সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্ট বাংলাদেশ ভাবনা ও বাস্তবতা

'স্মার্ট বাংলাদেশ' বর্তমান সময়ের একটি সেরা সিদ্ধান্ত। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পথে হাঁটছি আমরা। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথকে সুগম করতে কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রয়োজন, তা নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মতামত তুলে ধরেছেন- সানজিদা জান্নাত পিংকি
সানজিদা জান্নাত পিংকি
  ০৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

সর্বস্তরে প্রযুক্তিপণ্যের সহজলভ্যতা

বাড়াতে হবে

'স্মার্ট বাংলাদেশ' কথা প্রসঙ্গে যে বিষয়টি প্রথম মাথায় আসে তা হলো প্রযুক্তি। কিন্তু বাংলাদেশে প্রযুক্তি এখনো পর্যন্ত যথেষ্ট সহজলভ্য না। যেমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে কোর্স হিসেবে কম্পিউটারের বেসিক কাজগুলো শেখে। সেখানে জড়তা কাজ করে, কিন্তু নিজের হাতে যদি একটি প্রযুক্তিপণ্য থাকে তাহলে নিজেরাই স্বপ্রণোদিতভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার শিখতে পারত। তাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনুযায়ী প্রযুক্তির সহজতর করতে হবে। অন্ততপক্ষে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট পরিমাণ প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা এবং শিক্ষার্থীদের তা ব্যবহার করতে উৎসাহিত করতে হবে। এ ছাড়া বন্ধুমহলে দু'একজন প্রযুক্তিতে বেশ পারদর্শী হয়, তাদের উচিত অন্য বন্ধুদের প্রযুক্তিতে উৎসাহিত করা এবং আগ্রহী বন্ধুকে প্রযুক্তি ব্যবহারে সাহায্য করা। সর্বোপরি সব নাগরিকদের উচিত নিজেকে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং বিশেষ করে প্রযুক্তিগত দিক থেকে স্মার্ট করে তোলা।

সুমাইয়া ইসলাম মীম

দর্শন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

নাগরিককে হতে হবে

'স্মার্ট নাগরিক'

দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে নাগরিকের স্মার্ট হয়ে ওঠাটাও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা স্মার্ট নাগরিকই পারে দেশের উন্নয়নের পথ সুগম করতে। এ ক্ষেত্রে স্কিল ডেভেলপিংয়ের বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এখনো দেশের ৮০-৯০% মানুষ ঘরে বসে কাজ করার দক্ষতা অর্জন করেনি। আবার যারা দক্ষ তাদের প্রায় ২৫% মানুষের চাকরি কেড়ে নেবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। পরবর্তী ৫ থেকে ১০ বছরে সবচেয়ে ডিমান্ডিং জবগুলোর মধ্যে হবে প্রোগ্রামিং, সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ডেটা সায়েন্টিস্ট। শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুনভাবে গঠন করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষারত অবস্থায়ই দেশের-দেশের বাইরের বিভিন্ন কোম্পানিতে ইন্টার্ন বা চাকরি করার সুযোগ পায়। শিক্ষার্থীদেরও নিজেকে ভাবতে হবে একজন গেস্নাবাল সিটিজেন হিসেবে। তরুণদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা নিজেরাই উদোক্তা হয়ে উঠতে পারে। সর্বোপরি শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের মধ্যে সমন্বয়

করতে হবে।

মাহির আল শাহরিয়ার

ইংরেজি বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়

অনলাইনভিত্তিক কর্মসংস্থান

বৃদ্ধি করতে হবে

তারুণ্য এবং প্রযুক্তি উভয়ই সুন্দর ও তেজদীপ্ত, তবে এটা সত্য যতক্ষণ এই দুই শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা উদ্দেশ্যহীনভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার না করে কোনো সুনির্দিষ্ট দক্ষতার ব্যাপারে কাজ করা জরুরি। দক্ষতা কখনো বিফলে যায় না, তারুণ্য শেষ হয়ে গেলেও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে যে কেউ হয়ে উঠতে পারেন উপার্জনক্ষম। ঘরে বসে কাজ করে আজ গ্রাফিক্স ডিজাইনার, কন্টেন্ট রাইটার, নেপথ্যকণ্ঠের শিল্পীসহ আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আমরা তরুণদের দেখতে পারছি এবং তার জন্য কোনো ডিগ্রি অর্জন করতে হচ্ছে না- এখানে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আমি মনে করি এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ, বিশেষত ছাত্রাবস্থায় যারা স্বাবলম্বী হয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান তাদের জন্য রিমোট ওয়ার্কিং একটি আশীর্বাদ। প্রযুক্তিকে শুধু বিনোদনের খোরাক হিসেবে না নিয়ে তরুণ সমাজ বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে আরও উচ্চ আসনে নিয়ে যেতে পারে। সাহস আর উদ্যমটা শুধু থাকা চাই।

মাইমুনা আফরিন মিথী

ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ডিজিটাল সাক্ষরতা চাই

'ডিজিটাল সাক্ষরতা' আজকের বিশ্বে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে। আর যখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি সে ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য বিষয়। কেননা আমাদের জীবনের অনেক কাজকর্মই এখন অনলাইনে পরিচালিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, সরকারি পরিষেবাগুলো প্রবেশ করতে, চাকরির জন্য আবেদন করতে, কিংবা শিক্ষা উপকরণগুলো, যেগুলো ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলোতে প্রবেশ করতেও নাগরিকদের মৌলিক ডিজিটাল সাক্ষরতা থাকতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও ডিজিটাল সাক্ষরতার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এখনই নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি নাগরিকদের নতুন প্রযুক্তি এবং সুযোগের সুবিধা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করবে। ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং শিক্ষায় বিনিয়োগের মাধ্যমে, বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে পারে যে তার নাগরিকদের একটি স্মার্ট সোসাইটিতে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং জ্ঞান রয়েছে। সামগ্রিকভাবে, আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য যে বিষয়গুলোর দিকে গুরুত্বের সঙ্গে নজর দেওয়া উচিত তার ভেতরে অন্যতম হলো এই ডিজিটাল সাক্ষরতা।

কাজী ফয়সাল মাহমুদ

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে