সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় কৃষি পরমাণু শক্তির ভূমিকা

পারমাণবিক কলাকৌশল ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষণার মাধ্যমে আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী শস্যের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে টেকসই ও উৎপাদনশীল একটি কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; মাটি ও পানির আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা; যথোপযুক্ত প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে শস্যের গুণগত মানোন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং রোগ ও কীট-পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ এবং ফসল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উন্নয়নকে কেন্দ্র করেই বিনার গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
ড. মো. আব্দুল মালেক
  ২২ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে আড়াইগুণ হলেও তার সঙ্গে পালস্না দিয়ে বেড়েছে খাদ্য উৎপাদন, যেমন ধানের উৎপাদন বেড়ে চারগুণ, গমে দিগুণ, ভুট্টায় দশগুণ এবং সবজিতে পাঁচগুণ। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩-৭৪ সালে জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৫৮.০৪ শতাংশ, যা বর্তমানে ১৩.৬ শতাংশ। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদানের হার কমলেও মোট অবদান বেড়েছে প্রায় ৬.০ গুণ। কৃষির এ সাফল্যের মূল কারিগর হলেন এ দেশের কৃষিবিদরা। জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেমের আওতায় বিশেষায়িত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)সহ অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত আগাম, প্রতিকূলতা সহিষ্ণু ও উচ্চফলনশীল নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, যার ফলে কৃষি খাতে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশেষায়িত কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিনার উৎপত্তি : দেশের কৃষি গবেষণায় পরমাণু শক্তি তথা পারমাণবিক কলাকৌশল প্রয়োগ ১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীনে পরমাণু শক্তি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (অঊঅজঈ), ঢাকায় শুরু হয়। জুলাই ১৯৭২ সালে কেন্দ্রটি ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (ওঘঅ) হিসেবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (ইঅঊঈ) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃষিতে পারমাণবিক যন্ত্রপাতির সম্ভাব্য ব্যবহার উপলব্ধি করে, কৃষি বিভাগটিকে পুনর্গঠিত করে একটি পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউটে সম্প্রসারিত করা হয় এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা থেকে বর্তমান ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়। ১২ ডিসেম্বর ১৯৭৭ সালে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (ওঘঅ) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ১৯৮২ সালের ১ জুলাই ইঅঊঈ থেকে আলাদা হয়ে ওঘঅ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (ইওঘঅ) হিসাবে একটি স্বতন্ত্র স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৮৪ সালের অধ্যাদেশ নং-২ জারি করে প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এর নতুন নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ আণবিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), যা পরে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) নামকরণ করা হয়। প্রধান কার্যালয়ের মোট ১১টি বিভাগের সমন্বয়ে বিনার গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া গাজীপুরে বিনার একটি আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৩টি  উপকেন্দ্র রয়েছে।

পারমাণবিক কলাকৌশল ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষণার মাধ্যমে আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী শস্যের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে টেকসই ও উৎপাদনশীল একটি কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; মাটি ও পানির আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা; যথোপযুক্ত প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে শস্যের গুণগত মানোন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং রোগ ও কীট-পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ এবং ফসল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উন্নয়নকে কেন্দ্র করেই বিনার গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

কৃষিতে বিশেষ পারমাণবিক কৌশল তথা মিউটেশন প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে ফসলের এমন সব কৌলিকতাত্ত্বিক ভিন্নতা সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে যার অস্তিত্ব প্রকৃতিতে ছিল না। যেসব ফসলের বংশগত পার্থক্য/ভিন্নতা খুবই কম এবং প্রচলিত প্রজনন পদ্ধতিতে বংশগত ভিন্নতা তৈরি সম্ভব নয় সেখানে মিউটেশন প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে খুব সহজেই বংশগতিতে স্থায়ীভাবে ভিন্নতা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়া হাইব্রিড জাত উদ্ভাবনে পুরুষ বন্ধ্যত্ব (গধষব ংঃবৎরষরঃু) তৈরি করাও মিউটেশনের মাধ্যমে সম্ভব। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জেনেটিক গেইন বাড়াতে মিউটেশন প্রজনন বিশেষ ভূমিকা রাখছে এবং এ পদ্ধতিতে প্রচলিত বা কনভেনশনাল পদ্ধতির চেয়ে ফসলের জাত উদ্ভাবনে সময়ও কম লাগছে। বিভিন্ন ফসলের কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যের উন্নয়নে মিউটেশন প্রজনন পদ্ধতিই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ব্যবহার করা হচ্ছে। মিউটেশন প্রজননকে কাজে লাগিয়ে জিনোম এডিটিং-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বংশগতির জিনকে এডিট করে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যের জিন পাওয়াও সম্ভব হচ্ছে।

আধুনিক মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনায় মাটির রাসায়নিক, ভৌত ও অণুজৈবিক গুণাবলির উন্নয়ন এবং পরিবেশ দূষণ রোধসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে পারমাণবিক কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রচলিত বা সনাতন পদ্ধতি প্রয়োগে মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনায় যেখানে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয় সেখানে মৃত্তিকা, পানি, ফসল ও পরিবেশ দূষণ গবেষণায় পারমাণবিক কৌশল হিসেবে স্টেবল ও রেডিও আইসোটোপ ব্যবহার করে সহজেই তথ্যনির্ভর ও সঠিক ফলাফল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সারের দক্ষতা, মাটিতে বায়ুমন্ডলীয় নাইট্রোজেন ফিক্সেশন, নাইট্রোজেন ফিক্সেশনে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন অণুজীব নির্বাচন, মাটিতে নাইট্রোজেনের ভারসাম্য এবং রূপান্তর ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ গবেষণায় নাইট্রোজেন আইসোটোপ (১৫ঘ) দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটিতে ফসফেটিক সারের দক্ষতা নির্ণয়সহ রেসিডুয়াল ফসফরাস গবেষণা এবং মাটিতে বিনিময়যোগ্য ফসফরাস নির্ধারণে ফসফরাসের রেডিও আইসোটোপ ৩২চ ব্যবহার করা হচ্ছে। কার্বনের স্টেবল আইসোটোপ ১৩ঈ মাটিতে জৈব পদার্থের উৎস ও মজুতকরণ নির্ণয়, কার্বন সিকুয়েস্ট্রেশনে, সালোকসংশ্লেষণ, কার্বন চক্র গবেষণা এবং গ্রিনহাউস গ্যাস শনাক্তকরণ ও নিঃসরণের উৎস নির্ণয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটিতে দস্তা সারের কার্যদক্ষতা ও ঘাটতি উদঘাটনে ব্যবহার করা হচ্ছে দস্তার রেডিও আইসোটোপ ৬৫তহ  যা সনাতন পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। কার্বনের রেডিও আইসোটোপ ১৪ঈ  সালোকসংশ্লেষণ, মাটিতে জৈব পদার্থের ও কার্বন ব্যালেন্স গবেষণায় ব্যবহার করা হচ্ছে। সালফার রেডিও আইসোটোপ (৩৫ঝ) মাটিতে সালফার চক্র গবেষণায় এবং সালফারের স্টেবল আইসোটোপ (৩৪ঝ) সালফার সারের দক্ষতা এবং পরিবেশ দূষণ নির্ণয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। সিজিয়ামের রেডিও আইসোটোপ ১৩৭ঈং ব্যবহার করে মাটির ক্ষয় নির্ণয় ও তদানুযায়ী কৌশল অবলম্বন করে ভূমিক্ষয়রোধ করা সম্ভব হবে। পটাশিয়ামের কার্যকারিতা নির্ণয়ে রুবিডিয়াম রেডিও আইসোটোপ (৮৬ জন) প্রতিস্থাপক আইসোটোপ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্যালসিয়াম রেডিও আইসোটোপ ৪০ঈধ ও ৪৫ঈধ এবং স্ট্রনসিয়াম রেডিও আইসোটোপ ৮৫ঝৎ মাটি ও ফসলের পুষ্টি গবেষণায় ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও সালফারের আইসোটোপ যথা : ১৩ঈ, ১৪ঈ, ১৫ঘ, ৩২চ ও ১৩ঝ ব্যবহার করে প্রতিকূল পরিবেশে ফসলের পুষ্টি গ্রহণের দক্ষতা নির্ণয় এবং সোডিয়াম, ক্লোরিন ও পটাশিয়ামের আইসোটোপ ২২ঘধ, ৩৬ঈষ এবং ৪০ক ব্যবহার করে ফসলের লবণাক্ততা সহনশীল জাত শনাক্তকরণ এবং বিশেষ আইসোটোপ ব্যবহার করে গাছের উৎপাদিত খাদ্য তার অর্থনৈতিক অংশে ব্যবহারের দক্ষতা নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি খরা, লবণাক্ততা, অসম বৃষ্টি, উচ্চ/নিম্ন তাপমাত্রা, আকস্মিক বন্যাজনিত কারণে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলা করে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং অন্যান্য আধুনিক গবেষণা কলাকৌশলের মাধ্যমে বিনা এ পর্যন্ত উদ্ভাবন করেছে ১৯টি ফসলের সর্বমোট ১২৮টি জাত। উদ্ভাবিত ফসলের জাতসমূহের মধ্যে রয়েছে দানাজাতীয় ফসলের ২৭, ডাল ফসলের ৪০, তেল ফসলের ৩৪, সবজি ফসলের ১৪, মসলাজাতীয় ফসলের ৬, পাটের ২, লেবুর ৩টি এবং ফলের ২টি জাত। বর্তমান সরকারের মেয়াদে বিগত সাড়ে ১৪ বছরে বিনা উদ্ভাবন করেছে ৮১টি উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু জাত। উদ্ভাবিত জাতসমূহের বেশির ভাগই বৈরী আবহাওয়ার ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবেলায় অত্যন্ত উপযোগী ও স্থানীয় জাতের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ফলন দিচ্ছে।

বিনা উদ্ভাবিত উলেস্নখযোগ্য জাতসমূহের মধ্যে রয়েছে স্বল্প জীবনকালের উচ্চফলনশীল আমন ধানের জাত বিনাধান-৭, বিনাধান-১১, বিনাধান-১৬ ও বিনাধান-১৭, বিনাধান-২২ ও বিনা ধান২৬, লবণ সহিষ্ণু বিনাধান-৮ ও বিনাধান-১০, জলমগ্নতা সহিষ্ণু বিনাধান-১১ ও বিনাধান-১২, লবণাক্ততা ও জলামগ্নতা সহিষ্ণু বিনাধান-২৩; জিংক সমৃদ্ধ আমনধান বিনাধান-২০; খরা সহিষ্ণু স্বল্প জীবনকালের আউশ ধানের জাত বিনাধান-১৯ ও বিনাধান-২১; স্বল্প জীবনকালের উচ্চফলনশীল বোরো ধানের জাত বিনাধান-১৪, বিনাধান-২৪ ও বিনা ধান২৫, রপ্তানিযোগ্য প্রিমিয়াম কোয়ালিটির সরু ও লম্বা চালের বিনা ধান২৫; নাবিতে রোপণযোগ্য বোরো ধান বিনাধান-১৪; উচ্চফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু নাবিতে বপনযোগ্য সরিষা বিনাসরিষা-৪, বিনাসরিষা-৭, বিনাসরিষা-৮, বিনাসরিষা-৯ ও বিনাসরিষা-১২, সাময়িক জলাবদ্ধতা/জলমগ্নতা (৫ দিন পর্যন্ত) সহিষ্ণু সরিষা বিনাসরিষা-৪, বিনাসরিষা-৯ ও বিনা সরিষা-১২, উচ্চফলনশীল চিনাবাদামের জাত বিনাচিনাবাদাম-৪, বিনাচিনাবাদাম-১০, বিনা চিনাবাদাম১১; উচ্চফলনসহ লবণাক্ততা সহিষ্ণু চিনাবাদামের জাত বিনাচিনাবাদাম-৬, বিনাচিনাবাদাম-৭, বিনাচিনাবাদাম-৮ ও বিনাচিনাবাদাম-৯, সয়াবিনের পাঁচটি জাত বিনাসয়াবিন-২, বিনাসয়াবিন-৩, বিনাসয়াবিন-৫, বিনাসয়াবিন-৬ ও বিনা সয়াবিন-৭; তিলের দুইটি জাত বিনাতিল-২ ও বিনাতিল-৪; উচ্চফলনশীল মসুরের জাত বিনামসুর-৫, বিনামসুর-৮ ও বিনামসুর-৯, বিনামসুর-১১ ও বিনা মসুর-১২; রোগ প্রতিরোধী বিনামসুর-৭; খরা সহিষ্ণু বিনামসুর-১০; উচ্চফলনশীল ও স্বল্প জীবনকালের গ্রীষ্মকালীন মুগের জাত বিনামুগ-৮, বিনামুগ-১১ ও বিনা মুগ-১২। তাছাড়া বাড়ির আঙিনাসহ ছাদকৃষিতে চাষযোগ্য বারমাসি বিনালেবু-১, বিনালেবু-২, বিনালেবু-৩, বিনামরিচ-১, বিনামরিচ-২ ও চেরি জাতের বিনাটমেটো-১০ উদ্ভাবন। বিনা এ পর্যন্ত আধুনিক চাষের জন্য ফসলের বালাই ব্যবস্থাপনা, মাটি, পানি ও সার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শতাধিক উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন উদ্ভাবন করেছে।

পারমাণবিক কৌশল তথা মিউটেশন প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে বিনা উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য প্রযুক্তিগুলো হলো-

মঙ্গা নিরসনে আগাম জাতের আমনধানের জাত : উত্তরাঞ্চলের রংপুরসহ দেশের বেশকিছু জেলায় কার্তিক মাসে কৃষকের হাতে না থাকত কোন কাজ এবং ঘরে থাকত না গো-খাদ্যসহ নিজেদের প্রয়োজনীয় খাবার, স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হতো মঙ্গা। এ মঙ্গা নিরসনে বিনা ২০০৭ সালে উদ্ভাবন করে উচ্চফলনশীল স্বল্প জীবনকাল বিনাধান-৭ (জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন), যা মধ্য আশ্বিন হতে কার্তিক মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়। জাতটি অবমুক্ত হওয়ায় মঙ্গা এলাকার কৃষকরা বিনাধান-৭ আবাদের মাধ্যমে মঙ্গা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। ভবিষ্যতের মঙ্গা মোকাবেলায় বিনা পরবর্তীতে আরও উদ্ভাবন করেছে ১২০-১২৫ দিনের জিংক সমৃদ্ধ বিনাধান-২০ ও ১১০-১১৫ দিনের বিনাধান-২২। উলিস্নখিত আমনধানের জাতগুলোর সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা দূর হওয়ার পাশাপাশি ফসলের নিবিড়তা উলেস্নখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

রপ্তানিযোগ্য প্রিমিয়াম কোয়ালিটির সরু ও লম্বা চালের বোরো ধান:বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করলেও রপ্তানিযোগ্য প্রিমিয়াম কোয়ালিটিসম্পন্ন সরু ও লম্বা চালের ধানের জাতের ছিল অভাব। বিনা সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ভাবন করেছে প্রিমিয়াম কোয়ালিটিসম্পন্ন সরু ও লম্বা চালের বোরো ধানের জাত বিনা ধান২৫। উচ্চফলনের কারণে জাতটি ইতোমধ্যে সারা দেশে বেশ সাড়া ফেলেছে এবং আশা করা যাচ্ছে দেশের চাহিদা মিটিয়ে এ জাতের ধানের চাল বিদেশে রপ্তানি করাও সম্ভব হবে যার মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হবে।

স্বল্প জীবনকালের বোরো ধান : দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য যোগানের জন্য ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমি হতে অধিক উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন উচ্চফলনশীলতার পাশাপাশি স্বল্প জীবনকালের জাত। বিনা উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালের উচ্চফলনশীল বিনাধান-১৪, বিনাধান-২৪ ও বিনা ধান-২৫। আমন ধান পরবর্তী রবি ফসল সরিষা চাষ করে তারপর উলিস্নখিত জাত তিনটি চাষ করা সম্ভব হবে ফলে শস্য নিবিড়তা করা সম্ভব হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে