রোববার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২
মাস্ক পরে জনসম্মুখে

করোনা বশে আনল ট্রাম্পকেও

এর আগে প্রকাশ্যে মাস্ক পরতে রাজি হননি মার্কিন এ প্রেসিডেন্ট সব রেকর্ড ভঙ্গ : যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে ৬৯ হাজার রোগী
যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:১৬
করোনা বশে আনল ট্রাম্পকেও
মাস্ক পরিহিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

করোনার প্রাণঘাতী থাবায় সারাবিশ্ব যখন বিপর্যস্ত, তখনো একবিন্দু টলেননি, বরং গণমাধ্যমে একের পর এক 'উদ্ভট' ব্যাখা নিয়ে হাজির হয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন একগুঁয়ে এবং একরোখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যখন সবাইকে মাস্ক পরার নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে সময়ও নিয়ম মানার ক্ষেত্রে ছিলেন উদাসীন। তবে শনিবার প্রথমবারের মতো এই স্বাস্থ্যগত নির্দেশনা মেনেছেন ট্রাম্প। এদিন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির কাছে ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টারে আহত সেনা ও যুদ্ধক্ষেত্রের স্বাস্থ্য-সেবাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে মাস্ক ব্যবহার করেছেন তিনি। সংবাদসূত্র :রয়টার্স, বিবিসি চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে মহামারির আকার নিলেও জনসম্মুখে একবারও মাস্ক পরে হাজির হননি রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট। এর আগে প্রকাশ্যে মাস্ক পরতে রাজি হননি ট্রাম্প, এটি ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় বলে দাবি করেছিলেন। তবে ভিড়ের মধ্যে অন্যদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা না গেলে তখন মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন বলে জানিয়েছিলেন। ওয়াল্টার রিড পরিদর্শনে যাওয়ার আগ মুহূর্তে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি মনে করি হাসপাতালে গেলে, বিশেষ করে আপনি যখন অনেক সেনাকর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন, সেই পরিস্থিতিতে, যেখানে কিছু ক্ষেত্রে মাত্রই তারা অস্ত্রোপচারের টেবিল থেকে এসেছে, আমি মনে করি মাস্ক পরাই সবচেয়ে ভালো।' তবে গত সপ্তাহে 'ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ক'র সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, 'আমি পুরোপুরি মাস্কের পক্ষে।' তিনি আরও যোগ করেন, মাস্ক পরলে তাকে দেখতে অনেকটা 'লোন রেঞ্জারের' মতো লাগে। উলেস্নখ্য, লোন রেঞ্জার হচ্ছেন আমেরিকান কল্পকাহিনীর একজন নায়ক, যিনি তার আদিবাসী আমেরিকান বন্ধু টোনটোর সঙ্গে মিলে পশ্চিম আমেরিকায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন। করোনাভাইরাসের বিস্তারের গতি মন্থর করতে সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তারপরও ট্রাম্পের মাস্ক ব্যবহারে অনীহায় তার নেতৃত্বের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করেন সমালোচকরা। তার প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার আহ্বান জানালেও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করার জন্য তার দেশের রাজ্যগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন ট্রাম্প। গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের 'সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল' (সিডিসি) করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সবাইকে জনসম্মুখে মাস্ক পরার সুপারিশ করে। ট্রাম্প সে সময় বলেছিলেন, 'মুখে মাস্ক পরে আমি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, স্বৈরশাসক, রাজা, রানিদের স্বাগত জানাচ্ছি- এমনটা দেখা যাবে বলে আমি মনে করি না।' যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে ৬৯ হাজার রোগী শনাক্ত এদিকে, পরপর তৃতীয় দিনের মতো যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে শনাক্ত নতুন কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৬৯ হাজার নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিন আলাস্কা, জর্জিয়া, আইডাহো, আইওয়া, লুইজিয়ানা, মনটেনা, ওহাইও, ইউটাহ ও উইসকনসিন- যুক্তরাষ্ট্রের এই ৯ রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে। দেশটির করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম 'হটস্পট' টেক্সাস। অঞ্চলটির গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট শুক্রবার বলেন, 'রাজ্য যদি মাস্ক ও সামাজিক দূরত্বের মাধ্যমে সংক্রমণের উচ্চহার নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারে, তাহলে তিনি নতুন করে লকডাউন জারি করতে পারেন।' রিপাবলিকান এই গভর্নর বলেন, 'আমরা যদি এই সেরা অভ্যাসটি রপ্ত করতে না পারি, তাহলে এটি ব্যবসা (প্রতিষ্ঠান) বন্ধের দিকে যেতে পারে।' কারাগারে কোভিড-১৯ এর বিস্তারের গতি হ্রাস করতে শুক্রবার ক্যালিফোর্নিয়া ৮ হাজার বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সান ফ্রান্সিসকোর কাছে রাজ্যটির সান কুয়েন্টিন স্টেট প্রিজনের প্রায় অর্ধেক, তিন হাজার ৩০০ বন্দির করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পর তারা এ সিদ্ধান্ত নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের যে রাজ্যগুলো করোনাভাইরাস মহামারির 'হটস্পট' হয়ে আছে, ফ্লোরিডা তার অন্যতম। দেশটির যে অল্প কয়েকটি রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে তার মধ্যে ফ্লোরিডাও আছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যটি ১২০ জনের মৃতু্যর কথা জানিয়েছিল। শুক্রবার সেখানে আরও ৯২ জনের মৃতু্য হয়েছে। এদিন সেখানে ১১ হাজার ৪৩৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা রাজ্যটির একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড থেকে একটু কম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে