পল থামেননি। কলেজে গিয়েছেন। আইন নিয়ে পড়াশোনা করে আইনজীবী হয়েছেন। তিনি লেখকও। চিকিৎসার খরচ জোগানোর জন্য সমাজমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তার বন্ধু। সেখানেও প্রায় এক লাখ ৪৩ হাজার ডলার অনুদান মিলেছে। অনুদানকারীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন পলের ভাই ক্রিস্টোফার। তিনি লিখেছেন, আপনাদের জন্যই আমার ভাই শেষ ক'বছর নিশ্চিন্তে কাটিয়েছেন।

বিশাল সম্পত্তি রেখে গিয়েছেন পল। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নামও রয়েছে তার। পলের থেকে বেশি সময় কেউ লোহার সিলিন্ডারের ভেতর বাঁচেননি।

২১ বছর বয়সে আইনে স্নাতক হন তিনি। তবে এক দিনও সশরীরে ক্লাসে যেতে পারেননি। সে দিক থেকেও তিনি অনেকটাই আলাদা।

সংবাদমাধ্যমের দাবি, ডালাসের সাদার্ন মেথডিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করেছিলেন পল। কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেননি। এরপর অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন তিনি। এরপর দশকের পর দশক কোর্টে গিয়ে মক্কেলদের হয়ে লড়াই করেছেন পল। মামলা জিতেছেন। কোট-প্যান্ট পরে হুইল চেয়ারে চেপে যেতেন তিনি।

দিনে কিছুটা সময় পল সেই সিলিন্ডারের বাইরে থাকতে পারতেন। সে সময় কীভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেবেন, তার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। শুনানির সময় নিজেই শ্বাস নিতেন তিনি।

একটি সাক্ষাৎকারে পল বলেছিলেন, 'ছোটবেলাতেই বুঝেছিলাম, শারীরিক কসরত আমার দ্বারা হবে না। বাস্কেটবল কোনো দিন খেলতে পারব না। মাথা দিয়ে যে কাজ হয়, তা করতে পারব।' পল করেও ছিলেন তাই। আইনজীবী হয়েছিলেন তিনি। জয় করেছিলেন প্রতিবন্ধকতা।

পোলিও ভাইরাসের তিনটি ধরন রয়েছে। টাইপ-১, টাইপ-২, টাইপ-৩। ১৯৯৯ সালে টাইপ-২ ভাইরাস পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। ২০২০ সালে টাইপ-৩ ভাইরাস বিলুপ্ত হয়েছে। ২০২২ সালে প্রায় সারা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে টাইপ-১ ভাইরাস। এই ভাইরাস শুধু পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে রয়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে