শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি

যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৫
জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক ময়দানে উত্তাপ বাড়ছে।

বিশেষ করে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক পদ্ধতি’ বা পিআর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান sharply বিভক্ত।

বিএনপি এই পদ্ধতির কড়া বিরোধিতা করলেও, জামায়াতসহ ইসলামপন্থি অনেক দল এতে দৃঢ় সমর্থন দিচ্ছে। বিষয়টি জাতীয় ঐকমত্য গঠনের চেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে।

দলগুলোর অবস্থান: পক্ষে কে, বিপক্ষে কে?

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৫৫টি। এর মধ্যে ৫০টি সক্রিয়ভাবে নিবন্ধন বহাল রেখেছে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ বেশির ভাগ দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

পিআরের পক্ষে থাকা দলগুলোর মধ্যে রয়েছে: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, কল্যাণ পার্টি, এনপিপি, তৃণমূল বিএনপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেসসহ প্রায় ২৬ টি দল।

অন্যদিকে বিএনপি, এলডিপি, জেএসডি, গণফোরাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বিএনএম, নাগরিক ঐক্যসহবহু দল পিআরের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে অথবা আংশিকভাবে সমর্থন জানিয়েছে—বিশেষ করে নিম্নকক্ষে প্রচলিত পদ্ধতি রেখে উচ্চকক্ষে পিআর চালুর পক্ষে।

ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট পিআর পদ্ধতির পক্ষে।

অন্যদিকে ইসলামিক ফ্রন্টের একটি অংশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে।

খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্যজোট এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।

২৮ জুন ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত মহাসমাবেশে পিআর পদ্ধতির পক্ষে একজোট হয়ে বক্তব্য দেন ডানপন্থি ১০টি দল। তারা হুঁশিয়ারি দেয়—পিআর ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া: "নির্বাচন পিছিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র"

বিএনপির শীর্ষ নেতারা এই দাবিকে ‘নির্বাচন পেছানোর কৌশল’ হিসেবে দেখছেন।

মির্জা আব্বাস বলেছেন, “একটি গোষ্ঠী কু-পরামর্শ দিয়ে জাতিকে ধ্বংস করতে মাঠে নেমেছে।” আমীর খসরু বলেন, “গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে এই প্রস্তাব জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে, সরকার গঠনের পর আলোচনা হতে পারে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, লন্ডনে তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের বৈঠকের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন আন্দোলন জোটে কিছুটা ফাটল তৈরি হয়, যার সুযোগ নিয়েই ইসলামপন্থি দলগুলো নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ছে।

পিআরের পক্ষে যুক্তি: নির্বাচন হোক অংশগ্রহণমূলক

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে দলভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়, যা কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের সুযোগ কমায়।”

ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলেন, “এই পদ্ধতি ফ্যাসিস্ট শাসন ঠেকানোর উপযোগী, এতে জবাবদিহিতা বাড়ে।”

মামুনুল হক পিআরের আংশিক বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেন—নিম্নকক্ষে আংশিক পিআর, উচ্চকক্ষে পূর্ণ পিআর।

অন্যদিকে মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকি উচ্চকক্ষে পিআরের বাস্তবায়নের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন।

পিআর পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক মেরুকরণ আগামী নির্বাচনের গতি-প্রকৃতি পাল্টে দিতে পারে।

ইসলামপন্থি দলগুলোর একত্রীকরণ এবং বিএনপির সঙ্গে তাদের মতভেদ নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

এ অবস্থায় পিআর একটি নির্বাচনী পদ্ধতি নয়, হয়ে উঠছে রাজনৈতিক অবস্থান ও কৌশলেরও প্রতীক। তাই আগামীর ভোট যুদ্ধ শুধু ব্যালটের নয়, পদ্ধতিরও হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে