শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
পুতিনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

আইসিসির পদক্ষেপ সঠিক :বাইডেন

রাশিয়া-আমেরিকা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাই রাষ্ট্রীয় সফরে পুতিনকে কিছুটা বিধিনিষেধ আনতে হবে
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

যুদ্ধাপরাধের দায়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শনিবার তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধের মোকাবিলায় সঠিক এবং দৃঢ় পদক্ষেপ করেছে। কোনো সন্দেহ নেই ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় পুতিনের ভূমিকা রয়েছে।' যদিও আমেরিকা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) স্বীকৃতি দেয়নি। ইউক্রেনে রাশিয়া ব্যাপক পরিসরে যুদ্ধাপরাধে জড়িত- জাতিসংঘের তদন্ত দলের এমন অভিযোগের এক দিন বাদেই শুক্রবার এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জো বাইডেন বলেন, 'আমি মনে করি এটা (গ্রেপ্তারি পরোয়ানা) ন্যায়সঙ্গত। আমেরিকা যদিও এখন পর্যন্ত আইসিসিকে স্বীকৃতি দেয়নি, কিন্তু আমি মনে করি সামনের দিনগুলোতে এটা ব্যাপক তাৎপর্য ফেলতে পারবে।' ইউক্রেনে পুতিন যে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তা এরই মধ্যে 'পুরোপুরি স্পষ্ট' বলেও উলেস্নখ করেছেন তিনি।

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর দখল করা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন এবং দেশটির শিশু অধিকার কমিশনের কর্মকর্তা মারিয়া অ্যালেক্সিয়েভনা এলভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধে শুক্রবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। এক বিবৃতিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি জানিয়ে আইসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলগুলো থেকে শিশুদের বেআইনিভাবে রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে পুতিন ও বেলোভা জড়িত রয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এবং ওই শিশুদের রাশিয়ানদের কাছে দত্তক দিয়েছেন। যুদ্ধের সময় জোর করে কাউকে দেশান্তর করা যুদ্ধাপরাধের সামিল।

রাশিয়া ইউক্রেন থেকে ১৬ হাজারের বেশি শিশুকে নিয়ে গেছে। প্রথমে তাদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নেওয়ার কথা চিন্তা করা হলেও, এখন অনেক শিশুকে রুশ পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে তাদের ইউক্রেনে ফিরে যাওয়ার পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে, পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কোনো 'তাৎপর্য নেই' বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। শুক্রবার ওই পরোয়ানা জারির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই মন্তব্য করেন তিনি। মারিয়া বলেন, আইসিসির রোম সংবিধির অংশ নয় রাশিয়া। তাই এই আদালতের অধীনে চলার কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই।

উলেস্নখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকলেও কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই। আইসিসি যা করতে পারে, তা হলো- অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিভিন্ন দেশের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা এবং গ্রেপ্তারের পরে তাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে তার কার্যালয়ে বিচারের জন্য হাজির করা।

আইসিসি বিচারিক ক্ষমতাও শুধু সেইসব দেশে প্রয়োগ করতে পারে, যে দেশগুলো এই আদালত গঠন করতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তিটি 'রোম সংবিধি' নামে পরিচিত। রাশিয়াও এই সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি। তাই পুতিন বা মারিয়া বেলোভাকে আপাতত এই আদালতের হাতে সমর্পণের কোনো সুযোগ নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো, পুতিন রাশিয়ার মতো একটি পরাশক্তির রাষ্ট্রপ্রধান।

পরোয়ানার একটি প্রভাবই পড়বে পুতিনের ওপর

এদিকে, প্রশ্ন উঠেছে পুতিনের ওপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কি কোনো প্রভাব পড়বে? বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কার্যকরের সম্ভাবনা এখন নেই। কারণ রাশিয়ায় বর্তমানে পুতিনের একচ্ছত্র আধিপত্য চলছে। এর অর্থ, আইসিসির হাতে পুতিনকে রাশিয়া তুলে দেবে না। তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়ায় আছেন, ততক্ষণ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার কিছুই হবে না।

কিন্তু তিনি যদি রাশিয়া ছাড়েন, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এ কারণে এখন পুতিনকে তার রাষ্ট্রীয় সফরগুলোতে কিছুটা বিধিনিষেধ আনতে হবে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবং যেসব দেশে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে, সেসব দেশে যাবেন না পুতিন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার শুধু এই একটি প্রভাবই পড়বে রুশ প্রেসিডেন্টের ওপর। এ ছাড়া কোনো দেশ পুতিনকে গ্রেপ্তার করে আইসিসির হাতে তুলে দেবে, এমন কোনো সম্ভাবনাও নেই।

২০০৯ সালের দক্ষিণ সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। পরোয়ানা সত্ত্বেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন তিনি। কিন্তু কূটনৈতিক বিষয়টি বিবেচনা করে কোনো দেশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে