শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
করোনাভাইরাস

চাপে চাকরি ছাড়ছেন বিমানচালকরা

ম যাযাদি ডেস্ক
  ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

হংকংয়ের ক্যাথে প্যাসিফিক পৃথিবীর বড় কয়েকটি বিমান সংস্থার একটি। গত সপ্তাহে সংস্থাটির তিনজন বিমানচালক (পাইলট) চাকরি হারান। কারণ, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে বিরতির সময় করোনাবিধি ভেঙে তারা হোটেল থেকে বের হয়েছিলেন। পরে পরীক্ষায় তাদের করোনা ধরা পড়ে।

ঘটনার জেরে বিমানচালকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২৭০ জনকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছিল। কোয়ারেন্টিন শেষে বেশ কয়েকজন বিমানচালক নিজেদের 'অযোগ্য' ঘোষণা করেন। ধারণা করা হয়, এত কঠোর বিধি মেনে তারা আর এয়ারলাইন্সটির চালক হিসেবে কাজ করতে চাইছিলেন না।

চীন সরকারের 'জিরো-কোভিড নীতি'র কারণেই সংক্রমণ ঠেকাতে এমন কঠোর অবস্থান ক্যাথে প্যাসিফিকের। বিশ্বের অনেক বিমান সংস্থাই যখন চালকদের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনছে, হংকং প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপে মানসিক চাপ বাড়ছে ক্যাথের বিমানচালকদের। জানা গেছে, চীনের সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা সচল রাখতেই হংকং এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

আর দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) ধরা পড়ার পর হংকং প্রশাসন এ বিষয়ে বেশ কঠোর হয়। হংকংয়ে এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটি পাওয়া গেছে।

ক্যাথে প্যাসিফিকের একজন বিমানচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'মনে হয় না, আমি এত কিছু মেনে চলতে পারব। আমার পরিবার এবং বন্ধুদের আমার কারণে কোয়ারেন্টিনে যেতে হতে পারে, এই বিষয়টি আমার মধ্যে চাপ তৈরি করছে।'

এয়ারলাইন্সটিতে চাকরিরত এবং চাকরি ছেড়ে দেওয়া কয়েকজন চালক জানান, তাদের আত্মবিশ্বাস কমে গেছে। সংস্থাটি থেকে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কর্মীর সংখ্যাও বাড়ছে। করোনা মহামারি শুরুর পর চালকদের বেতন সর্বোচ্চ ৫৮ ভাগ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। চাকরি ছাড়ার এটিও অন্যতম কারণ। মানসিক চাপের বিষয়টি অন্তত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এই সমস্যার কোনো লক্ষণ থাকলে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়াও এই বিমানচালকদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

করোনা মহামারি শুরুর পর বিমান সংস্থাটির একজন চালক হংকংয়ের বাইরে এক হোটেলে প্রায় দুইশ' দিন আটক ছিলেন। তিনি বলেন, 'আমি যদি তাদেরকে (বিমান কর্তৃপক্ষকে) বলি যে, মানসিক চাপে আছি, তাহলে কী হতে পারে?' তার মতে, মানসিক চাপের কথা বলে চাকরি ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে গেলে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসার মুখে পড়তে হবে।

করোনার বিষয়ে প্রশাসনের আরোপিত নিয়মের অস্পষ্টতার বিষয়েও হতাশ তারা। তিনি জানান, বিমানচালককে হংকংয়ে আসার পর 'অপ্রয়োজনীয় সামাজিক যোগাযোগ' এড়িয়ে চলতে হয়। বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয় না।

এদিকে, ক্যাথে কর্তৃপক্ষও বিমানচালকদের চাকরি ছাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তারা জানায়, অক্টোবরের শেষ থেকে বিমানচালকদের চাকরি ছেড়ে দেওয়া বেড়েছে।

করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে বিভিন্ন শ্রেণিতে তালিকাভুক্ত করেছে হংকং। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এবং যুক্তরাজ্যকে 'উচ্চঝুঁকি' সম্পন্ন দেশের তালিকায় রেখেছে তারা। এসব দেশ থেকে হংকংয়ে ফিরলে ক্যাথের বিমানচালকদের দুই সপ্তাহের হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়।

গত ফেব্রম্নয়ারি থেকে ক্যাথে প্যাসিফিক কর্তৃপক্ষ ফ্লাইট পরিচালনার বিশেষ তালিকা তৈরি করে। সেখানে চালকদের স্বাধীনভাবে কাজের সময়সূচি নির্ধারণের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে বিমানচালককে পাঁচ সপ্তাহ হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। এর ওপর ডিসেম্বরে কর্তৃপক্ষ কিছু ফ্লাইট বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। সব মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, চালকের ঘাটতি থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ক্যাথে প্যাসিফিক জানায়, আগামী দিনগুলোতে তারা কয়েকশ' পাইলট নিয়োগ দেবে এবং দ্রম্নতই তাদের ক্যাডেট প্রোগ্রাম চালু করবে।

এদিকে, এমিরেটস, ইউএস কার্গো ক্যারিয়ার এবং অ্যাটলাস এয়ার ওয়ার্ল্ডওয়াইডসহ অনেক বিমান সংস্থা ক্যাথের পাইলটদের চাকরি দিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি এমিরেটস এয়ারওয়েজ ৬০০ বিমানচালক নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে ক্যাথে প্যাসিফিকের চালকদের চাকরি দেওয়ার বিষয়ে এমিরেটস এবং অ্যাটলাস কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

করোনাভাইরাস ঠেকাতে এমন কঠোর নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য পরিবহণকারী প্রতিষ্ঠান 'ফেডেক্স ডট এন' হংকংয়ে অবস্থিত তাদের বিমান পরিচালনার বেইজ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির একজন বিমানচালক, যিনি সম্প্রতি হংকং ছেড়েছেন। তিনি বলেন, 'আমি ক্যাথের বিমানচালকদের বিষয়ে বেদনা বোধ করছি। আমি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বিগ্ন।' সংবাদসূত্র : রয়টার্স, ডিডবিস্নউ নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে