বিশ্বরাজনীতির অঙ্গনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে সিরিয়ার জনগণের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিজয়। বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধে স্বৈরাচারী শাসক আসাদের পতন বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিল, গণমানুষের ইচ্ছাশক্তি এবং ঐক্য কতটা শক্তিশালী হতে পারে। ক্ষমতা, বিদেশি সমর্থন, কিংবা দমন-পীড়নের যেকোনো অস্ত্রই জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে।
সিরিয়ার এই বিজয় শুধুমাত্র একটি দেশের বিজয় নয়, বরং এটি সারা বিশ্বের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইরত মানুষের জন্য এক আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে। এটি দেখিয়ে দিয়েছে, আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সমর্থন যতই শক্তিশালী হোক না কেন, যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন কোনো শক্তিই তাদের দাবিয়ে রাখতে পারে না।
স্বৈরাচার উৎখাত: জনগণের আত্মবিশ্বাসের পুনর্জাগরণ
স্বৈরাচারের পতন মানুষের মনে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনে। এটি প্রমাণ করে যে, সংঘবদ্ধ আন্দোলন সবসময়ই পরিবর্তন আনতে পারে। বাংলাদেশ, সিরিয়া বা অন্য যে কোনো দেশে জনগণের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজের শক্তি সম্পর্কে সচেতন হওয়া। জনগণের ঐক্য এবং সক্রিয় অংশগ্রহণই বড় কোনো পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি।
সিরিয়ার ক্ষেত্রে, গণমানুষের এই বিজয় বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এটি কেবলমাত্র একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতন নয়; বরং এটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা, যেখানে জনগণ বুঝতে পারছে যে বিদেশি শক্তি বা স্থানীয় দমনমূলক শাসনব্যবস্থা তাদের ইচ্ছাশক্তির সামনে টিকতে পারে না।
বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, সিরিয়ার এই বিজয় বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। আমাদের ইতিহাসেও এমন মুহূর্ত এসেছে যখন জনগণের শক্তি শাসকদের উৎখাত করেছে। তবে কেবল একটি স্বৈরশাসকের পতনই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন সুসংগঠিত বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করা, যারা ন্যায়পরায়ণ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম।
সিরিয়ার ঘটনা থেকে শিখতে হবে, ক্ষমতার লড়াইয়ে শুধু শাসক উৎখাতই চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। বরং একটি কার্যকর ও জনগণের প্রতি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকা অপরিহার্য।
নারীর ভূমিকা ও ভবিষ্যতের নেতৃত্ব
স্বৈরাচার বিরোধী যেকোনো লড়াইয়ে নারীদের ভূমিকা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস সাক্ষী, নারীরা যখন সচেতন ও সক্রিয় হন, তখন সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আসে। ভবিষ্যতের নেতৃত্বে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশের পূর্বশর্ত।
গণজাগরণ বিশ্বব্যাপী অনুপ্রেরণা জোগাবে
সিরিয়ার জনগণের বিজয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে। এটি বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে, জনগণের সম্মিলিত ইচ্ছার কাছে কোনো শাসনব্যবস্থাই নিরাপদ নয়। এ বিজয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও গণমানুষের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করবে।
সিরিয়ার স্বৈরাচারের পতন একটি স্মরণীয় অধ্যায়। এটি একদিকে যেমন জনগণের শক্তি ও সাহসিকতার উদাহরণ, অন্যদিকে এটি নতুন একটি দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়—বিজয়ের পরে যেন ন্যায়, সাম্য ও স্থায়িত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায়। বাংলাদেশসহ যেকোনো দেশে জনগণের ঐক্যই বড় পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি।
সিরিয়ার জনগণের বিজয়কে সেলিব্রেট করার সময়। এ বিজয় আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা, একটি নতুন শুরুর সম্ভাবনা এবং গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার বার্তা।
লেখক : কলামিষ্ট, সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ
যাযাদি/ এস