চট্টগ্রামের পটিয়ায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের কান্ডারী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে পটিয়ার সর্বস্তরের জনগণ বীরোচিত সংবর্ধনা দিয়ে সন্মান দেখিয়েছে। বিপরীতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা বিগত ১৫ বছর ধরে স্হানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী এবার নানা সমালোচনার পড় দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর নাগরিক কমিটির ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হওয়ায় ঘোষণায় তৃনমূল নেতাকর্মীদের মাঝে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
তার সাথে আছেন জাতীয় পার্টি, বিএনপি জামায়াতের দলছুট হাতে গুনা কিছু নেতাকর্মী। মূলত এতো বছর ধরে ভাই লীগ, আত্মীয় লীগ, এমপি লীগ, চেয়ারম্যান লীগের নামে চলা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যারা চলছিল তারাই কেবল আছে তার সাথে।
তারা বলছেন, পটিয়া আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তৃনমুল নেতাদের আধিপত্য বেশি। ফলে তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের প্রয়াসও বেশি। অন্তর্দলীয় কোন্দল আর ক্ষমতার লড়াইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শত্রু এখন খোদ আওয়ামী লীগই! সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ সময়ে মাঠ পর্যায়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলার নেতা এবং তাদের সমর্থকেরা নানা সংঘাত সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ার আশংকা প্রকাশ করছেন। সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচিত করে তারা ঘরে ফিরে যাবেন, তার আগে এমনটাই বলেছিলেন তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এ নীতিনির্ধারক আরো বলেন, একটা বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে গ্রুপিং থাকে। এটা যাতে সামনে নির্বাচনে প্রভাবিত না হতে পারে সেজন্য আমরা সবসময় চেষ্টা চালাচ্ছি। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা কাজ করছি। গণতন্ত্রে ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন মত থাকবেই। তবে, যখন কোনো বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত হয়ে যায় তখন সেই সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।
অপরদিকে তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, এমপি এলাকায় নিজেকে রাজা মনে করেন। তার বিপক্ষে অবস্থান নিলে বা মতের মিল না হলেই নেতাকর্মীদের ওপর চলে হামলা-মামলা। এমন দ্বন্দ্বে সংঘর্ষ, এমনকি গোলাগুলির ঘটনাও ঘটছে। বিষয়টি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার টেবিলেও পৌঁছেছিল। তৃণমূলের কোন্দলের চিত্র দেখে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, বিস্মিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাশ বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রার্থী থাকবেই। স্বাধীনতার পক্ষের দল, যে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু-তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা, সেই দলে একাধিক প্রার্থী থাকবেন এটা অস্বাভাবিক কিছু না, স্বাভাবিক। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মনোনয়ন বোর্ড যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কাজ করবেন। এটাই আমাদের বিশ্বাস। নির্বাচনকে সামনে রেখে যে গ্রুপিংয়ের কথা বলছেন, তা থাকবে না। এটা জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ক্ষমতার পালাবদলের নির্বাচন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় দেখতে চান। যে সংকটের কথা বলছেন সেটা থাকবে না।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, সামশুল হক চৌধুরী এমপি যুবদল, জাতীয় পার্টির রাজনীতি করে এসে আওয়ামী লীগের এমপি হলেও তার মনমানসিকতায় এখনো পর্যন্ত আওয়ামী লীগ হতে পারেনি। তিনি ৩ বারের সাংসদ হয়ে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তারপরও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার দৃষ্ঠতা খুবই দুঃখ জনক। তিনি এমপি হয়ে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে নেতৃত্ব থেকে বিতাড়িত করে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। বিএনপি জামায়াত জাতীয় পার্টি থেকে এনে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেছেন। পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও গত ১৫ বছরে পটিয়ায় একটি দলীয় কার্যালয় গড়ে তুলেনি।
জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম নবী বলেন, বিভিন্ন দল থেকে ঘুরে আসা শামশুল হক কখনো ক্ষমতার বাহিরে থাকতে চায়না, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে তিল তিল করে গড়ে উঠা দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে যখন নৌকা প্রতিকে এমপি নির্বাচনের জন্যে মনোনয়ন দিয়েছেন, তখন এই বিভিন্ন দল খেকো শামশু নিজেকে দর দামে তুলে সরকার হতে ভবিষৎ নিশ্চয়তা প্রাপ্তির আশায় সতন্ত্র নির্বাচন করবে বলে বলছে। সে যদি স্বতন্ত্র নির্বাচন করে তবে তাকে পটিয়ার নির্যাতিত আওয়ামী পরিবারের তৃণমুলই জনগনকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করবে বলে আমার বিশ্বাস। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই এক ও অভিন্ন। যারা বিদ্রোহ করে তারা সবসময় ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। বড় দল হিসেবে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন, পাবেন কিন্তু একজনই। দলের প্রতি যাদের কমিটমেন্ট আছে, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেন, বিশ্বাস করেন, লালন করেন তারা কখনও বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন না।
পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও দক্ষিণ ভূষি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছৈয়দ চেয়ারম্যান বলেন, আমাকে দুইবার দলীয় মনোনয়ন দেইনি ইউপি নির্বাচনে। কিন্তু আমি দল ও প্রতিকের প্রতি সন্মান রেখে বিদ্রোহী প্রার্থী হইনি। পটিয়া বরাবরের মতো আওয়ামী লীগের দূর্গ। দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার পক্ষে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে নির্বাচিত করব। এখন যদি কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয় তাহলে তাকে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ দাঁতভাঙা জবাব দিবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, সামশুল হক চৌধুরী তিনবারের এমপি। তিনি মাঠে ময়দানে বলেছেন নৌকা যাকে দিবে তার পক্ষে কাজ করার। এখন তিনি নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া মানে দলের সঙ্গে বেঈমানী করার সামিল। তার বুকে যদি বিন্দু মাত্র ভালোবাসা আর সন্মান থাকতো তাহলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতেন না। যত ঝড় ঝামেলা আসুক না কেন পটিয়ার মানুষ আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা লিটন বড়ুয়া বলেন, সামশুল হক চৌধুরী ভিন্ন দল থেকে এসেও আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড ব্যাবহারের ফলে তিন বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। এবার দলের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে প্রধানমন্ত্রী দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। তার বা দলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হওয়া মানে অকৃতজ্ঞের কাজ করা। দলের প্রতি নূন্যতম কৃতজ্ঞতা বোধ যদি তার থাকতো তাহলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিতেন না। তিনি গত ইউপি নির্বাচনেও নৌকা প্রতিকের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী লেলিয়ে দিয়েছিলেন। সেসময় তার পেশিশক্তি আর কালো টাকার কাছে নৌকার ভরাডুবি হয়েছিল কয়েকটি ইউনিয়নে। ঠিক সেই ভাবে এবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণার আগে পটিয়ার প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়ে তার লোকজনদেরকে এনে বসিয়েছেন। খবর পেয়েছি দুই এক দিনের মধ্যে পটিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও বদলী হচ্ছেন তার ইশারায়। আমি আশংকা করছি গত ইউপি নির্বাচনের মতো জাতীয় সংসদের নির্বাচনেও তার কালো টাকা, অনুগত প্রশাসন আর পেশিশক্তির প্রভাবে প্রভাবিত হবে।
নৌকার প্রার্থীর সমর্থনে পটিয়ায় আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা আজ বুধবার চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান নেতা মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সমর্থনে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আজ বুধবার (২৯ নভেম্বর) এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৩ টায় পটিয়াস্থ রয়েল কমিউনিটি সেন্টারে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ.ক.ম. শামসুজ্জামান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, ১৭ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বারকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
যাযাদি/ এস