সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

টেলিস্কোপে মহাকাশ পর্যবেক্ষণের নতুন দিগন্ত

আকাশ নিয়ে কৌতূহলী শিক্ষার্থীদের গভীর মহাকাশের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি (সিইউআরএইচএস) এবং দুরবিন (দূর বিশ্বের নাগরিক)-এর যৌথ উদ্যোগে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় 'অ্যাস্ট্রোনমি টকস অ্যান্ড স্কাই অবজারভেশন' শীর্ষক অনুষ্ঠান। নির্ধারিত মহাকাশ পর্যবেক্ষণস্থল জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে চবির বিভিন্ন বিভাগের মহাআকাশপ্রেমী শত শত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ছিল প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ। উচ্ছ্বসিত আয়োজক ও কিছু দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী -এম আতহার নূর।
নতুনধারা
  ১৭ জুন ২০২৩, ০০:০০

চোখে-মুখে আনন্দ সবার

খোলা আকাশ দেখতে কার না ভালো লাগে, তারমধ্যে যদি হাস্যোজ্জ্বল চাঁদ, কিরণ ছড়ানো তারাগুলোকে আরও কাছে এনে দেখা যায়, সত্যি এরমধ্যে কি যে পরম আনন্দ লুকিয়ে আছে তা ভাষায় বোঝানো মুষ্কিল। আমরা ১০ থেকে ১৫ জনের একটি করে টিম নিয়ে ৬টি টেলিস্কোপের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের বিভিন্নভাবে দুর আকাশের চাঁদ ও তারা পর্যবেক্ষণ করাচ্ছিলাম। টেলিস্কোপগুলো আলো সংবেদনশীল হওয়ায় কোনো আলোর ব্যবস্থা ছিল না, তবুও সবাই দূর আকাশের অবজেক্টগুলো এত কাছে দেখতে পেয়ে, তাদের চোখে-মুখে যেন আলো ঝলকানি দেখতে পেয়েছি।

মোহাম্মদ আল আমিন

দর্শন বিভাগ

আমাকে মুগ্ধ করেছে

তারা ভরা আকাশ হোক কিংবা পূর্ণিমার রাতের সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে সেই ছোটবেলা থেকেই। সেই থেকে আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের নাম-অবস্থান, রাশি, তারা মন্ডল জানার চেষ্টা, আর্টিকেল কিংবা বই পড়া। তবে এ দেশের যেহেতু জ্যোতির্বিদ্যার অতটা প্রচার-প্রসার নেই, তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহও খুব একটা দেখা যায় না। তবে অ্যাস্ট্রোনমিতে আগ্রহী একজন কিংবা ইভেন্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে অনুষ্ঠানটি আমার কাছে বিশেষ ছিল। তিন শতাধিক মানুষের উপচেপড়া উৎসাহ-উদ্দীপনা, সবমিলিয়ে এটি আমার কাছে অসাধারণ একটি অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।

অমিত চৌধুরী

প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ

স্বপ্ন এখন বাস্তবে

ছোটবেলায় আকাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা চাঁদ, তারার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম মহাজগৎ কতই না সুন্দর? সেই স্বপ্ন আজ সত্যিই পূরণ হলো। ছোটবেলায় পূর্ণিমা রাতে চাঁদের সঙ্গে কথা বলেনি এমন একজন মানুষও খোঁজে পাওয়া যাবে না। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। শত শত ছোট গল্প আনমনেই জুড়ে দিতাম আর মনে মনে কল্পনা করতাম ওই বুঝি চাঁদের বুড়ি চরকা থেকে সুতা কাটছে, একজন পথিক হেঁটে যাচ্ছে আরও কত কি। সেই চাঁদকে আজকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। অন্যরকম এক আনন্দ অনুভব করছিলাম।

তাসনিম জাহান তুলি

বিভাগ : লোকপ্রশাসন

সৃষ্টিকর্তার মনোহর সৃষ্টি

ছোট্টবেলায় আম্মুর কাছ থেকে একটি বাইনোকুলার উপহার পাই। সেই থেকেই মূলত বাইনোকুলার নিয়ে আগ্রহের জন্ম। কমদামি বাইনোকুলারগুলোর মধ্যে কিছু কিনতে পারলেও ভালো বাইনোকুলারগুলোর দাম অনেক। তাই এগুলো কেনা কখনই সম্ভব হয়নি। তাই ঠিকভাবে আকাশের চাঁদ এবং তারা দেখার ইচ্ছে কখনো পূরণ হয়নি। এতদিন স্মার্টফোন দিয়ে তারা দেখাতাম। জীবনে প্রথম এত কাছ থেকে চাঁদের সার্ফেস দেখেছি। সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি যে কত সুন্দর হয় তা আরও একবার উপলব্ধি করেছি এই চাঁদ দেখতে দেখতে।

মারুফ শাহরিয়ার

ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

সবার মুখে চওড়া হাসি

প্রথমবারের মতো দুরবিনে চাঁদ-তারা, গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের সুযোগ যে কেউই ছাড়তে নারাজ তারই প্রমাণ পেয়েছি এই আয়োজনে চবি শিক্ষার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখে। ফিরে যাওয়ার সময় সবার মুখের চওড়া হাসি, নিজেদের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে লেখা চিরকুটের পাহাড় আয়োজকদের সব ক্লান্তিকে যেন নিমিষেই প্রশান্তিতে পরিণত করেছে। সবার এমন প্রাণোচ্ছল অংশগ্রহণ আমাদের এই আয়োজনকে যেমন সাফল্যমন্ডিত করেছে তেমনি আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছে নতুন কিছু করতে গিয়ে পিছপা না হওয়ার।

বাসন্তী বড়ুয়া

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান

ভালোবেসে ফেলেছি

বিবিএ শিক্ষার্থী হিসেবে অ্যাস্ট্রোনমি সেমিনারে ও আকাশ পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি যে বিজ্ঞানকে উপভোগ ও ভালোবাসতে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়ালেখা করতে হয় না। এ ধরনের সুযোগ এমনিতে আমাদের পরিবেশে দুর্লভ। প্রথমবারের মতো দুরবিনের সাহায্যে চাঁদ-তারা ও নক্ষত্র দেখতে পেয়ে ভালোবেসে ফেলেছি। এমন অভিজ্ঞতা পেলাম যা আমার কাছে একটি অসাধারণ মুহূর্ত হয়ে থাকবে সবসময়ই। সব কিছুর জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই দুরবিন ও সিইউআরএইচএসকে এত সুন্দর একটি আয়োজন করার জন্য।

কাজী মুহাইমিনুল ইসলাম মুনাজ

ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সু্যরেন্স

মহাকাশপ্রেমীদের মেলা

খুব কাছ থেকে চাঁদের এমন অপরূপ দৃশ্যের দেখা পাব তা কল্পনাতীত ছিল। ছোটবেলায় শোনা চাঁদ মামার গল্প কিংবা রবীন্দ্র নজরুলের ভাষায় শুনে আসা চাঁদের বর্ননায় শুধু মুগ্ধ হতাম। কিন্তু নিজ চোখে দেখা এই অপরুপ সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার শব্দ আমার ভান্ডারে অন্তত নেই। মুহুর্তের জন্য যেনো শব্দই হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি। আকাশে সব সময় দেখা আসা একফালি চাঁদ যেনো নতুন রুপে ধরা দিয়েছিলো আমার মনে। সকল কষ্ট মুহুর্তেই ভুলে গিয়েছিলাম যেনো। আমাকে নতুন অনেক কিছু শিখিয়েছে। সন্ধ্যার আকাশে দেখা শুক্র ও চাঁদের এই স্মৃতি আজীবন মনে একটি বিশাল স্থান দখল করে থাকবে।

\হসুমাইয়া মুবাশশিরাহ

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা

ভেতরটা ছুঁয়ে গেছে

এক বাক্যে বলতে গেলে, মহা আকাশের প্রেমে পড়ে গেলাম। আমার ভেতরটা একেবারে ছুঁয়ে গেছে। দায়িত্বশীল হিসেবে আমরা সফলভাবে শত শত আগ্রহী মানুষকে নিয়ে মহাকাশ পর্যবেক্ষণের ইচ্ছাপূরণ করতে পেরেছি, তাই আক্ষরিক অর্থেই আমরা কয়েকগুণ বেশি আনন্দিত। আমাদের চবিতে চালু হোক নিয়মিত মহাকাশ গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ, যার স্বপ্ন দেখে গিয়েছিলেন প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম স্যার। এরকম বিষয়ে সব অনুভূতি ব্যক্ত করতে পারা কঠিন। কিছু বিষয় জানতে কঠিন মনে হলেও আনন্দ লুকিয়ে থাকে তার মধ্যে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ উলেস্নখযোগ্য।

এস এম মাহথির রহমান

পদার্থবিদ্যা বিভাগ

গোটা সময়ে উচ্ছ্বসিত ছিলাম

ছোটবেলার যেই চাঁদ মামাকে এতদিন শুধু খালি চোখে দেখেই মুগ্ধ হয়েছি বারবার, সেই চাঁদ মামাকে টেলিস্কোপ, বাইনোকুলারে এত কাছ থেকে দেখতে পেরে অনুভূত হয়েছে অভূত এক আনন্দ। 'চাঁদেরও দাগ থাকে' কথাটি যেন মূর্ত হয়ে উঠেছিল টেলিস্কোপে, তবে তা যে চাঁদের সৌন্দর্য শতগুণে বেশি এত কাছ থেকে না দেখলে জানতামই না। অ্যাস্ট্রনমি বিষয়ক সেমিনারে মহাকাশ সম্পর্কে জানতে পেরে এবং চাঁদ, তারা, শুক্র এত কাছ থেকে দেখতে পেরে আনন্দে উচ্ছ্বাসে ছিলাম। এমন সুন্দর আয়োজন বারবার হোক।

সাবরিনা মাশরাফি

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে