শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাসায়নিক মৌলের ক্ষুদ্রতম অংশ পরমাণু

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

রাসায়নিক মৌলের ক্ষুদ্রতম অংশ যার স্বাধীন অস্তিত্ব নেই (নিষ্ক্রিয় গ্যাসের পরমাণু ছাড়া), কিন্তু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারে, সে সব আণুবীক্ষণিক কণিকাদিকে পরমাণু বলে। সব কঠিন, তরল, গ্যাস এবং আয়নের গঠনের মূলে রয়েছে নিস্তরিত বা আধানগ্রস্ত পরমাণু। পরমাণুর আকার খুবই ক্ষুদ্র; সাধারণত এরা দৈর্ঘ্যে ১০০ পিকোমিটার (১ মিটারের ১০,০০০,০০০,০০০ ভাগ বা চুলের ১ লাখ ভাগের ১ ভাগ)। পরমাণুর মাত্রা এই ক্ষুদ্রাকার হওয়ার কারণেই এর আচরণের বৈশিষ্ট্যতা প্রথাগত পদার্থবিদ্যার সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।

ভারতীয় দার্শনিক কণাদ খ্রিষ্টের জন্মের ৬০০ বছর আগে পরমাণুর ধারণা দেন। তিনি বলেন, সব পদার্থই ক্ষুদ্র এবং অবিভাজ্য কণিকা দ্বারা তৈরি। পরমাণু তত্ত্ব গ্রিক দার্শনিকরা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করে নয়, বরং দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পদার্থের তত্ত্ব নির্মাণের চেষ্টা করেন। এ ধারার প্রথম দার্শনিক ছিলেন মিলেতুসের লেউকিপ্পুস (খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী)। তার বিখ্যাত শিষ্য আবদেরার ডেমোক্রিটাস খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দে পদার্থ যেসব অতিক্ষুদ্র অবিভাজ্য কণা দিয়ে গঠিত তাদের নাম দেন 'এটমস' (গ্রিক: অঃড়সড়ং), যার আক্ষরিক অর্থ 'অবিভাজ্য' (রহফরারংরনষব)। ডেমোক্রিটাস বিশ্বাস করতেন পরমাণুগুলো সুষম, শক্ত, অসংকোচনীয় ও এগুলো ধ্বংস করা যায় না। তিনি মনে করতেন, পরমাণুর আকার, আকৃতি ও বিন্যাস পদার্থের ধর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন- প্রবাহী পদার্থের পরমাণুগুলো মসৃণ তাই সহজেই একে অন্যের ওপর দিয়ে গড়িয়ে যায়। কিন্তু কঠিন পদার্থের পরমাণুগুলো খাঁজকাটা ও অমসৃণ, তাই একে অপরের সঙ্গে আটকে থাকে। পরমাণু ছাড়া পদার্থের বাকি অংশ কেবলই শূন্যস্থান। ডেমোক্রিটসের দর্শনে পরমাণু শুধু পদার্থের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, মানুষের আত্মা ও ইন্দ্রিয়ের ধারণার সঙ্গেও এটি জড়িত। যেমন- তিনি মনে করতেন, পদার্থের টক স্বাদ সুচালো পরমাণুর কারণে আর সাদা রং মসৃণ পরমাণুর কারণে সৃষ্টি হয়। মানুষের আত্মার পরমাণুগুলোকে মনে করা হতো খুবই মিহি ধরনের। পরে সামোসের এপিকুরুস (৩৪১-২৭০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) ডেমোক্রিটাস দর্শন ব্যবহার করে প্রাচীন গ্রিকদের কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, মহাবিশ্বের সবকিছুই পরমাণু ও শূন্যস্থান নিয়ে গঠিত, তাই গ্রিক দেবতারাও প্রাকৃতিক নিয়মের ঊর্ধ্বে নন। পরে পেস্নটো ও অ্যারিস্টটল ডেমোক্রিটাস দর্শনের বিরোধিতা করেন। পেস্নটো এটা মানতে চাননি যে, সৌন্দর্য ও মহত্ব বস্তুবাদী পরমাণুর যান্ত্রিক প্রকাশ। আর অ্যারিস্টটল শূন্যস্থানের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন, কেননা ভিন্ন ভিন্ন বস্তু একই বেগে শূন্যস্থান অতিক্রম করবে- এটা তিনি কল্পনা

করতে পারেননি।

পরমাণুর গঠন কেমন হতে পারে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ডাল্টনের পরমাণুবাদ। আধুনিক রসায়নের ভিত্তি বলে পরিচিত ডাল্টনের পরমাণুবাদে পরমাণুকে অবিভাজ্য ধরা হয়েছে। কিন্তু এই তত্ত্ব এখন অচল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে প্রমাণিত হয় যে, পরমাণুর তিনটি উপাদান। যেসব সূক্ষ্ণ কণিকা দিয়ে পরমাণু গঠিত, তাদের মৌলিক কণিকা বলে। এরা হচ্ছে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন। এই তিনটি কণিকা বিভিন্ন সংখ্যায় একত্রিত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু গঠন করে। ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটন এবং আধানহীন নিউট্রন একত্রিত হয়ে নিউক্লিয়াস গঠন করে আর এদের ঘিরে ঋণাত্মক আধানের ইলেকট্রন ঘুরছে।

পরমাণুর ক্ষুদ্রতম কণিকা ইলেকট্রন।১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে স্যার জে জে থমসন সর্বপ্রথম ইলেকট্রনের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। একটি ইলেকট্রনের আসল ভর অতি সামান্য। ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘূর্ণায়মান। ইলেকট্রনকে সাধারণত ব প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।

প্রোটন ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট কণিকা যা নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকে। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড প্রোটনের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। একটি পরমাণুতে ইলেকট্রনের সমানসংখ্যক প্রোটন থাকে। একটি হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে একটি ইলেকট্রন সরিয়ে নিলেই প্রোটন পাওয়া যায়, তাই একে ঐ+ বলা যেতে পারে। একে সাধারণত ঢ় দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।

ইলেকট্রন ও প্রোটনের ন্যায় নিউট্রনও একটি মৌলিক কণিকা তবে এটি আধানবিহীন। আধানবিহীন (হবঁঃৎধষ) হওয়ায় এর নাম দেওয়া হয়েছে নিউট্রন। নিউট্রন নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থান করে। ১৯৩২ সালে জেমস স্যাডউইক নিউট্রন আবিষ্কার করেন। এর ভর ইলেকট্রনের ভরের প্রায় ১৮৩৭ গুণের সমান। একে সাধারণত হ দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। নিউট্রন পরমাণুর কেন্দ্রে প্রোটনের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই দুই কণিকার সম্মিলিত ভরকে পারমাণবিক ভর বলা হয়ে থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে