বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পুতিনের প্রতি ট্রাম্পের নমনীয়তায় হতবাক ইউরোপীয় নেতারা

যাযাদি ডেস্ক
  ২১ মে ২০২৫, ১৪:২০
পুতিনের প্রতি ট্রাম্পের নমনীয়তায় হতবাক ইউরোপীয় নেতারা
আলবেনিয়ায় এক সম্মেলনে (বাম থেকে) যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে গতকাল সোমবার টেলিফোনে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ফোনালাপের পরপরই ট্রাম্পের সঙ্গে একটি কনফারেন্স কলে যোগ দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপের পাঁচটি দেশের নেতা। তারা আশা করছিলেন, পুতিন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছেন – আর তা নাহলে যুক্তরাষ্ট্র মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।

কিন্তু, বাস্তবে তাদের আশাভঙ্গ হয়। ট্রাম্প জানান, পুতিন কেবলমাত্র আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই শান্তি আলোচনায় অংশ নেবে না এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। মার্কিন গণমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঐ কনফারেন্স কলে দু'জন অংশগ্রহণকারী (সরকার-প্রধান) এবং এবিষয়ে অবহিত আরেকটি সূত্র।

1

কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ: ট্রাম্পের বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত ছিল যেন তিনি পুরো বিষয় থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিতে যাচ্ছেন। যা উপলদ্ধি করে কলটিতে অংশ নেওয়া কিছু ইউরোপীয় নেতা ছিলেন "হতবাক" বা "বিস্মিত", এমনটাই জানিয়েছে সূত্রগুলো।

হোয়াইট হাউসে পরে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, "আমার মনে হয় কিছু একটা ঘটবে। আর যদি না ঘটে, আমি শুধু (আলোচনার প্রক্রিয়া থেকে) সরে যাব এবং বাকিরা চালিয়ে যাবে।" তিনি বলেন, "এটা তো ইউরোপের বিষয় ছিল, এবং সেভাবেই থাকা উচিত ছিল।"

ঘটনার বিবরণ: সোমবার সকালে ট্রাম্প এবং জেলেনস্কির একটি সংক্ষিপ্ত ফোনালাপ হয়। সূত্র জানায়, ট্রাম্প তখন জেলেনস্কিকে জিজ্ঞেস করেন, পুতিনকে তিনি কী বলবেন?

জেলেনস্কি এই ফোনকল পেয়ে খুশি হন। তিনি ট্রাম্পকে অনুরোধ করেন, যেন তিনি পুতিনের কাছে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানান, নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেন এবং ইউক্রেনকে না জানিয়ে কোনো ছাড় না দেন।

নেপথ্যের কাহিনি: পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ শেষ হওয়ার পরপরই ট্রাম্প আবার জেলেনস্কিকে কল দেন। এবার কলটিতে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ফিনল্যান্ড এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের নেতারাও যুক্ত ছিলেন।

জেলেনস্কি পরে বলেন, "দ্বিতীয় কলটি প্রথমটির চেয়ে দীর্ঘ এবং ভিন্ন ধরনের ছিল।" কনফারেন্স কলটিতে যুক্ত একজন ইউরোপীয় নেতা অ্যাক্সিওসকে বলেন, এটি ছিল "গঠনমূলক", তবে আরেকটি সূত্র জানায়, জেলেনস্কির কাছে এটি "খারাপ" মনে হয়েছে। অ্যাক্সিওসের কাছে হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।

ট্রাম্প কলে অংশ নেওয়া নেতাদের বলেন, পুতিন সরাসরি যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন। একাধিক সূত্র জানায়, একথায় সবার মধ্যেই কিছুক্ষণের নীরবতা নেমে আসে।

জেলেনস্কি তখন ট্রাম্পকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, পুতিন আগে থেকেই আলোচনায় বসার কথা বলেছিলেন এবং গত শুক্রবার ইস্তাম্বুলে প্রথম দফার যুদ্ধবিরতি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ট্রাম্প একথায় সরাসরি কোনো জবাব দেননি।

সূত্রগুলো জানায়, জেলেনস্কি ও কলটিতে থাকা অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারা এসময় ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দেন, অবিলম্বে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পাশাপাশি শান্তি আলোচনা শুরু করার প্রস্তাবটি তাঁর (ট্রাম্পের) কাছ থেকেই এসেছিল।

টানাপোড়েনের উৎস: ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেন, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে কিনা। তখন ট্রাম্প জানান, তিনি মনে করেন এটি ভালো ধারণা নয়, এবং তিনি মনে করেন, পুতিন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চান।

সূত্র জানায়, এসময় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি জানতে চান, আলোচনার আগে অন্তত দুই সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়া— কেন সম্ভব নয়। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস প্রশ্ন রাখেন, রাশিয়া কী কী ছাড় দিতে রাজি আছে?

ট্রাম্প জানান, পুতিন একটি "শান্তিচুক্তির খসড়া" পেশ করবেন, যাতে যুদ্ধবিরতি এবং যুদ্ধের অবসান–দুই ক্ষেত্রেই রাশিয়ার শর্তাবলি থাকবে। কলটির একটি সূত্র জানায়, ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের ও জেলেনস্কিকে জানান, তিনি পুতিনকে এমন একটি প্রস্তাব দেওয়ার অনুরোধ করেছেন যেটি "মানুষ গ্রহণযোগ্য মনে করবে", এমন কিছু নয় যা সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যাত হবে।

জেলেনস্কি তখন বলেন, পুতিনের সঙ্গে আগের সব আলোচনাই ব্যর্থ হয়েছে, এবং তিনি জোর দিয়ে বলেন, ট্রাম্প চাপ না দিলে পুতিন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না।

ঘটনার অন্তর্নিহিত মর্মার্থ: সূত্রগুলো জানায়, কলটিতে উপস্থিত নেতারা বিস্মিত হন যে, ট্রাম্প পুতিনের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিক্রিয়ায় এতটা সন্তুষ্ট ছিলেন এবং এটিকে নতুন অগ্রগতি হিসেবে তুলে ধরেন, যদিও বাস্তবে পুতিনের অবস্থান আদৌ বদলায়নি।

কিন্তু ট্রাম্প ইউরোপ ও ইউক্রেনের নেতাদের বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসতে পারে, কারণ তারাই সবচেয়ে ভালোভাবে এই সংঘাতের জটিলতাকে বোঝে।

জর্জিয়া মেলোনি ও ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেন, শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সম্পৃক্ত থাকা প্রয়োজন। মেলোনি বলেন, "কাউকে তো (এখানে) বিচারকের ভূমিকা পালন করতে হবে।" মের্ৎস তখন প্রস্তাব দেন, যাতে সব পক্ষের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পরবর্তীতে ট্রাম্প আলোচনার ভেন্যু হিসেবে ভ্যাটিকান সিটির নাম প্রস্তাব করেন। এই দুই ফোনকলের কয়েকঘণ্টা পরেই হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প তাদের বলেন, "আমার মনে হয় কিছু একটা ঘটবে। আর যদি না ঘটে, আমি শুধু সরে যাব এবং বাকিরা চালিয়ে যাবে। আবারও বলছি, এটি ইউরোপের বিষয় ছিল এবং সেভাবেই থাকা উচিত ছিল।"

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে