রাজধানীর হাতিরঝিলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম ওরফে তামিম (৩৪) হত্যার ঘটনায় রাসেল নামের আরও এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলমকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার সকাল ১০টার দিকে তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. রুহুল কবির খান বলেন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে রাসেলকে শনাক্ত করা হয়। তিনি সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে প্লিজেন্ট প্রোপার্টির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ রবিউল আলমকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। শেখ রবিউল বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য।
বিএনপি নেতা রবিকে দলের ‘শোকজ’
এদিকে দীপ্ত টেলিভিশনের কর্মকর্তা তানজিল হাসান তামিম হত্যা মামলায় নাম আসার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবিকে কারণ দর্শনোর চিঠি দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।
রবির কাছে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা কারণ দর্শানোর ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপির দপ্তর।
শনিবার দলের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘চিঠি অলরেডি চলে গেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রবিকে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে। আজকেই সেই সময়সীমা শেষ হবে।’
রামপুরায় ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তা তানজিল জাহান তামিমকে হত্যার ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তার পরিবার। এর মধ্যে তিন নম্বর আসামি বিএনপি নেতা রবি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. রুহুল কবির খান বলেন, ‘এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মামুন এবং বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম রবির প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে তাদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তামিম দীপ্ত টেলিভিশনের সম্প্রচার কর্মকর্তা ছিলেন। মহানগর আবাসিক এলাকার চার নম্বর রোডের ডি-ব্লকের একটি বাড়ির আট তলার ফ্ল্যাটে তিনি থাকতেন। বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাড়ি থেকে তামিমকে উদ্ধার করে মনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ঘটনায় আবাসন নির্মাতা কোম্পানির এক প্রকৌশলীসহ চারজনকে আটক করার কথা এর আগে জানিয়েছিলেন ডিএমপির মোহাম্মদপুর-তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার রুহুল কবীর খান।
হাতিরঝিল থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেছেন, মহানগর প্রজেক্টের ওই বাড়ির জমির মালিক তামিমের বাবাসহ মোট তিনজন। তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে ওই বাড়িতে ঢোকেন ডেভেলপার কোম্পানির ‘প্লেজেন্ট প্রোপার্টিজ’ এর লোকজন। তাদের সঙ্গে বহিরাগত কয়েকজন ছিলেন। তারা ল্যান্ড ওনারদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন।
তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তারা তামিমের বুকে কিলঘুষি দেন। এরপর তার গলা টিপে ধরেন। তামিম অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়দের কয়েকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
রবির বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো জমির মালিককে প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেডের মাধ্যমে পাঁচটি ফ্ল্যাট দেওয়ার চুক্তি থাকলেও, তারা দুটি হস্তান্তর করেছে এবং বাকি তিনটির মধ্যে একটি ফ্ল্যাট অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার শ্বশুরের কাছে বিক্রি করে দেন তিনি। ওই ফ্ল্যাটটি তারা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিল, যা নিয়ে গত তিন বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল।
যাযাদি/ এস