দেশের প্রথম দ্রুতগতির উড়ালসড়ক ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এ পথের বিমানবন্দর-কারওয়ান বাজার অংশ চালু হলেও প্রায় দেড় বছর বন্ধ মালিবাগ-কুতুবখালী অংশের নির্মাণকাজ। প্রকল্পে নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে অর্থছাড় স্থগিত রেখেছে চীনের ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এক্সিম ব্যাংক।
প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিজস্ব তহবিল থেকে ঠিকাদাররা এ সময়ে কারওয়ান বাজার-মালিবাগ অংশে কিছু কাজ করেছেন।
কিন্তু মালিবাগ-কুতুবখালী অংশে কাজ শুরু করলেও তা আর এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বন্দ মিটিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ অংশের কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা করছেন।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদার পদ্ধতিতে (পিপিপি) প্রজেক্ট। নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন ও পরবর্তী সময়ে উড়ালসড়কটি পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় ‘ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেড’। শুরুতে এর একক মালিকানা ছিল থাইল্যান্ডভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির।
পরে ইতাল-থাই আর্থিক সংকটে পড়লে ৪৯ শতাংশ শেয়ার চীনের শ্যাংডং সিএসআই ও সিনোহাইড্রো করপোরেশনের কাছে বিক্রি করে দেয়।
বিনিময়ে প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় প্রতিষ্ঠান দুটি। ২০২৩ সালের শেষের দিকে ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ নিয়ে তিন ঠিকাদারদের মধ্যে জটিলতা তৈরি হয়। বিষয়টি বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং শেষ পর্যায়ে কোম্পানির মালিকানা থেকে বাদ পড়ে ইতাল-থাই।
সূত্র যায়, ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানির প্রায় পুরো মালিকানা দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাতে রয়েছে। ইতাল-থাই বাদ যাওয়ায় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদসহ কিছু পদে পরিবর্তনের কাজ চলছে। কোম্পানি পুনর্গঠনের কাজ শেষ না হওয়ায় চীনের এক্সিম ব্যাংক অর্থছাড় করছে না।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সূত্রে জানা যায়, নির্মাণকাজ সচল রাখতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ সমস্যাটির শুরু আসলে ঠিকাদারদের মধ্যকার জটিলতা থেকে। এ কারণে এক্সিম ব্যাংক থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো টাকা ছাড় হয়নি। এর মধ্যে সামান্য যা কাজ হয়েছে, তা নিজেদের ইকুইটি দিয়ে করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাজ শুরুর সময় মালিবাগ-খিলগাঁও সড়ক যেভাবে খুঁড়ে রাখা হয়েছিল, গত দেড় বছরে সেগুলোয় জমেছে আবর্জনার স্তূপ। নির্মাণকাজের জন্য রাস্তাটি টিন দিয়ে ঘিরে রাখা (ফেন্সিং) হয়েছিল। এর বেশির ভাগ টিন চুরি হয়ে গেছে। সড়ক বিভাজক ভেঙে রাখা হয়েছে। ছোট-বড় গর্ত, রাস্তার বেহাল দশা ।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে খরচ হচ্ছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ করিডোরের সড়কপথের ধারণক্ষমতা বাড়াবে। অন্যদিকে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হলে ঢাকা ইপিজেড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ সহজতর হবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এর গতিপথের একটি বড় অংশ পড়েছে বিমানবন্দর-কমলাপুর রেলপথ বরাবর। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল করিডোরের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। আর এ মূল করিডোরে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছে ৩১টি র্যাম্প।
এর মধ্যে ১৫টি র্যাম্প ওঠার জন্য আর নামার র্যাম্প বা পথ ১৬টি। র্যাম্পগুলোর সম্মিলিত দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭ কিলোমিটার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার যানজট নিরসনের পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।