পাকিস্তানের নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। দেশটির কিংবদন্তি অফ-স্পিনিং অলরাউন্ডার সানা মীর আইসিসি হল অব ফেমের মতো মর্যাদাপূর্ণ স্থানে জায়গা করে নিলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি মাত্র ১৪ জন নারী ক্রিকেটারের অভিজাত তালিকায় প্রবেশকারী প্রথম পাকিস্তানি নারী ক্রিকেটার হলেন।
শুধু তাই নয়, ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, জাভেদ মিয়াদাদ, আব্দুল কাদির, জাহির আব্বাস, ওয়াকার ইউনুস এবং হানিফ মোহাম্মদের মতো সাতজন পুরুষ কিংবদন্তির পর সানা অষ্টম পাকিস্তানি হিসেবে এই অনন্য সম্মান অর্জন করলেন।
২০০৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সানা মীর ছিলেন পাকিস্তান নারী ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। একজন অসাধারণ অফ-স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলের ভরসা ছিলেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তিনি টানা আট বছর পাকিস্তান নারী ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে পাকিস্তান ২০১০ ও ২০১৪ সালের এশিয়ান গেমসে দু'টি স্বর্ণপদক জয়লাভ করে। এছাড়া, তার অধিনায়কত্বেই দল পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং দু'টি ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশ নেয়, যা পাকিস্তানের নারী ক্রিকেটের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
সানা মীরের ক্যারিয়ার জুড়েই রয়েছে অনেক রেকর্ড। ২০১৮ সালে তিনি আইসিসি ওডিআই বোলিং র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে উঠে এসেছিলেন, যা আজ পর্যন্ত একমাত্র পাকিস্তানি নারী ক্রিকেটার হিসেবে তারই একার কৃতিত্ব। একদিনের আন্তর্জাতিক (ওডিআই) ক্রিকেটে ১৫১ উইকেট নিয়ে তিনি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি নারী ক্রিকেটার। একই সঙ্গে, ১০০টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা প্রথম এশিয়ান নারী হওয়ার গৌরবও তার।
২০১৭ সালের বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তার ৫/১৪ বোলিং ফিগার পাকিস্তানকে সুপার সিক্সে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, যা তার এক স্মরণীয় পারফরম্যান্স। এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম ওয়ানডে জয়টিও এসেছিল তার অধিনায়কত্বেই।
আইসিসিকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় সানা মীর নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, "একসময় আমি স্বপ্ন দেখতাম—আমাদের দেশে কখনো নারী ক্রিকেট দলই থাকবে কিনা! আজ আমি সেই স্বপ্নের ঊর্ধ্বে উঠে দাঁড়িয়েছি, তাদের পাশে যাদের পোস্টার আমি ছোটবেলায় ঘরে টানিয়ে রাখতাম। এই সম্মান আমার কল্পনারও বাইরে ছিল। আমি আইসিসির প্রতি কৃতজ্ঞ এবং আমার কোচ, সতীর্থ ও পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই—তাদের সমর্থন ছাড়া আমি কখনোই এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না।"
ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার পর সানা মীর নিজেকে নারী খেলোয়াড়দের অধিকার, মানসিক স্বাস্থ্য এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের সমান অংশগ্রহণের পক্ষে কাজ করার জন্য নিয়োজিত করেছেন। একজন খেলোয়াড়, নেতা এবং সমাজ সচেতন কণ্ঠ হিসেবে সানা মীর সত্যিকার অর্থেই পাকিস্তানি ক্রীড়াঙ্গনের গর্ব। তিনি শুধু পাকিস্তানের নয়, বরং বিশ্বের কোটি কিশোরী মেয়ের কাছে এক বড় অনুপ্রেরণা।