ফিলিস্তিনের গাজায় আগামী সপ্তাহেই যুদ্ধবিরতি হয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে হামাসের ‘ইতিবাচক’ মনোভাবের প্রতিক্রিয়ায় তাকে ‘ভালো’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, গাজা যুদ্ধবিরতি আগামী সপ্তাহেই হয়ে যেতে পারে, তবে তিনি এখন আলোচনা কী অবস্থায় আছে সে সম্বন্ধে বিস্তারিত জানেন না।
রোববার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে সোমবারকে সপ্তাহের শুরু ধরে নেওয়া হয়।
ট্রাম্পের এ মন্তব্যের আগে হামাস জানিয়েছিল, তারা গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সর্বশেষ প্রস্তাবের ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ পাঠিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার নতুন পর্বে অংশ নিতে আমরা আন্তরিকভাবে প্রস্তুত।’
পরে ঊর্ধ্বতন এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, হামাস প্রস্তাবের রূপরেখার সঙ্গে একমত হলেও তারা সেখানে কিছু সংশোধনী আনার অনুরোধ করেছে। ২০ মাস ধরে চলা যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধের আলোচনা যদি ব্যর্থও হয়, তাও ইসরায়েলি হামলা পুনরায় শুরু হবে না যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন নিশ্চয়তা চেয়েছে তারা।
এ প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে আগে এ ধরনের দাবি মানতে তেল আবিব ও ওয়াশিংটন অনীহা দেখিয়েছিল।
মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য ‘প্রয়োজনীয় শর্তাবলী’ মেনে নিয়েছে। ওই যুদ্ধবিরতির মধ্যেই বিবদমান পক্ষগুলো যুদ্ধের ইতি টানতে কাজ করবে।
তিনি হামাসকে তার ভাষায় ‘ফাইনাল’ বা ‘চূড়ান্ত’ প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘তারা এর চেয়ে ভালো কিছু পাবে না, দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
নতুন এ প্রস্তাবে জীবিত ১০ জিম্মি ও মৃত ১৮ জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি আছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
জীবিত-মৃত মিলিয়ে গাজায় এখন ৫০ জিম্মি আছে বলে ধারণা, তার মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত, বলছে তেল আবিব।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির তত্ত্বাবধানে গাজায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহে অনুমতি দেওয়ার কথাও আছে বলে জানা গেছে।
এই ত্রাণ কেবল জাতিসংঘ ও তার অংশীদাররাই সরবরাহ করতে পারবে এবং ইসরায়েল পরিচালিত ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে বলে হামাস দাবি জানিয়েছে, বলেছেন ফিলিস্তিনি ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
প্রস্তাবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যে সংশোধনী চেয়েছে হামাস, সেটি হচ্ছে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার।
মার্কিন প্রস্তাবে গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশ থেকে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে বলে আন্দাজ করা হচ্ছে। কিন্তু হামাস চাইছে, মার্চে আগের যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর আগে ইসরায়েলি বাহিনী যেখানে ছিল, সেনারা এখনই যেন সেখানে ফিরে যায়, বলছেন ওই কর্মকর্তা।
মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে ফের অভিযানে নামে।
ফিলিস্তিনি এ কর্মকর্তা জানান, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা ব্যর্থ হলে আকাশ ও স্থলপথে ইসরায়েলি অভিযান যেন ফের শুরু না হয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার নিশ্চয়তাও চাইছে হামাস।
মার্কিন প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন থেকে যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা শুরুর কথা বলা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অবশ্য আগে সব জিম্মির মুক্তি ছাড়া এবং হামাসের সামরিক ও সরকার পরিচালনার সক্ষমতা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত উড়িয়ে দিয়েছিলেন যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা।