সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

টাইম মেশিন অব দ্য এরিয়া-৫১

অলোক আচার্য
  ১০ জুন ২০২৩, ০০:০০

মানুষ ও বিজ্ঞান পাশাপাশি চলছে। সভ্যতার উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে বিজ্ঞানের হাত ধরেই। মানুষ বিজ্ঞান নিয়ে যে স্বপ্ন দেখে সেই স্বপ্ন নিয়ে রচিত হচ্ছে গল্প। সেখান থেকেই সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে বিজ্ঞান কল্পকাহিনী বা সায়েন্সফিকশন। এটি এক শ্রেণির তরুণ-তরুণীদের ভেতর ব্যাপক জনপ্রিয়। যারা বিজ্ঞান ভালোবাসে, যারা বিজ্ঞান নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে তারা সায়েন্সফিকশনের পাঠক। এক সময় আমাদের দেশে সায়েন্স ফিকশনের লেখক ছিল একেবারেই হাতে গোনা। ধীরে ধীরে পশ্চিমা লেখকদের বই পড়ে এ দেশে পাঠকের সঙ্গে সঙ্গে সায়েন্সফিকশন নিয়ে লেখালেখিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে অনেক লেখক। বর্তমানে সায়েন্সফিকশনের একটি পাঠকশ্রেণি তৈরি হয়েছে। তবে এর লেখক সংখ্যা সাহিত্যের অন্যান্য শাখার চেয়ে কম। এরও কারণ আছে। এই বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লিখতেও বিজ্ঞান নিয়ে একটু-আধটু গবেষণা দূরদর্শী চিন্তা থাকতে হয়। এটা ভিন্ন এক লেখনী ধরন। কল্পনার পাখা মেলতে হয় বহুদূর। বাংলাদেশে সায়েন্সফিকশনের জনপ্রিয় একজন হলেন ডক্টর মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। হুমায়ূন আহমেদও সায়েন্সফিকশন লিখেছেন। আরও অনেকের নামই বলা যায়। এ সময় সায়েন্সফিকশন লিখে পাঠকমহলে জনপ্রিয় হয়েছেন এমন একজন লেখক হলেন আশরাফ পিন্টু। তিনি নিয়মিতই বিভিন্ন দৈনিকে এবং মাসিক পত্রিকায় সায়েন্সফিকশন লিখে চলেছেন। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী আদতে কল্পকাহিনী হলেও মানুষ একদিন সেই কল্পকাহিনীকে ঠিক বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হয়। আজ না হয় কাল সেটা হবেই। এই যেমন- মানুষের আকাশে ওড়ার বিষয়টা অথবা মানুষ ও যন্ত্র বা রোবটের সহাবস্থান এটাও তো এক সময় কল্পকাহিনীর অংশ ছিল। আজ তা বাস্তব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পুরোপুরি কাজে লাগালে মানুষ আর যন্ত্রের যুদ্ধও লাগতে পারে। এ নিয়েও বিস্তর গল্প লেখা হয়েছে। আবার পৃথিবী পুরোপুরিভাবে যন্ত্রের দখলে চলে গেছে এ ধারণা নিয়েও ঢের গল্প লেখা হয়েছে। এটা ঘটাও অসম্ভব কিছু না। লেখক আশরাফ পিন্টুর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর একটি জনপ্রিয় বই হচ্ছে 'টাইম মেশিন; অব দ্য এরিয়া-৫১।

বইটিতে গল্পের সংখ্যা ২০টি। যারা বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর খবর রাখেন তারা টাইম মেশিন সম্পর্কে জানেন। সময় পরিভ্রমণ নিয়ে কল্পকাহিনীর লেখকরা বহু গল্প রচনা করেছেন। কল্পকাহিনীর টাইম মেশিনে চড়ে লাখ লাখ বছর আগে অথবা পরে পরিভ্রমণ করছে। সত্যি সত্যি যে টাইম মেশিন কোনোদিন আবিষ্কার করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আশরাফ পিন্টুর এই বইটিতে যে এরিয়া-৫১'র কথা বলা হয়েছে সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অতি গোপনীয় স্থান যেখানে কড়াকড়িভাবে প্রবেশ নিষিদ্ধ। তবে বইটির একটি দুর্বলতার দিক হলো- গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। প্রায় প্রতিটি গল্পেই একটি চরিত্রকেই লেখক ব্যবহার করেছেন। ভালো হতো যদি প্রতিটি গল্পেই ভিন্ন কোনো নামে চরিত্র সৃষ্টি করা হতো। কারণ সায়েন্সফিকশনে এটাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত গল্পগুলোর কাহিনী চমৎকার। গল্পে টাইম ট্রাভেল ছাড়াও এসেছে ভিন্ন গ্রহে মানুষের বসতির কথা। এসেছে মানুষ ও রোবট মিলে এক ভিন্ন প্রজাতি সৃষ্টির কথা। গল্পগুলোতে এসেছে দূষণের ভয়াবহতায় যখন পৃথিবী ধ্বংস হয়েছে সেই পরিস্থিতির কথা। আর এসেছে দূর এলিয়েনদের কথা। যারা টাইম মেশিন নিয়ে গল্প পড়তে ভালোবাসেন তাদের জন্য চমৎকার একটি গল্প হলো এরিয়া-৫১ এর টাইম মেশিনের গল্পটি। কারণ গল্পটিতে স্বনন নামে চরিত্রটি এরিয়া-৫১ এর টাইম মেশিনে চড়ে অতীত এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন সময়ে পৌঁছে যায় এবং নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। শেষ পর্যন্ত স্বননের ফিরে আসায় গল্পের পরিসমাপ্তি ঘটে। এই যে স্বননের ট্রাইম মেশিনে চড়ে সময়ের বিভিন্ন অংশে ঘুরে বেড়ানো এখানেই লেখক তার লেখনীর দক্ষতা ব্যবহার করেছেন যা পাঠকের ভালো লাগবে। বইটির একটি চমৎকার গল্প হলো 'বিগ ব্যারেলের অনন্ত যাত্রা'। এই গল্পটিতে লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ বর্ণনা করেছেন। পৃথিবী ছেড়ে যখন মানুষের ঠিকানা হয় একটি কৃত্রিম উপগ্রহে। যেখানে মানুষের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। একটি কৃত্রিম উপগ্রহে চড়ে অনন্ত যাত্রায় মানবসভ্যতা এগিয়ে চলেছে। পুরো গল্পটি শেষে নিজেদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আপনার মন খারাপ হতে বাধ্য। কারণ আমরা মানুষ তো সেই দিকেই এগিয়ে চলেছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে