সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ধর্মঘটের কারণে বন্ধ রয়েছে 'ডেডপুল-৩' ছবির শুটিং

ধর্মঘটে অচল হলিউড

তারার মেলা ডেস্ক
  ২০ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না। আজ থেকে ৬৩ বছর আগে ১৯৬০ সালের দিকে একবার হলিউড অভিনেতারা আন্দোলনে নেমেছিলেন। সে সময় যৌথভাবে ধর্মঘটে গিয়েছিলেন অভিনেতা-অভিনেত্রী ও লেখকরা। এরপর ১৯৮০ সালে এরকম একবার ঘটেছিল হলিউডে। দীর্ঘ চার বছর পর আবার যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংগঠন দ্য স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড ও আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টস (স্যাগ-অ্যাফট্রা) অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। ধীরে এই ধর্মঘট আরও কঠোর হচ্ছে। অভিনেতা ও অভিনেত্রীরাও মাঠে নামছেন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। এই ধর্মঘট হলিউডকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই হলিউডের বড় তিনটি ফ্রাঞ্চাইজির শুটিং বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমাগুলোর তালিকায় রয়েছে 'মিশন : ইম্পসিবল-৮', 'ডেডপুল-৩' ও 'ভেনম-৩'। একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মার্ভেল স্টুডিওর পক্ষ থেকে স্টুডিও প্রধান কেভিন ফেইজ এবং সহসভাপতি লুই ডি এসপোসিটো সিনেমা তিনটির কার্যক্রম বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। যেখানে বলা হয়, 'স্যাগ-অ্যাফট্রার ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা স্টুডিও মালিক ও স্ট্রিমিং কোম্পানিগুলোর সংগঠন অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসার্স-এর সব নেতাকর্মীর সঙ্গে বসব। এই বিষয়ে সবাইকে দ্রম্নত একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো দরকার বলে আমরা মনে করি। কর্মীদের দাবির প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রেখেই এই সমাধান হবে বলে আমরা তাদের আশ্বাস দিচ্ছি। তাই তাদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মপ্রকাশ করে মার্ভেল আপাতত আসন্ন সিকু্যয়াল সিনেমা ডেডপুল-৩ ও ভেনম-৩ এর শুটিং বন্ধ করেছে। নতুন সিদ্ধান্তের পর এই সিনেমাগুলোর শুটিং আবার শুরু করা হবে। এ ছাড়া প্যারামাউন্ট পিকচারস তাদের মিশন : ইম্পসিবল-৮ শুটিং ও বন্ধ করে দিয়েছে।'

তবে আসন্ন সময়গুলোতে সিনেমা মুক্তির ওপর ধর্মঘটের তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে না, কারণ অনেক চলচ্চিত্র ইতোমধ্যেই তাদের শুটিং সম্পন্ন করেছে। তবে আগামী বছর যেসব সিনেমা আসছে, সেগুলো এই ধর্মঘটের আওতায় পড়তে যাচ্ছে। যার মধ্যে 'অ্যাভাটার-৩ এবং ৪', গস্ন্যাডিয়েটর-এর সিকু্যয়াল 'মুফাসা : দ্য লায়ন কিং'-এর মতো চলচ্চিত্রও রয়েছে। স্যাগ-অ্যাফট্রার আগে গত মে মাসে ?স্টুডিও মালিক ও স্ট্রিমিং কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে প্রায় অভিন্ন দাবিতে ধর্মঘটে যান হলিউডের স্ক্রিপ্ট রাইটাররা। রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকার এই ধর্মঘট এখনো চলছে।

ন্যায্য পারিশ্রমিকসহ একাধিক দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছে হাজার হাজার হলিউড অভিনয়শিল্পী। এ ছাড়া চিত্রনাট্যকারদের সঙ্গে ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন হলিউডের অভিনেতাদের ইউনিয়ন। এ বিষয়ে স্কাই নিউজকে হলিউড অভিনেতা ব্রায়ান কক্স বলেছেন, হলিউড অভিনেতাদের ধর্মঘট 'খুবই অপ্রীতিকর' হতে পারে এবং এ ধর্মঘট ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত চলতে পারে। ব্রায়ান কক্স বলেন, এ ধর্মঘটের ফলে অনেক হিট টিভি শো এবং সিনেমার নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে, অভিনেতারাও তাদের তৈরি করা চলচ্চিত্রের প্রচার বন্ধ করে দেবেন।

তিনি বলেন, 'স্টুডিওগুলো আমাদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কেননা, স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে তাদের প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে হবে। আর এ অর্থ লেখক বা অভিনেতাদের সঙ্গে তাদের ভাগ করে নেয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।'

এর মাধ্যমে ৬৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় রকমের স্থবিরতার মুখে পড়তে যাচ্ছে হলিউড। এই কর্মবিরতির জেরে হলিউডের অধিকাংশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন প্রোডাকশন হাউসে ধীরে ধীরে সব কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। মুনাফা থেকে ন্যায্য পাওনা, ভালো কর্মপরিবেশের দাবিতেই এই ধর্মঘট শুরু করেছে অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন দ্যা স্ক্রিন অ্যাক্টর গিল্ড বা এসএজি। এসএজির এই ধর্মঘট লস অ্যাঞ্জেলেসে গত বৃহস্পতিবার রাতে শুরু হয়। পরদিন শুক্রবার ক্যালিফোর্নিয়ায় নেটফ্লিক্স সদরদপ্তর ছাড়াও প্যারামাউন্ট, ওয়ার্নার ব্রস ও ডিজনির সামনে শিল্পী-কুশলীরা জড়ো হয়। শিল্পীদের ইউনিয়ন বলেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং কম্পিউটার জেনারেটেড চেহারা বা কণ্ঠ যেন শিল্পীদের জায়গায় ব্যবহার না করা হয়। ধর্মঘটের বিষয়ে ইউনিয়ন যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে দেখা যায়, অভিনয়শিল্পী ছাড়াও গান, নৃত্য, স্ট্যান্ট পারফরমার এবং পাপেট বা মোশন পিকচার নিয়ে যারা কাজ করেন তারাও এর আওতায় আছেন।

মূলত স্টুডিওগুলোর সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় দ্য স্ক্রিন অ্যাক্টর গিল্ড-আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্ট বা এসএজি-আফট্রা জানিয়ে দেয় যে, তারা স্টুডিওগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। এরপর আলোচনার জন্য তাদের কমিটি সর্বসম্মতভাবেই ধর্মঘটের প্রস্তাব করে। তবে স্টুডিওগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন 'দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসার্স' বা 'এএমপিটিপি' এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত ইন্ডাস্ট্রির ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হাজার হাজার মানুষকে সংকটের দিকে নিয়ে যাবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে এএমপিটিপি বলেছে, তারা এ নিয়ে একটি যুগান্তকারী প্রস্তাবে একমত হয়েছে- যা অভিনয়শিল্পীদের ডিজিটাল প্রতিলিপি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুরক্ষা দেবে এবং কোনো শিল্পীর ডিজিটাল রেপিকা ব্যবহার করা হলে তার সম্মতি নিতে হবে। তবে এসএজির পক্ষে থাকা প্রধান আলোচক ডানকান ক্রাবট্রি-আয়ারল্যান্ড বলেছেন, এ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।

অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোর বিষয়ে এসএজির দাবি ছিল, চলচ্চিত্র বা অনুষ্ঠান পুনঃপ্রচার হলে সেজন্য শিল্পীদের অর্থ দিতে হবে। ওদিকে রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা আরেকটি ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। এ সংগঠনের প্রায় সাড়ে ১১ হাজার সদস্য আছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র ও টিভি প্রোডাকশনের বড় অংশের কাজ স্থবির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধর্মঘট নিরসনের উপায় খুঁজতে ভবিষ্যতে অভিনয়শিল্পীদের সমিতি এসএজির সঙ্গে অভিনয়শিল্পীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ও হলিউড স্টুডিওগুলোর মধ্যে বৈঠক করার প্রস্তুতি চলছে। ওই ধর্মঘট থেকে সংকটের সমাধান খোঁজার চেষ্টা হবে সব পক্ষ থেকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে