যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া যাচাই প্রক্রিয়া আরও বিস্তৃত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে দূতাবাসগুলোকে নতুন করে শিক্ষার্থী ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপে বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বাংলাদেশি আবেদনকারীদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন ও পোস্টে পাঠানো মেমোতে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত’ এই স্থগিতাদেশ বলবৎ থাকবে। মেমোতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষার্থী এবং বিদেশি এক্সচেঞ্জ ভিসা আবেদনকারীদের সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকলাপ আরও গভীরভাবে যাচাই করা হবে, যার ফলে দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোর কার্যক্রমে ‘গুরুতর প্রভাব’ পড়বে।
বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজ মেমোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন দূতাবাসগুলোকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্টের শিডিউল বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে যাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইতিমধ্যে নির্ধারিত হয়ে গেছে তাঁরা সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে পারবেন।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এল যখন ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় ও অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁর মতে, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অতিমাত্রায় বামপন্থী এবং ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষকে প্রশ্রয় দিচ্ছে ও বৈষম্যমূলক ভর্তি নীতি অনুসরণ করছে।
সাধারণত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে ইচ্ছুক বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিজ দেশে আমেরিকান দূতাবাসে ইন্টারভিউয়ের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই বিদেশি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি-এর ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। কারণ বিদেশি শিক্ষার্থীরা সাধারণত বেশি হারে টিউশন ফি দিয়ে থাকে।
শিক্ষার্থী ভিসা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘কারা দেশে প্রবেশ করছে, সেই যাচাই প্রক্রিয়াকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখি এবং আমরা তা অব্যাহত রাখব।’
উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত কোটি কোটি ডলারের (যেমন হার্ভার্ডের জন্য আনুমানিক ১০০ মিলিয়ন ডলার) তহবিল স্থগিত করেছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করার কারণে শিক্ষার্থীদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে এবং হাজার হাজার ভিসা বাতিল করেছে। যদিও এর অনেকগুলোই আদালতের নির্দেশে আটকে গেছে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, কিছু মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী তৎপরতাকে ইহুদিবিদ্বেষ দ্বারা প্রভাবিত হতে দিয়েছে। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষোভের অন্যতম লক্ষ্য হয়েছেন। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি বা বিদেশি গবেষকদের আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষমতা বাতিল করে, যদিও একজন ফেডারেল বিচারক সেই নীতি স্থগিত করেছেন। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারত, যেখানে ক্যাম্পাসের এক চতুর্থাংশের বেশি শিক্ষার্থীই বিদেশি। নতুন এই নির্দেশনার ফলে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।