বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদী শাসনের অবসানের ৬০ দিন পার হয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে তাদের অনেক সমর্থকদের সাথে কথা বলার এবং সামাজিক মাধ্যমে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু একটি জিনিস খুবই লক্ষণীয়—কোথাও তেমন কোনো অনুতাপের সুর শোনা যায়নি।
যে দলটি এতদিন ধরে ক্ষমতায় ছিল, তাদের শাসনামলে ঘটে যাওয়া শত শত নিরীহ মানুষের করুণ মৃত্যুর ঘটনায় কোনো অনুশোচনা প্রকাশ পায়নি। আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ যারা এই অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, তাদের মৃত্যুকে কেউই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না। অথচ দলের সমর্থকদের মুখে এ বিষয়ে তেমন কোনো নিন্দা নেই।
শোকহীনতা এবং দায়িত্ববোধের অভাব দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচারের ঘটনা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং ‘আয়না ঘরে’ আটকে রেখে বছরের পর বছর মানুষকে নিপীড়নের মতো ঘটনাগুলোতে আওয়ামী সমর্থকদের কণ্ঠে কোনো দুঃখের সুর নেই। তারা বরং আগের সরকারের সাফল্যের দোহাই দিয়েই চলেছেন, “আগের সরকারই ভাল ছিল” কিংবা “ইউনুস কতদিন চালাতে পারে দেখবো” এই ধরনের কটাক্ষাত্মক মন্তব্যই শোনা যাচ্ছে।
কিন্তু কেন এই অনুশোচনার অভাব? একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি ভালোবাসা থাকা মানেই কি অন্য দলের প্রতি, বা অন্যায়ের প্রতি কোনো দায়িত্ববোধ থাকবে না?
মানবতার প্রশ্নে নিরবতা কেন?
কেউই বলতে শুনিনি, "দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি কিভাবে শেষ হবে?" কিংবা "আমাদের ভুলের জন্য জনগণ কীভাবে ভুগেছে?" বরং, সবার মনোযোগ ছিল অন্যের দিকে আঙ্গুল তোলার দিকে।
আওয়ামী লীগ শাসনের কিছু অপকর্ম:
বিবেকের দরকার রাজনৈতিক সমর্থন মানেই সত্য থেকে সরে আসা নয়। কোনো রাজনৈতিক দলই ভুলের উর্ধ্বে নয়। এদের ভুলগুলো চিহ্নিত করে শোধরানোই হতে পারে আগামী দিনের রাজনীতির পন্থা। ক্ষমতার লড়াইয়ে নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ, এবং জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করাই সবচেয়ে জরুরি। যারা অন্ধভাবে দলের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের উচিত নিজেদের বিবেকের প্রশ্ন করা—একটি দলের প্রতি ভালোবাসা থাকা মানেই কি সত্য, ন্যায়বিচার এবং মানবতার প্রতি অনুগত থাকা ভুলে যাওয়া?
বাংলাদেশের জনগণ এই সব অনিয়মের শিকার হয়েছে, এবং তারা অপেক্ষায় আছে একটি ন্যায়বিচারমুখী রাষ্ট্রের জন্য, যেখানে দলীয়করণের উর্ধ্বে উঠে সবাই দেশের কল্যাণে কাজ করবে।
যাযাদি/ এম