শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইফতারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়ুক 

রিপন আল মামুন
  ১৫ মার্চ ২০২৪, ১১:০৭
-ফাইল ছবি

ত্যাগ ও আত্মসংযমের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভের মাস রমজান আমাদের মাঝে উপস্থিত। ধর্মীয় গুরুত্বের বিচারে মুসলিমদের কাছে রমজানের মর্যাদা অনেক উপরে। দীর্ঘ ১১ টি মাস পানহারের পর ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা এই রমজানে মহান আল্লাহতালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকে এবং আত্মসংযমতা অবলম্বন করে থাকে।

সারাদিন পানাহার থেকে বিরত অর্থাৎ সিয়াম সাধনার পর মুসলিমদের কাছে একটি আনন্দঘন মুহূর্ত হচ্ছে ইফতারের সময়। হাদীস শরীফে এসেছে ‘রোজাদারের আনন্দের সময় দুটি, একটি তার ইফতারের সময় আর অপরটি (পরকালে) তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের সময়।’ অর্থাৎ এই সাহরি ও ইফতার শুধু খাবারদাবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর ইহলোকিক সামাজিক গুরুত্বের সাথে সাথে ঐশ্বরিক একটা গুরুত্বও রয়েছে মুসলিমদের কাছে।

অন্য আরেকটা হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেন, যে ব্যক্তি রমজানে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে ব্যক্তির গোনাহ মাফ হবে এবং একইসঙ্গে রোজাদার ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব সে-ও পাবে।’ সাহাবিরা রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী, আমাদের মধ্যে এমন অনেক লোক আছে, যারা অন্যদের ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। জবাবে রাসুল (সা.) বললেন, ‘কাউকে পেট ভরে ইফতার করাবে- এমন কোনো শর্ত নেই। কেউ রোজাদার ব্যক্তিকে একটি মাত্র খেজুর বা পানি দ্বারা ইফতার করালেও সে সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে।'

উপরের এই হাদিসের মধ্যেই ইফতারের সামাজিক গুরুত্বের বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে। একজন রোজাদার ব্যক্তির ইফতারের সময় শুধু নিজেই নয়, তার প্রতিবেশীকেও সে ইফতার করায়। সারাদিন রোজা পালানোর পর সবাই মিলে ইফতার করার মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরো মজবুত হয়। মসজিদ মাদ্রাসা কিংবা কোন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে আয়োজিত ইফতারের মাধ্যমে ছোট বড়, ধনী গরিব সবাই একই ভ্রাতৃত্বের ছায়াতলে এসে একে অন্যের খোঁজ খবর নিতে পারেন। এতে আমাদের সামাজিক বন্ধনও অনেক মজবুত হয়।

ইফতারের সামাজিক গুরত্বের বিষয়টি বিবেচনা করে ইউনেস্কো ইফতারকে বিশ্বের ‘অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের’ স্বীকৃতি দিয়েছে। ইফতারকে বিশ্বের ‘অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের’ স্বীকৃতি দিতে তুরস্ক, ইরান, উজবেকিস্তান ও আজারবাইজান ইউনেস্কোর কাছে যৌথভাবে আবেদন করেছিল। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউনেস্কো ইফতারকে ‘অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের’ স্বীকৃতি দিয়েছে।' ইফতার নিয়ে ইউনেসকো বলেছে, পবিত্র রমজানে মাগরিবের আজানের পর ইফতার করা হয়। মুসলমানেরা একত্র হয়ে ইফতার করেন। এতে পারিবারিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মজবুত হয়। এ ছাড়া ইফতারের মাধ্যমে একাত্মতা, উদারতা ও সামাজিক যোগাযোগ বাড়ে।

তাই এখন ইফতারকে শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে বিবেচনার সুযোগ নেই। এটি এখন মুসলিমদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও পরিণত হয়েছে। তবে এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান হলেও এর অসাম্প্রদায়িক গুরুত্বও রয়েছে। সারাদিন রোজা পালনের পর সবাই মিলে সুশৃঙ্খলভাবে ইফতারের আনুষ্ঠানিকতার ঐক্য সামাজিক ঐক্য ও নিরাপত্তা বিধানে এবং একটি সংঘাতমুক্ত গঠনমূলক আদর্শ সমাজ বিনির্মাণেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বিশেষ করে, সমাজে রোজাদারদের পারস্পরিক সমবেদনা, সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে রমজান মাসের এই ইফতারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সমাজে ধনী-গরিব, দুঃখী-বুভুক্ষু, অনাথ-এতিম বিভিন্ন ধরনের মানুষ বসবাস করেন। আর ইফতারের মাধ্যমে তাদের মধ্যে সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের সৃষ্টি হয়

মসজিদ, মাদ্রাসা কিংবা কলেজে, ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস সব জায়গায় এটি পালনের উন্মুক্ত ব্যাবস্থা রাখা উচিত। ইফতারের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সবজায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে। কেননা এখন এটি আমাদের ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি অংশ।

লেখক : শিক্ষার্থী : মনোবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে