শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু : বিএনপির নতুন ভাবনা

হাসান মোল্লা
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:১৬
ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু : বিএনপির নতুন ভাবনা

মার্কিন ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু হওয়ায় বিএনপির আন্দোলনের ছক পরিবর্তন হচ্ছে। আগামী ৫ অক্টোবর পরবর্তী আন্দোলন যতটা তীব্র করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, এর চেয়ে কঠোর করার ছক সাজানো হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে কীভাবে চূড়ান্ত আন্দোলনের সফলতা পাওয়া যায়, তা ঠিক করতে সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে কাক্সিক্ষত ফল না পাওয়ায় হতাশ ছিল দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কয়েকদিন আগেও পরিস্থিতি উত্তরণের পথ খুঁজছিল দলটি। মার্কিন ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু হওয়াতে প্রেক্ষাপট পরিবেশ পরিচিতি বদলেছে। এর ফলে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। এই প্রেক্ষাপটে চলমান আন্দোলন আরও জোরদার করার বিষয়ে দলের ভেতর আলোচনা হচ্ছে। আগামী ৫ অক্টোবর চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরও আরও শক্ত কর্মসূচি আসতে পারে।

সূত্র মতে, চলমান আন্দোলন আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এরপরই আসবে মার্কিন প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। ঢাকা সফরে তাদের মনোভাব বুঝার বিষয়ও আছে বিএনপির। এসব বিষয় বুঝে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ ধাপের কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২৮ জুলাই ঢাকা মহাসমাবেশ ঘিরে যে ধরনের রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয়েছিল, মার্কিন ভিসানীতির প্রেক্ষাপটে আগামী মাসের মাঝামাঝিতে সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হবে।

দলের মধ্য সারির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, সরকার অক্টোবরের শেষে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। তাই এমনিতেই আগামী মাসের মাঝামাঝিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ ধাপের কর্মসূচি নিয়ে দলের ভেতর আলোচনা চলছে। ভিসানীতি প্রয়োগের খবরে সেই কর্মসূচি আরও শক্তভাবে পালনে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবেন। সঙ্গত কারণে, অক্টোবরের মাঝামাঝিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকা ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের বিষয়ে পূর্বের প্রস্তাবের পাশাপাশি আরও কঠোর কর্মসূচির বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

সম্প্রতি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী দাবি আদায়ে প্রয়োজনে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

আর ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু হওয়ার ঘোষণার পর দলের অবস্থান ও আন্দোলনের গতি প্রকৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভিসানীতি প্রয়োগ হওয়ার জন্য সরকার দায়ী। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে যেভাবে ভিসানীতি প্রয়োগ করে থাকে, সেভাবে বাংলাদেশেও করেছে। বৃহৎ গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভিসানীতি প্রয়োগের পর সরকার কী করবে, তা তাদের ওপর নির্ভর করছে। আমরা আমাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আন্দোলন আরও তীব্র করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করব।’

প্রথমে র‌্যাব এবং এর সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা, পরে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি, এরপর কংগ্রেসম্যান ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের চিঠি, এর বাইরে মানবাধিকার নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার একের পর এক বার্তা আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। সারা বিশ্ব যে বাংলাদেশের নির্বাচনের ওপর কড়া নজর রাখছে, সেটি কেবল ঢাকাস্থ বিদেশি দূতদের কথাতেই নয়, বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে মুখপাত্রদের কথাতেও স্পষ্ট। এবার ভিসানীতি প্রয়োগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ক্ষমতাসীনদের আরও বেকায়দায় ফেলবে বলে বিএনপি নেতারা মনে করে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া-বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি এটুকু বলতে পারি যে, এই নীতি ঘোষণা করার পর থেকে সার্বিক ঘটনা খুব কাছ থেকে আমরা দেখেছি। সাক্ষ্য-প্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি। এই নীতির উদ্দেশ্য হলো, সহিংসতা কমানো এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করেÑ এমন যে কোনো কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের গঠনমূলক অংশীদার হওয়া।’

এই বক্তব্য টেনে কূটনীতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রাখেন এমন এক বিএনপি নেতা বলেন, লু’র বক্তব্যে স্পষ্ট, তারা প্রমাণ পাওয়ার পর পদক্ষেপ নিয়েছেন। সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম এসেছে বলে জানানো হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের বাধা হিসেবে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিএনপি যে অভিযোগ করে আসছিল, তা সত্যি বলে মানছে যুক্তরাষ্ট্র।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন কোনো দেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে তখন তা দিন দিন কঠোর হয়। তাই ভিসানীতি প্রয়োগই শেষ কথা নয়। এরপর আরও বড় ধরনের পদক্ষেপও আসতে পারে। তখন দেশে নানা ধরনের সংকট তৈরি হবে। অর্থনৈতিকভাবে দৈন্যদশার মধ্যে পড়বে দেশ। দুঃখজনক বিষয়ক হলো, সরকারের যে কোনো উপায়ে ক্ষতায় থাকার স্বৈরাচারী মনোভাব সারা দেশের মানুষকে ভোগাতে শুরু করেছে।

এ নিয়ে দলের নেতাদের ভাবনা প্রসঙ্গে বিএনপি নেতাদের মত হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে যাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করছে, তাদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত আছেন। তবে বিএনপি নেতারা নিজেদের ঝুঁকিতে রাখতে চাচ্ছেন না। তাদের বিশ্লেষণ, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন, তাদের ওপর এই ভীতি বিশেষভাবে প্রযোজ্য হওয়ার কথা। বাংলাদেশে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কারা বাধা তা দেশি-বিদেশি সবারই জানা।

তাদের মতে, বিএনপি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে, দলের বেশ কয়েকজন কর্মী প্রাণও দিয়েছে। আইনশৃঙ্খল রক্ষাকারী বাহিনী কাদের ওপর নির্যাতন ও মামলা দিচ্ছে, তাও স্পষ্ট। আর বিরোধী রাজনীতিতে শুধু বিএনপি নয়, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতসহ আরও অনেক রাজনৈতিক দল আছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে