বিশ্বকাপের ব্যর্থ মিশন শেষ করে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই ম্যাচ সিরিজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ঘরের মাঠে তাদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। আগামী মঙ্গলবার সিরিজের প্রথম টেস্টে মুখোমুখি হবে দুই দল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রে পা রাখছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের এই সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ দল এখন অবস্থান করছে সিলেটে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে ছাড়াই মাঠে নামছে টাইগাররা। তাই ঘরের মাঠের এই সিরিজকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। চোটের কারণে নেই সাকিব আল হাসান। মাঠে নামার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত নন তামিম ইকবালও। পারিবারিক কারণে ছুটিতে আছেন লিটন দাস। তাছাড়া চোটে ছিটকে গেছেন দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও এবাদত হোসেন। অপেক্ষাকৃত তরুণদের নিয়ে টেস্ট সিরিজে নামতে হচ্ছে টিম বাংলাদেশকে। সব মিলিয়ে মুশফিক ও মুমিনুলকে বাদ দিলে বাংলাদেশ স্কোয়াডে অনভিজ্ঞতার ছড়াছড়ি।
বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফেরার পর গতকালই প্রথম সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন টাইগারদের প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে। রোববার সিলেটে ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মলনে বাংলাদেশের প্রধান কোচ বলেন, ‘এ ধরনের অভিজ্ঞতা মিস করাটা চ্যালেঞ্জিং, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য। কারণ এই ছেলেরা সব ফরম্যাটে কেউ ১৫ বছর, কেউ ১০ বছর ধরে আছে। এটা হচ্ছে একটা দিক। আরেকটা দিক হচ্ছে তরুণরা কী করতে পারে, তা দেখার একটা সুযোগ এটা।’
সাকিব-তামিমের মতো অভিজ্ঞদের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব নিতে হবে তরুণদের। এটা যেমন চ্যালেঞ্জিং ঠিক তেমনি তাদের জন্য নিজেকে প্রমাণের সুযোগও। তাই তরুণদের নিয়ে আশাবাদী কোচ। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় অনেকদিন ধরে খেলছে এমন ক্রিকেটারদের সরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় এটা। তারা সারাজীবন থাকবে না। এখন নেই নানা কারণে। এটা রোমাঞ্চকর তরুণ কয়েকজন ক্রিকেটারের জন্য, তাদের নাম জানাতে ও লম্বা ক্যারিয়ারের শুরু হতে পারে এখানে।’
নাজমুল হোসেন শান্তকে এই দলের অধিনায়ক করা হয়েছে। মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, সাদমান ইসলামরা জাতীয় ক্রিকেট লিগে ভালো খেলেছেন। মুশফিক, শান্ত বিশ্বকাপ থেকে ফেরার পর এক রাউন্ডের ম্যাচ খেলেছেন। এছাড়া খালেদ, শাহাদাত, হাসান মুরাদরা, নাঈম হাসানরা রয়েছেন ছন্দে। মুমিনুল হক অপেক্ষায় ভালো কিছু করার। জাতীয় লিগে খেলোয়াড়রা খেলায় প্রস্তুতিতে সন্তুষ্টির আভাস মিলল হাথুরুসিংহের কথায়, ‘যারা বিশ্বকাপ খেলেছে তাদের জন্য আমরা এনসিএলকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। প্রস্তুতির জন্য তারা এনসিএলের শেষ রাউন্ড খেলেছে। বেশিরভাগ ব্যাটারই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। বাকিদের মাঝে বেশিরভাগই এনসিএল খেলছিল। দেখুন, এটা দেখতে প্রায় নতুন বাংলাদেশের মতো। জোর করে এমন কিছু করা হয়নি। কিছু ইনজুরির কারণে এমনটা হয়েছে। আমরা যতটা পারি ততটা প্রস্তুত। সত্যি বলতে টেস্ট সিরিজের জন্য আমি মুখিয়ে আছি।
তাসকিন ও এবাদতকে নিয়ে হাথুরু বলেন, ‘ওরা (তাসিকন ও এবাদত) আমাদের সেরা বোলার। কিন্তু একই সঙ্গে এটা অন্যদের জন্য সামনে এগিয়ে আসার সুযোগও। আমরা একই সেটের বোলার দিয়ে অনেক পথ পাড়ি দিতে পারব না। ওদের না থাকা খালেদ, শরিফুল, হাসানদের জন্য সুযোগ; ও (হাসান) এখনো টেস্ট খেলেনি। যদি তারা খেলার সুযোগ পায়, নিজেদের চেনানোর দারুণ সুযোগ হবে এটা তাদের জন্য।’
টেস্টে অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন তরুণ স্পিনার হাসান মুরাদ। যুব বিশ্বকাপ জিতে আসা এই ক্রিকেটার এখন আছেন জাতীয় দলের অভিষেকের অপেক্ষায়। আসন্ন এই সিরিজে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন স্পিনার হাসান মুরাদ। তবে তার কাছে বাড়তি কোনো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই হাথুরুর। জানিয়েছেন মুরাদের কাছ থেকে তার স্বাভাবিক খেলাটাই প্রত্যাশা, ‘হাসান মুরাদের কাছে আমার বার্তা থাকবে, এক্স ফ্যাক্টর হতে হবে না। গত ২ এনসিএলে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছ। ওখানে যা করেছ, এখানেই তাই করো।’
২০২০ যুব বিশ্বকাপজয়ী হাসান মুরাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ২০২১ সালে। এখন পর্যন্ত ২৫ ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ১২১ উইকেট। এবার লাল বলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট রাঙানোর অপেক্ষায় আছেন এই ২২ বছর বয়সি। এর আগে যুব বিশ্বকাপে মুরাদ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন মোটে দুই ম্যাচে। সেই বিশ্বকাপে দুই উইকেট শিকার করতে পেরেছিলেন তিনি।
হাসান মুরাদ ছাড়াও দলে স্পিনারের অভাব নেই। মেহেদি হাসান মিরাজ আর তাইজুল ইসলাম আছেন দলের অংশ হয়ে। সিলেটের এই টেস্টে স্পিনারদের ভূমিকা বেশি দেখছেন হাথুরুসিংহে, ‘তাইজুল ও মিরাজ অনেক অভিজ্ঞ। তাইজুলের সম্ভবত ২০০টা টেস্ট উইকেট আছে। অবশ্যই সে লিড করবে, সাথে মিরাজ আছে। তরুণ মুরাদ, নাঈম হাসান আছে। আমি মনে করি, এই কন্ডিশনে স্পিনাররা বড় ভূমিকা পালন করবে।’
এদিকে মুরাদকে টেস্ট দলে যুক্ত করার পরে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘একদম নতুন হাসান মুরাদকে দলে নিয়েছি। গত দুই বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ও যথেষ্ট ভালো বোলিং করেছে। হাই পারফরম্যান্সে যথেষ্ট ভালো কাজ করেছে।’
একাধিক অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সঙ্গে তরুণ ক্রিকেটারদেরও স্কোয়াডে রেখেছেন হাথুরুসিংহে। সবাইকেই যে খেলার জন্য ডাকা হয়েছে তেমনটা নয়। দলের আবহ বোঝার জন্য তাদের সঙ্গে রেখেছেন টিম ম্যানেজমেন্ট, ‘না তারা টেস্টের জন্য বিবেচিত হবে না। তারা এখানে এসেছে কারণ আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি তারা আমাদের পরবর্তী বেস্ট বোলার। তারা এনসিএলে ভালো করেছে। আমরা তাদের জাতীয় দলের সেটআপে চেয়েছি। কারণ, তাদের জানা দরকার জাতীয় দল কীভাবে চলে। তারা আজকে আমাদের সঙ্গে টিম মিটিংয়ে বসবে এবং জানবে কীভাবে টিম মিটিং হয়। তারা আমাদের জন্য বোলিং করবে (নেটে)। কারণ এনসিএল এবং বিসিএলের মাঝে অনেক গ্যাপ। আমরা এই সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।’
যাযাদি/ এস