ডিভোর্স একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হলেও, এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অভিঘাত গভীর। বিশেষত নারীদের জন্য, যারা সংসার ও সন্তান প্রতিপালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেও বহুক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে ফিরে যান—এটা কেবল একটি মানবিক সংকটই নয়, বরং বিচারবোধের প্রশ্নও।
আমাদের সমাজে একটি ধারণা প্রচলিত—ডিভোর্সের পর স্বামীর উপার্জিত সম্পদে স্ত্রীর কোনো অধিকার নেই। এই ধারণা ভুল, এবং শুধু ভুল নয়, এটি ইসলামি মূল্যবোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
???? ইসলাম কি বলে?
ইসলামে নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সবসময়ই গুরুত্ব পেয়েছে। বিয়ের সময় মহর নির্ধারিত হয়, যা নারীর একান্ত অধিকার। ডিভোর্সের পর ইদ্দতের সময় নারীর ভরণপোষণ স্বামীর দায়িত্ব, এবং সন্তান থাকলে তাদের অভিভাবকত্ব ও খরচ বহনের বিষয়েও স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু শুধু এসব ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়, যদি বিবাহিত জীবনের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা বিবেচনায় না আনা হয়।
???? সংসার, সন্তান ও পুরুষের উপার্জন—এ এক যৌথ প্রয়াস
একজন নারী যখন গৃহস্থালি সামলান, সন্তান ধারণ ও লালনপালন করেন, তখন তিনি এমন এক ধরণের অদৃশ্য শ্রম দিচ্ছেন যার মূল্য আর্থিকভাবে নিরূপণ করা কঠিন, কিন্তু তা ছাড়া পুরুষের ক্যারিয়ার বা উপার্জন সম্ভব হত না। সেই হিসেবে বলা যায়, সংসার চলাকালীন অর্জিত সম্পদ আদতে একটি যৌথ উপার্জন।
যদি ডিভোর্স হয়, তাহলে নারীর সেই অবদানকে উপেক্ষা করে তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না—না ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে, না মানবিক বিচারে।
???????? ইউরোপের আইন কী বলে?
অনেকেই বলেন, পশ্চিমা সেকুলার দৃষ্টিভঙ্গি নারীর এই অধিকার নিশ্চিত করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—UK Divorce Law-এ যে '৫০/৫০ এসেট শেয়ারিং'-এর বিধান, তা মূলত ইসলামি স্পেনের আইন ও শরিয়া ভিত্তিক ‘নারীর অধিকার’ চর্চা থেকেই অনুপ্রাণিত।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে কোনো বিবাহ বিচ্ছেদের পর, বিচারক দম্পতির বিবাহকালীন যৌথ সম্পদকে সমানভাবে ভাগ করে থাকেন। এই ভাগাভাগিতে নারীর অবদান—যেটা হয়তো দৃশ্যমান না—তাও বিবেচনায় আনা হয়। যেমন:
সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব
গৃহস্থালি ব্যবস্থাপনা
স্বামীকে মানসিক ও শারীরিক সহায়তা
এই আইন কোনো পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না; বরং ন্যায্যতার ভিত্তিতে উভয়ের ভবিষ্যৎ নিরাপদ রাখে।???? আমরা কী শিখতে পারি?
নারীর শ্রম অদৃশ্য হলেও মূল্যবান
পুরুষের উপার্জন পুরোপুরি তার একার নয়
ডিভোর্সের পর নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু মানবিক নয়, ইসলামীও
বিবাহকালীন অর্জিত সম্পদে নারীর যৌক্তিক অংশীদারিত্ব থাকা উচিতইসলাম কখনো নারীর প্রতি অবিচার সমর্থন করেনি। বরং সামাজিক ন্যায়বিচার, দায়িত্ব ভাগাভাগি এবং পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতেই পরিবার গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে। আধুনিক বিশ্বের অনেক আইন আজ ইসলামি শিক্ষার ন্যায়ভিত্তিক দিকগুলোই অনুসরণ করছে।
আমরা চাইলে এই অভিজ্ঞতা ও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে পারি, যেখানে নারী খালি হাতে নয়, ন্যায্য সম্মান নিয়ে ডিভোর্সের পর জীবন শুরু করতে পারেন।
লেখক: ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
চেয়ারম্যান, সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট