মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
বাণিজ্য চাপ দিয়ে যুদ্ধ থামানোর দাবি

ট্রাম্পের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান ভারতের  

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ জুলাই ২০২৫, ১৫:৩৭
ট্রাম্পের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান ভারতের  
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

পেহেলগাম হামলার ‘বাণিজ্য চাপের’ মাধ্যমে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত থেকে সরে আসতে রাজি করিয়েছেন বলে লাগাতার দাবি করে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এবার সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। খবর: এনডিটিভি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করেন, সেসময় ওই ঘরে, মোদীর পাশেই ছিলেন তিনি। কথোপকথনে যুদ্ধবিরতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে কোনো কথা-ই ওঠেনি।

গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়। এই ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ ‘অপারেশন সিঁদুর’।

হামলাকারীরা পাকিস্তান-সমর্থিত লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করে ভারত।

এদিকে, ট্রাম্প গত ২৬ জুন হেগ-এ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, আমি একাধিক ফোনকলের মাধ্যমে বিষয়টি শেষ করেছি। আমি বলেছিলাম, তোমরা যদি লড়াই করতেই চাও, তবে বাণিজ্য হবে না। তখন ওরা বলল, না না, আমরা বাণিজ্য চাই।

অন্যদিকে, নিউ ইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউজউইককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্করকে প্রশ্ন করা হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের টোপ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো হয় বলে যে দাবি করছেন ট্রাম্প, তা কতটা সত্য?

উত্তরে জয়শঙ্কর বলেন, আমি বলতে পারি, গত ৯ মে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলেন, আমি ওই ঘরেই ছিলাম। জেডি ভ্যান্স জানান, পাকিস্তান বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী ওই হুমকিতে টলেননি। বরং তিনি জানিয়ে দেন, ভারতের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া মিলবে।

তবে জয়শঙ্কর ভারতের অবস্থান স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরলেও, ট্রাম্প এখনো যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব দাবি করে চলেছেন। কয়েকদিন আগেও তাকে বলতে শোনা যায়, ফোনে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসঙ্গ তুলে আমিই ইতি (যুদ্ধে) টেনেছি।

আমি তাদের বলি, এভাবে যুদ্ধ করলে আমরা তোমাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য আর করবো না। আর তাতেই তারা যুদ্ধ থেকে সরে আসে। ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

এর প্রতিক্রিয়ায় জয়শঙ্কর বলেন, কূটনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্য়ে কোনো সংযোগ নেই। দুই ক্ষেত্র স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়। তার বক্তব্য, ব্যবসায়ীরা তাদের কাজ করে চলেছেন; সংখ্যা, পণ্য নিয়ে আলোচনা করছেন। আমি মনে করি, ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত পেশাদার, অবিচল।

৯ মে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে হামলার তীব্রতা বাড়ানো হয় বলেও মেনে নেন জয়শঙ্কর। কিন্তু দ্রুতই ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের কড়া জবাব দেয় বলেও দাবি তার।

জয়শঙ্কর দাবি করেন, ১০ মে তার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও’র আলোচনা হয়। রুবিও জানান, পাকিস্তান আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

ওই দিন বিকেলেই পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের নির্দেশে ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) মেজর জেনারেল কাশিফ আবদুল্লাহ ভারতীয় ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘোষকে ফোন করে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, আমি যা বলছি, তা আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলছি। পহেলগামের হামলা কেবল একটি সন্ত্রাসী তৎপরতা ছিল না, বরং অর্থনৈতিক যুদ্ধ ছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল কাশ্মীরের পর্যটনশিল্প ধ্বংস করে দেওয়া, ধর্মীয় উসকানি দেওয়া ও সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, এভাবে সীমানার ওপার থেকে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে দায়মুক্তি ভোগ করার দিন শেষ। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী যথাযথ জবাব দিয়েছে ও দেবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে