রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্যবিয়ের হিড়িক

আসমা জলি
  ১০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

সমাজে বাল্যবিয়ের যেন হিড়িক পড়ে গেছে। বাল্যবিয়ের পেছনে সাধারণভাবে দারিদ্র্য ও সামাজিক নিরাপত্তাবোধের অভাবকে বেশি দায়ী করা হলেও জরিপের তথ্য বলছে অন্য কথা। এ দুটির চেয়েও বাল্যবিয়ে দেওয়ার পেছনে অভিভাবকরা 'উপযুক্ত পাত্র' পাওয়ার কথা বেশি বলছেন। দরিদ্র ও ধনী দুই ধরনের পরিবারেই ঘটছে বাল্যবিয়ে। ১৮ বছর বয়সের আগে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন ৫০ শতাংশ অভিভাবক। পড়াশোনায় থাকা অবস্থায় মেয়েদের বেশি বাল্যবিয়ে হচ্ছে। বেশি মেয়েসন্তান থাকা পরিবারের চেয়ে একটি মেয়েসন্তান থাকা পরিবার বাল্যবিয়ে বেশি দিচ্ছে। 'বর্ন টু বি আ ব্রাইড' (কনে হওয়ার জন্যই যেন জন্ম) শিরোনামে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ব্র্যাকের সোশ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড লিগ্যাল প্রোটেকশন (সেলপ) কর্মসূচি। বাল্যবিয়ের প্রবণতা ও কারণ খুঁজে বের করতে এ বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে দেশের ২৭টি জেলার ২ হাজার ৮০ গ্রামের ৫০ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বিয়ের হার প্রায় ৪৫ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ ১৫ বছরের কম বয়সি। ৭০ শতাংশ কিশোরী বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাল্যবিয়ের পেছনে 'উপযুক্ত পাত্র' পাওয়া, নিরাপত্তাবোধের অভাব ও দারিদ্র্য একটির সঙ্গে আরেকটি জড়িত। অভিভাবকরা মেয়েটিকে দ্রম্নত বিয়ে দিয়ে অন্যের ওপর দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চান।

বাল্যবিয়ে নিয়ে গবেষণা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহ্‌?নাজ হুদা ব্র্যাকের সেলপ কর্মসূচির প্রধান ও ইনচার্জ শাশ্বতী বিপস্নব বলেন, জরিপে বাল্যবিয়ের কারণ নিয়ে যেসব ধারণা প্রচলিত আছে, এর বাইরে অন্য কারণগুলো বেশি পাওয়া গেছে। অভিভাবকদের বাল্যবিয়ে দেওয়ার মানসিকতার পাশাপাশি সামাজিক চাপ থেকেও বাল্যবিয়ে হচ্ছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি, এলাকার জনপ্রতিনিধি, কাজি, ইমামসহ লোকজনকে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি-২০২৩ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাল্যবিয়ের হারের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম, এশিয়ায় প্রথম। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস)-২০২২ প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বিয়ে বা বাল্যবিয়ের হার ৫০ শতাংশ। জরিপ হওয়া ২৭টি জেলার মধ্যে পিরোজপুরে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৭৩ শতাংশ বাল্যবিয়ে হচ্ছে। এরপরের অবস্থানেই রয়েছে চাঁপাইনবাগঞ্জে ৬৫ শতাংশের বেশি, নওগাঁয় ৬৫ শতাংশ, ঠাকুরগাঁওয়ে প্রায় ৬৩ শতাংশ এবং জয়পুরহাটে ৬১ শতাংশের বেশি। বাল্যবিয়ে রোধে সরকারকে ব্যাপকভাবে প্রচার চালাতে হবে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। না হলে বাল্যবিয়ে বেড়ে গেলে জাতীয় উন্নয়নে এর বড় প্রভাব পড়বে। সময় থাকতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়াই সমীচীন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে