ভারতের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। ঝাড়খন্ড রাজ্যের সাবেক গভর্নর দ্রোপদী মুর্মুকে এই পদে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। উড়িষ্যা রাজ্য থেকে আসা আদিবাসী দ্রোপদী মুর্মু এই নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহার বিরুদ্ধে লড়বেন। নির্বাচিত হলে এই ৬৪ বছরের নারী ভারতের প্রথম আদিবাসী নারী প্রেসিডেন্ট হবেন।
ভারতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগামী ১৮ জুলাই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গণনা করা হবে ২১ জুলাই। নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেবেন ২৫ জুলাই। এসব তথ্য জানিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনে মঙ্গলবার রাতে বৈঠকে বসে বিজেপির পার্লামেন্টারি বোর্ড। সেখানে প্রায় ২০ জনকে নিয়ে আলোচনা চলে। সিদ্ধান্ত হয় পূর্ব ভারতের কোনও আদিবাসী এবং নারীকে প্রার্থী করা হবে। আর সেই ভিত্তিতেই দ্রোপদী মুর্মুকে প্রার্থী করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজেপি প্রধান জেপি নাড্ডা।
২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেও এই পদের জন্য জোরালো প্রার্থী ছিলেন দ্রোপদী মুর্মু। তবে সেবার বিহারের গভর্নর ও দলিত গোষ্ঠীর সদস্য রাম নাথ কোবিন্দ সরকারের প্রথম পছন্দ হিসেবে প্রার্থী হন।
ঝাড়খণ্ডের প্রথম নারী গভর্নর দ্রোপদী মুর্মু কাউন্সিলর হিসেবে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। উড়িষ্যা থেকে দুইবার বিজেপির টিকিটে আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। বিজেপির সঙ্গে বিজু জনতা দলের (বিজেডি) সঙ্গে জোট গড়ে যখন নবীন পাটনায়েক রাজ্যটিতে সরকার গঠন করেন তখন মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন তিনি।
দ্রোপদী মুর্মু বিজেপির ময়ুরভাজ জেলা ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং উড়িষ্যা বিধান সভায় রাইরংপর আসনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
এর আগে সম্মিলিত বিরোধী দলগুলো এক বৈঠকের পর যশবন্ত সিনহাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে থাকেন ইলেক্ট্ররাল কলেজের ভোটে। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্যদের পাশাপাশি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলোর পার্লামেন্টের সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় এই ইলেক্ট্ররাল কলেজ।
সূত্রের খবর, এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নারী ‘মুখ’ সামনে রেখেই এগোতে চেয়েছে বিজেপি। রাইসিনা হিলসের দৌড়ে বিজেপির তরফে তিন নারী ছিলেন। তামিলসাই সৌন্দরাজন, আনন্দীবেন প্যাটেল এবং দ্রৌপদী মুর্মু। এই তিন নারীকে নিয়েই মঙ্গলবার বিজেপির পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকে আলোচনা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা।
দ্রৌপদী মুর্মু প্রার্থী হওয়ায় উড়িষ্যার শাসকদল বিজেডি যে বিজেপিকেই সমর্থন করবে তা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় মুর্মুকে প্রার্থী করার ফলে বিরোধী শিবির থেকে আরও ভোট বিজেপির দিকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল হিসাবে গত বছর পর্যন্ত কাজ করেছেন মুর্মু। সেখানকার শাসকদল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা নেতা শিবু সোরেন ও সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী শিবু-পুত্র হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে মুর্মুর সম্পর্ক রীতিমতো ভাল। সেই সুবাদে তাদের ভোট বিজেপির ঝুলিতে আসতে পারে এমন সম্ভাবনাই প্রবল। মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা হলে একদিকে যেমন বিজেপির জয়ের পথ প্রশস্ত হবে আবার তেমনই রাজনৈতিক সুবিধা মিলবে তাদের। এতে উড়িষ্যায় বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি হবে আবার আদিবাসী মুখকে প্রেসিডেন্ট করা হলে এই বছরের গুজরাট বিধানসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে আগামী বছরের মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনেও সুবিধা পাবে বিজেপি।
যাযাদি/এসএইচ
Copyright JaiJaiDin ©2022
Design and developed by Orangebd