শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক নার্স দিবসে শিক্ষার্থীদের অনুভূতি

কুবি প্রতিনিধি
  ১২ মে ২০২৩, ১৬:১৪

ডাক্তারের পাশাপাশি নার্সরা তাদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে একজন রোগীকে সুস্থ করে তুলেন। নার্সদের কাজের বিপরীতে তাদের মূল্যায়ন হয় কম, তারা যেমন বিশেষ ছুটির দিনগুলোতেও সেবা দিতে প্রস্তুত থাকেন আমাদের উচিত তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া। চলুন দেখে আসি শিক্ষার্থীরা কি ভাবছে, সাথে ছিলেন আবু জাফর

নার্সরা হাসপাতাল ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ

মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে দায়িত্ব পালনকারী সকল সেবিকাদের স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদর্শনের দিন হিসেবে আজ ১২ই মে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। আধুনিক নার্সিং এর প্রবর্তক মহীয়সী সেবিকা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল এর সেবা কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্বব্যাপী তার জন্মদিন ১২ই মে কে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তিনি ১৮২০ সালের ১২ই মে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। বাংলাদেশ নার্স এসোসিয়েশন ১৯৭৪ সাল থেকে এই দিবসটি পালন করে আসছে।

স্বাস্থ্য সেবার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে নার্সিং সেবা। স্বাস্থ্য ক্ষাতে চিকিৎসকদের পাশাপাশি নার্সরা অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে। নার্সদের ব্যাতিত চিকিৎসা ক্ষেত্রকে যেন চিন্তাই করা যায় না। জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণে এবং সুস্থ ও নিরোগ জাতি গঠনে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত নার্স গড়ে তোলার জন্য বিশ্বমানের নার্সিং শিক্ষা সম্প্রসারণের নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর।

বাংলাদেশের নার্সিং পেশার মানোন্নয়নের জন্য সর্বপ্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল ভিত্তি রচিত হয়েছিলো। তিনিই মূলত উচ্চ শিক্ষিত নারীদের এ পেশায় আনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়া। বর্তমানে তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে সিনিয়র স্টাফ নার্সদের ২য় শ্রেণীর পদমর্যাদা প্রদান করে তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। বর্তমানে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের অধীনে সারাদেশে সর্বমোট ৬০টি নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে৷ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষা কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়াও, নার্সিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

আশা করি, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আমাদের দেশের নার্সগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। পরিশেষে, "আন্তর্জাতিক নার্স দিবস ২০২৩" এর সার্বিক সফলতা কামনা করছি।

ইভানুর মীম, শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

"নার্স এ যেন এক মানবতার ফেরিওলার নাম"

উন্নত-অনুন্নত, বিশৃঙ্খল-শৃঙ্খল, অরাজকতাপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ সকল প্রকার দেশেই সেবক এবং সেবিকাদের উদ্দেশ্য একটাই— "অসুস্থকে সুস্থ করা, রোগীকে নীরোগ করা "। নার্সরা নিজেদের নিরলস আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করছে হাজারো মুখের হাসি যারা অসুস্থতায় কাতরাতো বিছানায়। নার্স'রা চিকিৎসকদের পাশে বিদ্যমান না থাকলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় ফাটল দেখা যাবে অচিরেই, কারণ চিকিৎসক রোগীকে পথের ঠিকানা দেন আর নার্স সেই পথের সন্ধানে পথিকের সঙ্গীর ন্যায় পাশে থাকে অর্থাৎ সেবা শুশ্রূষার মাধ্যমে অসুস্থ শরীরে সঞ্চারিত করে সুস্থতার বায়ু। নার্সদের এই অবদান বিশ্বের সর্বত্র রয়েছে।

বিশ্বের নার্সদের শ্রদ্ধাজন আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবর্তক 'লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প' খ্যাত 'ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলে'র জন্মদিন ১২ মে। তার প্রতি সম্মান জানাতে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হয় বিশ্ব নার্স দিবস হিসেবে ।

সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও এই দিবস পালন করা হয় বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বিএনএ) ১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি পালন করে আসছে। অতীতে ঢাকায় স্বল্প পরিসরে দিবসটি পালিত হলেও বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।

নার্সদের অবদান মাথায় রেখে নার্সিং শিক্ষাব্যবস্থায় মনোনিবেশ করছেন বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর "নার্সিং ও মিডওয়াইফারি"।

পরিশেষে, বাংলাদেশের উন্নয়নের পর্যায় উচ্চে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নার্সদের অবদান ও ভূমিকা থাকবে এবং ২০২৩ সালের নার্স দিবসের লক্ষ্য বাস্তবায়ন হবে এমন প্রত্যাশা করছি।

ইসরাত জাহান লোকপ্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

নার্সদের যথাযথ মুল্যায়ন

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ব্যাবস্হার মূল কাঠামো হলো ডাক্তারের সহকর্মী হিসেবে ফার্মাসিস্ট, নার্স কাজ করে কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ফার্মাসিস্ট কে কাজে না লাগালেও সে জায়গায় নার্স স্বাস্থ্য ব্যাবস্হায় ডাক্তারের পর গুরু দায়িত্ব পালন করে।

আধুনিক নার্সিং পেশার রূপকার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ১২ই মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস উদযাপন করা হয়।তারই প্রেক্ষিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন করা হবে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছেঃ- ‘'আমাদের নার্স আমাদের ভবিষ্যৎ'' এ প্রচারণার মাধ্যমে মূলত সমাজের নীতিনির্ধারক, জনসাধারণ এবং যারা স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও অর্থায়নে ভূমিকা রাখেন তাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গিতে নার্সিং পেশার ভবিষ্যতকে আরও উজ্জ্বল ও আলোকিত করবে। তাদের এই মহান কর্মের উপযুক্ত মুল্যায়ন বৃদ্ধি করবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী যথাযথভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য দেশে প্রতিটি চিকিৎসকের বিপরীতে চারজন নার্স থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের ১ জন চিকিৎসকের জন্য রয়েছে ১জনেরও কম নার্স (মাত্র ০.৭৪ জন)। অর্থাৎ নার্সের তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ১.৪১ গুণ বেশি। অন্যদিকে দেশের শহরাঞ্চলে প্রতি ১০,০০০ জনের জন্য ৫.৮ জন নার্স থাকলেও গ্রামাঞ্চলে সেটা রয়েছে মাত্র ০.৮ জন। এ চিত্রই বলে দেয় দেশে নার্সের তীব্র সঙ্কট রয়েছে। তাই দেশের স্বাস্থ্যখাতের মান উন্নয়নের জন্য নার্সদের শিক্ষা ও পেশাগত দক্ষতার বাড়ানোর পাশাপাশি প্রযুক্তিগতভাবেও তাদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা খুবই জরুরী এবং দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালগুলোর সেবার মান বৃদ্ধির জন্য অধিক পরিমাণে নার্সদের নিয়োগ করা সময়ের সাথে জরুরি হয়ে গেছে।

আল মাসুম হোসেন শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভা, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

নার্সরা আমাদের বন্ধু

"আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যত" প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস ২০২৩ পালিত হচ্ছে। মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, তা আজ সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত। এই দিনে মায়া মমতা দিয়ে মুমূর্ষু রোগীকে সুস্থ করে তোলার জাদুকর দের জানাই সালাম, করোনা অতিমারী সহ বিভিন্ন দূর্যোগে যারা মানব সেবার এ মহান দায়িত্ব পালন করতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন , তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। বাংলাদেশের নার্সিং আজ সুপ্রতিষ্ঠিত, দেশের তরুণ প্রজন্ম নার্সিং এর প্রতি অনেক আগ্রহী হচ্ছেন , তাদের অবদানে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত, উন্নত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা । এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আরো উদ্যোগ প্রয়োজন । সেবা আর মানবিকতার মহান বার্তা নিয়ে এগিয়ে যাক নার্সিং শিল্প। সফল হোক আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত না নার্সরা আমাদের বন্ধু।

শামসের তাবরিজ চৌধুরী গণিত বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে