সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
গবেষণায় ড. মো. আব্দুল মালেকের সাফল্য

ফসলের ২৪ জাত উদ্ভাবন

তানিউল করিম জীম
  ২৪ জুন ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) সফল গবেষক ড. মো. আব্দুল মালেক। গত ফেব্রম্নয়ারি ২০২১ থেকে পরিচালক (গবেষণা) হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। এখন পর্যন্ত ড. মালেকের উদ্ভাবিত ফসলের জাতের সংখ্যা ২৪টি (বিনার মোট উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা ১২৭টির মধ্যে), যা বিনার বিজ্ঞানীদের মধ্যে এককভাবে সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিকভাবে প্রসিদ্ধ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরযুক্ত আন্তর্জাতিক ও দেশীয় জার্নালে ড. মালেকের প্রকাশিত গবেষণামূলক আর্টিকেলের সংখ্যা ১২৫, যেগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের দ্বারা মোট ২০১২ বার সাইটেশন হয়েছে (২ জুন ২০২৩ )। যেগুলোর এইচ-সূচক (ইনডেক্স) ২৩ এবং আই ১০ সূচক (ইনডেক্স) ৩৫, যা বিনার বিজ্ঞানীদের মধ্যে এককভাবে সর্বোচ্চ এবং দেশের এনএআরএসভুক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞানীদের

মধ্যে উলেস্নখযোগ্য।

ড. আব্দুল মালেক নিষ্ঠার সঙ্গে গবেষণাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এ পর্যন্ত তার গবেষণার ফসল হিসেবে টমেটোসহ তৈলবীজ ফসলের মোট ২৪টি জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার মধ্যে সরিষার ১০টি, তিলের ৪টি, সয়াবিনের ৭টি এবং টমেটোর ৩টি। উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে ১৯টির উদ্ভাবনে প্রধান গবেষক ও বাকি ৫টিতে সহযোগী গবেষক হিসেবে ড. মালেক দায়িত্ব পালন করেছেন। তার উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালের, মধ্যম মাত্রার লবণাক্ততা সহিষ্ণু, নাবিতে বপনযোগ্য, সাময়িক জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু ও উচ্চফলনশীল বিনাসরিষা-৪, বিনাসরিষা-৯ ও বিনাসরিষা-১২ এবং স্বল্প জীবনকালের ও উচ্চফলনশীল বিনাসরিষা-১১ কৃষকের মাঠে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে ও তেলবীজ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। এ ছাড়া তার উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ও খরা সহনশীল তিলের জাত বিনাতিল-২, বিনাতিল-৩ ও বিনাতিল-৪ এবং উচ্চফলনশীল ও লবণাক্ততা সহনশীল সয়াবিনের জাত বিনাসয়াবিন-২, বিনাসয়াবিন-৩, বিনাসয়াবিন-৫, বিনাসয়াবিন-৬ ও বিনাসয়াবিন-৭ কৃষকপর্যায়ে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। তার উদ্ভাবিত তেলবীজ ফসলের উলিস্নখিত জাতগুলো সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক 'তৈলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প'র মাধ্যমে প্রকল্পমেয়াদে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০% দেশীয় উৎপাদন দিয়ে মিটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি অবদান রাখবে বলে গবেষকরা আশাপ্রকাশ করেন। বিনার গবেষণা কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করাসহ আরও যুগোপযোগী গবেষণাকে গতিশীল করতে ড. মালেক সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যার ফলে বিনার গবেষণার সার্বিক গুণগত মানোন্নয়নের পাশাপাশি গবেষণাও পেয়েছে আশানরূপ গতি।

ড. আব্দুল মালেক বিগত আড়াই বছর ধরে পরিচালক (গবেষণা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও থেমে নেই তার নিজস্ব গবেষণা কার্যক্রম। এখনো তেল ফসল সরিষা, তিল, সয়াবিন ও সূর্যমুখীর জাত উদ্ভাবন গবেষণায় ড. মালেক সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছেন এবং ফসলগুলোর মোট ১২টি উন্নত অগ্রবর্তী মিউট্যান্ট উদ্ভাবন করেছেন যেগুলোর মাঠ মূল্যায়ন চলছে এবং আগামী তিন বছরে কমপক্ষে পাঁচটি জাত উদ্ভাবিত হবে। যেগুলো দেশের পুষ্টি নিরাপত্তা তথা দেশীয় ভোজ্যতেলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে রাখবে বিশেষ অবদান যার মাধ্যমে সাশ্রয় হবে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা।

২০১৯ সালের বিনা বিজ্ঞানী সমিতি (বিনাসা) নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক ও বর্তমান সরকারের মতাদর্শের অনুসারী বিনা বিজ্ঞানী সমিতির (বিনাসা) ড. মালেক-ড. হারুন নির্বাচনী প্যানেলের বিপুল ভোটে জয়ী ও নির্বাচিত সভাপতি। বিনায় ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং গবেষণায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৯ সালে বৃহত্তর জেলা (ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট) আঞ্চলিক পর্যায়ে খাজা উসমান খাঁ সিলভার অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত হন।

বিনাথর চলমান গবেষণার মানোন্নয়ন অব্যাহতভাবে চললেও থেমে নেই তার বিরুদ্ধে গবেষণাবিমুখ, স্বার্থান্বেষী ও আর্থিক দুর্নীতিবাজদের একটি দুষ্টু চক্রের মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট নানা অভিযোগ এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ধরনের হুমকিসহ অন্যত্র বদলির নানা নীল নকশা, যা কিনা ষড়যন্ত্রমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিনার গবেষণাকে যুগোপযোগী করতে ড. মালেক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বর্তমান সরকারের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার, টেকসই উন্নয়ন অভিস্ট-২০৩০, রূপকল্প-২০৪১, ডেল্টা পস্ন্যান-২১০০ এবং চতুর্থ শিল্প বিপস্নবকে সামনে রেখে গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ ও ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গৃহীত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে সুশাসনের আওতায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ন্যায়পরায়ণতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে