শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুর টিটিসিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাগ্য বদল হচ্ছে বেকার যুবক-যুবতীদের

এক বছরে ৩৭৫০ জনের মধ্যে বিদেশে কর্মসংস্থান ২৫৭৫ জনের
শফিউল আলম লাভলু, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
  ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৩:৫৩

কারিগরি বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলছে শেরপুরের নকলা উপজেলার গনপদ্দীতে অবস্থিত শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)। এখানে কম্পিউটার, ইলেকট্রিক্যাল, ড্রাইভিংসহ বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ-বিদেশে চাকুরির সুযোগ পাচ্ছেন বেকার যুবক-যুবতীরা। এই টিটিসিতে বেকারত্ব দূরীকরণে অসাধারণ সাফলতা অর্জন করেছে স্কিলস ফর ইমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেইপ)।

শেরপুর টিটিসি থেকে ২০২২ সালে বিভিন্ন নিয়মিত/স্বনির্ভর কোর্সে ৭৮২ জন, এসএসসি ভোকেশনালে ৫৬ জন, ড্রাইভিং কোর্সে ৩২৫ জন এবং প্রাক-বহির্গমন কোর্সে ২৫৭৫ জনসহ ৩৭৫০ জন প্রশিক্ষনার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ২৫৭৫ জনের। দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরি পেয়েছেন ১৩৫ জন। এছাড়াও বিদেশ গমনের জন্য প্রায় ৬ হাজার বেকার যুবক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। শুধুমাত্র দক্ষ জনবল তৈরি করেই নয় বরং তাদের যোগ্য স্থানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে টিটিসি বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মির্জা ফিরোজ হাসান।

শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) সূত্র মতে, শেরপুর টিটিসিতে কম্পিউটার অপারেশন, ওয়েল্ডিং এন্ড ফেব্রিকেশন, মেশিন টুলস অপারেশন, সিভিল কন্সট্রাকশন, গার্মেন্টস, ইলেকট্রিক্যাল হাউজওয়ারিং, ড্রাইভিং ও কনজুমার ইলেকট্রনিক্স ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বেকার যুবক-যুবমহিলারা। বিদেশগামী কর্মীদের প্রাক-বহির্গমন কোর্স ও যুব মহিলাদের হাউজ কিপিং কোর্সসহ নবম ও দশম শ্রেনির এসএসসি ভোকেশনাল কোর্স চলমান রয়েছে। এই ট্রেডে বর্তমানে ৩৬৩ জন প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে। দেশের স্বনামধণ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরি করছেন প্রশিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি। শুধুমাত্র দেশেই নয়। দেশের গন্ডি পার হয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে পাঠাচ্ছে রেমিট্যান্স। দেশের দক্ষ জনশক্তি জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স দিয়ে স্বয়ং সম্পূর্ন হচ্ছে দেশের রেমিট্যান্স অর্থনীতি। এতে করে যেমন ধিরে ধিরে দেশের বেকারত্ব হার কমছে তেমনি নিম্ন ও স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে ফিরছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। যার ফলে উন্নত হচ্ছে মানুষের জীবনমান।

টিটিসি থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া একাধিক প্রশিক্ষণার্থী জানান, ‘প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগে আমরা পরিবারের বোঝা হয়ে থাকলেও প্রশিক্ষণের আমরা চাকরি পেয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে পরিবারের জন্য আশির্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছি। প্রশিক্ষন নিয়ে খুঁজতে হয়নি তাদের কর্মসংস্থান। টিটিসি থেকে আমাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান। বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন আমাদের মধ্যে অনেকে।’

শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) এর অধ্যক্ষ অধ্যক্ষ মির্জা ফিরোজ হাসান বলেন, স্বল্প শিক্ষিত কিংবা বেকাররা সমাজের বোঝা নয়, তাদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলে মানব সম্পদে পরিণত করাই আমাদের লক্ষ্য। ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে টিটিসি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য শ্রমবাজারে চাহিদার ভিত্তিতে যথাযথ কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তর করে তাদের লক্ষ্যে পৌছে দেওয়া। এছাড়াও প্রশিক্ষিত মানুষকে বিদেশগামী করতে ও দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে টিটিসি কার্যকর ভূমিকা পালন করছে টিটিসি। দেশের প্রশিক্ষিত নাগরিকগণ বিদেশে ভালো কাজের নিশ্চিয়তা পেয়েছেন। এতে করে কমছে বেকারত্ব, পরিবারে ফিরছে স্বচ্ছলতা। আশঙ্কাজনক হারে কমেছে দালালদের দৌরাত্ম্য, স্বস্তিতে বিদেশে গমণ করতে পারছেন দক্ষ জনসম্পদ।’ অধ্যক্ষ প্রবাসীদের উদ্যেশ্য করে বলেন, আপনারা অবৈধ পথে বিদেশ যাবেন না, অবৈধ পথে বা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাবেন না। তাতে আপনারও বিপদে পরবেন ও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অভিবাসী শ্রমিকরা যেন কোন ধরনের শোষন, বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহবান রইল।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে