পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ কর্মীদের দল আর বিএনপি মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের নিজের দলেই গণতন্ত্র নেই, আছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর মধ্যরাতে পদায়ন।
সোমবার দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের দল নয়, কর্মীদের দল। এখানে দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র আছে। এখানেই অন্য দলের সাথে আওয়ামী লীগের পার্থক্য। সেই কারণে যখনই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সাধারণ কর্মীরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আর একজন দু:খিনী মা যে পরম মমতা দিয়ে পিতৃহারা সন্তানকে আগলে রেখে মানুষ করেন, শেখ হাসিনা সেইভাবে বঙ্গবন্ধুহীন আওয়ামী লীগকে সুসংহত রেখেছেন।
অন্যদিকে বিএনপি মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু তাদের নিজের দলেই গণতন্ত্র নেই, তাদের জন্মটাই অগণতান্ত্রিকভাবে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, 'বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চলে, সেখানে সিদ্ধান্ত আসে দেশের বাইরে থেকে, পদায়ন-মনোনয়ন হয় রাতের আঁধারে। আর পত্রিকায় 'মহাসচিবের খোঁজে বিএনপি' শিরোনাম আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কান্নার ছবি ছাপা হয়। যদিও তারা বলে, মির্জা ফখরুল সাহেবের কান্না বেগম জিয়ার অসুস্থতার জন্য, কিন্তু আমরা জানি, বেগম জিয়া তো দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ।'
'আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরের পথচলায় যে সব নেতা বেসুরে কথা বলেছেন, দল ছেড়ে চলে গেছেন, তারা রাজনীতি থেকেও হারিয়ে গেছেন, এটিই রাজনীতির শিক্ষা' উল্লেখ করেন ড. হাছান।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের পর জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা করেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেই দ্বিধাবিভক্তি থেকে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করে সুসংযত করেছেন, গত ৪৩ বছর ধরে দলকে অসামান্য নেতৃত্ব দিয়ে পরপর চারবারসহ পাঁচবার রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে গেছেন। দেশকে বিশ্বের বুকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছেন।
এ সময় দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে কাউকে যেন 'ইনোসেন্ট ভিক্টিম' বা কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা না হয় সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, 'অবশ্যই গণমাধ্যমে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হবে। আমাদের সরকারের নীতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস হিসেবে যদি ধারাবাহিকভাবে সংবাদ পরিবেশিত হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেটি ষড়যন্ত্রের অংশ। এবং ইনভেস্টিগেশনের আগেই গণমাধ্যমের সামনে কাউকে দুর্নীতিবাজ বলা সেটিও সমীচীন নয়।'
ড. হাছান বলেন, 'অবশ্যই দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হবে এবং সেটি দুর্নীতি দমনে সহায়ক। কিন্তু কেউ যেন 'ইনোসেন্ট ভিক্টিম' না হয় এবং কোনো প্রতিষ্ঠানকে যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না করা হয় সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।'
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি ও স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী ডা. অরূপ রতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানার সঞ্চালনায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারক আলী শিকদার, এম এ করিম, স্বাধীনতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন টয়েল, কণ্ঠশিল্পী এস ডি রুবেল, সাংবাদিক মানিক লাল ঘোষ, সমীরণ রায় প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে লিউ জিয়ানচাও এর সাক্ষাৎ : এ দিন অপরাহ্নে চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও (Liu Jianchao) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে সাক্ষাত করেন। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এ সাক্ষাতকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন (Yao Wen) ও দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরের প্রাক্কালে বাংলাদেশ সফরে আসা চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান লিউ জিয়ানচাওয়ের সাথে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন সহযোগী চীনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে রপ্তানি বৃদ্ধি, ওষুধ, সিরামিক, চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্র প্রসার, চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অবকাঠামো নির্মাণ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি দেশে আশ্রিত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে চীনের কার্যকর ভূমিকা বৃদ্ধির জন্য আহবান জানানো হয়েছে।
লিউ জিয়ানচাও সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চীন সফরে স্বাগত জানাই। বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অবকাঠামো নির্মাণে আরও সহযোগিতা দিতে চীন প্রস্তুত।
ইতালির পররাষ্ট্রসচিবের সৌজন্য সাক্ষাৎ: বিকেলে বাংলাদেশ সফররত ইতালির পররাষ্ট্রসচিব রিকার্ডো গুয়ারিগ্লিয়া (Riccardo Guariglia) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী প্রথম পশ্চিম ইউরোপের দেশ হিসেবে ইতালির ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। একইসাথে বাংলাদেশের সাথে ইতালির দ্বিতীয় পলিটিক্যাল কনসালটেশনে কো-চেয়ার হিসেবে যোগ দিতে আসা ইতালির পররাষ্ট্রসচিব রিকার্ডো গুয়ারিগ্লিয়াকে স্বাগত জানান।
যাযাদি/ এম