মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

ইউক্রেনে রুশ হামলার পর পুতিনকে ‘পাগল’ বললেন ট্রাম্প

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ মে ২০২৫, ১২:২০
ইউক্রেনে রুশ হামলার পর পুতিনকে ‘পাগল’ বললেন ট্রাম্প
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি-সংগৃহীত

ইউক্রেইনে আকাশপথে সর্ববৃহৎ রুশ হামলার ঘটনা ঘটেছে। আর এই হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাজে মোটেও ‘খুশি নন’।

“কী হয়েছে তার? তিনি অনেক মানুষ মারছেন,” পুতিনকে করা বিরল তিরস্কারে রোববার এমনটাই বলেছেন তিনি। পরে রুশ প্রেসিডেন্টকে তিনি ‘পুরোপুরি পাগল’ বলেও অভিহিত করেন।

এর আগে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, সাম্প্রতিক রুশ হামলার ব্যাপারে ওয়াশিংটনের নীরবতাই পুতিনকে ‘আরও হামলায়’ উৎসাহিত করছে। তিনি কঠোর নিষেধাজ্ঞাসহ মস্কোর ওপর চাপ বাড়ানোরও আহ্বান জানান।

জানা যায়, শনিবার রাত থেকে শুরু হয়ে রোববার ভোর পর্যন্ত ইউক্রেইনজুড়ে রাশিয়ার ছোড়া ৩৬৭টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রে অন্তত ১২ জন নিহত ও ডজনের বেশি লোক আহত হয়েছে। ২০২২ সালে পুতিন প্রতিবেশী দেশে সর্বাত্মক অভিযানে নামার পর এক রাতে এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা, বলছে বিবিসি।

সোমবার দিবাগত রাতেও ইউক্রেইনের অনেক অঞ্চলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতায় সাইরেন বেজেছে।

এর মধ্যে উত্তরপূর্বের খারকিভে রুশ হামলায় এক শিশুসহ অন্তত তিনজন আহত হয়েছে বলে সেখানকার মেয়র ইহর তেরাখোভ জানিয়েছেন। দক্ষিণের জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে আহত হয়েছে দুইজন, বলেছেন আঞ্চলিক প্রধান ইভান ফেদোরোভ।

এদিকে রাশিয়ায়, মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেছেন, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো রাজধানীর দিকে উড়ে আসা দুটি ইউক্রেইনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে। কোনো হতাহতের খবর মেলেনি।

রোববার রাতে নিউ জার্সিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে পুতিন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “আমি তাকে অনেকদিন ধরে চিনি, সবসময় তার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক, কিন্তু তিনি এখন বিভিন্ন শহরে রকেট পাঠাচ্ছেন আর মানুষ মারছেন, এটা আমি মোটেও পছন্দ করছি না।”

এই প্রেক্ষিতে রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর কথা ভাবছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “অবশ্যই।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট অবশ্য আগেও মস্কোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, যদিও শেষ পর্যন্ত সেগুলো কথার কথাই থেকে গেছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতার কিছুক্ষণ পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে লেখেন, পুতিন ‘পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছেন’।

“আমি সবসময় বলে এসেছি যে তিনি ইউক্রেনের কেবল এক টুকরো নয়, পুরোটাই চান। এবং হয়তো এটাই সঠিক বলে প্রমাণিত হচ্ছে, কিন্তু যদি তিনি তা করেন, তাহলে এটি রাশিয়াকে পতনের দিকে নিয়ে যাবে,” বলেছেন ট্রাম্প।

একইসঙ্গে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিরও সমালোচনা করেছেন তিনি। বলেছেন, যেভাবে তিনি (জেলেনস্কি) কথা বলছেন, তা তার দেশের উপকারে আসছে না।

“তার মুখ থেকে যা-ই বেরিয়ে আসে তা-ই সমস্যা সৃষ্টি করে। আমি মোটেও এটা পছন্দ করছি না, এখনই এটা বন্ধ হওয়া উচিত,” বলেছেন ক্ষমতায় বসেই দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ট্রাম্প।

উল্লেখ্য, কিইভের ইউরোপীয় মিত্ররা অনেকদিন ধরেই রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা যুদ্ধরত দুইপক্ষকে শান্তি আলোচনায় বসানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবে, কিন্তু তাতে যদি কোনো অগ্রগতি না হয় তাহলে তারা ওই মধ্যস্থতা চেষ্টা থেকে ‘বেরিয়ে যাবে’।

যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে কয়েকদিন আগেই ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে দুই ঘণ্টা ফোনালাপ হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পরে বলেছিলেন, ফোনালাপটি ‘ভালো হয়েছে’ বলেই তার ধারণা। রাশিয়া ও ইউক্রেইন যুদ্ধবিরতি ও ‘যুদ্ধ বন্ধের’ আলোচনা শিগগিরই শুরু করতে যাচ্ছে বলেও সেসময় জানিয়েছিলেন তিনি।

পুতিন বলেছিলেন, রাশিয়া ইউক্রেইনের সঙ্গে ‘সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ শান্তির’ ব্যাপারে একটি ‘সমঝোতা স্মারক’ নিয়ে কাজ করবে। একে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার কৌশল হিসেবে দেখছে কিইভ ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা।

ট্রাম্পের চাপেই চলতি মাসের মাঝামাঝি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সরাসরি আলোচনায় বসেছিল রাশিয়া ও ইউক্রেইনের প্রতিনিধিরা। তিন বছর পর দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে সেটিই ছিল প্রথম কোনো শান্তি আলোচনা।

যদিও ওই আলোচনায় এক হাজার করে বন্দি বিনিময় ছাড়া আর কোনো কিছুতেই অগ্রগতি হয়নি। রোববার মস্কো ও কিইভ তিনদিনব্যাপী ওই যুদ্ধ বন্দি বিনিময় সম্পন্ন করেছে। তার মধ্যেই রাশিয়ার হামলার তীব্রতাও বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

পুতিনের বাহিনী ইউক্রেইনে নতুন করে বড় অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মস্কোঘনিষ্ঠ একাধিক টেলিগ্রাম চ্যানেলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়ার দখলে এখন যুদ্ধপূর্ববর্তী ইউক্রেইনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড; এর মধ্যে ক্রাইমিয়াও আছে। ইউক্রেইনের এই দক্ষিণাঞ্চলীয় উপদ্বীপটি মস্কো ২০১৪ সালে কব্জায় নিয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে