সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
রহস্যের গন্ধ

ভারত মহাসাগরের নিচে ৩০ লাখ বর্গ কিলোমিটারের গর্ত!

মাধ্যাকর্ষণ টানের কারণে গর্তটি তৈরি বলে দাবি বিজ্ঞানীদের
যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
এই গর্তটিকে 'গ্র্যাভিটি হোল' বলা হয়ে থাকে

ভারত মহাসাগরের নিচে বিশাল গর্ত। সমুদ্রের মেঝেতে অনেকটা এলাকাজুড়ে তার বিস্তৃতি। দীর্ঘদিন ধরেই এই গর্তটি বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের কেন্দ্রে। শ্রীলংকার ঠিক দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের নিচে এই গর্তটিকে 'গ্র্যাভিটি হোল' বা মাধ্যাকর্ষণজাত গর্ত বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টানের কারণে গর্তটি তৈরি হয়েছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।

এই মহাসাগরের 'গ্র্যাভিটি হোল'র বিস্তৃতি বিশাল। প্রায় ৩০ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই গর্তটি তৈরি হয়েছে। সমুদ্রের সবচেয়ে নিচের স্তরটির চেয়েও এই অঞ্চলটি গভীর। গর্তটিকে ঘিরে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। সমুদ্রের নিচে বিশাল অংশজুড়ে এই গর্তের কারণে অনেকের ধারণা, সমুদ্রের তলদেশ হয়তো নিচের দিকে বসে যাচ্ছে।

ভারত মহাসাগরের এই গর্ত থেকে আগামীদিনে পৃথিবীর উপরিভাগের কোনো ক্ষতি হতে পারে কি-না, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে এই গর্তের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল মহাকর্ষ বলের টানে সমুদ্রতলের কোনো অংশ নিচের দিকে বসে গেলে 'গ্র্যাভিটি হোল'র সৃষ্টি হয়। ভারত মহাসাগরের নিচেও তা হয়েছে।

কেন ভারত মহাসাগরের নিচে এই বিশাল গর্ত তৈরি হলো, তার সম্ভাব্য কারণ আবিষ্কার করেছেন দুই ভারতীয় বিজ্ঞানী। তারা বেঙ্গালুরুর ইনডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের গবেষক দেবাঞ্জন পাল ও আত্রেয়ী ঘোষ। 'জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস?' জার্নালে দেবাঞ্জন ও আত্রেয়ীর গবেষণামূলক তত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে। কেন ভারত মহাসাগরের মাঝে 'গ্র্যাভিটি হোল' তৈরি হলো, তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন তারা।

গবেষকদের দাবি, পৃথিবীর আকার একটি নিখুঁত গোলকের মতো বলে মনে করা হলেও আসলে এই গ্রহটি তেমন নয়। পৃথিবীপৃষ্ঠ কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু, কোনো অংশ একটু বেশি সমতল। ভারত মহাসাগরে তৈরি 'গ্র্যাভিটি হোল' আক্ষরিক অর্থে তেমন 'গর্ত' নয়, যা সমুদ্রের পানি কমিয়ে দেয় বা শুষে নেয়। বরং এটি ভূত্বকের একটি অসঙ্গতিপূর্ণ স্থান, যেখানে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টান অপেক্ষাকৃত দুর্বল।

গবেষকেরা কম্পিউটার মডেলের মাধ্যমে পৃথিবী পৃষ্ঠটিকে বিশ্লেষণ করেছেন। মাধ্যাকর্ষণজাত এই গর্তকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তারা। ১৪ কোটি বছর ধরে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূপ্রকৃতিগত পরিবর্তন বিবেচনা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, এই 'গ্র্যাভিটি হোল'র কারণে পৃথিবীর মহাদেশীয় এবং মহাসাগরীয় পাতগুলো কিছুটা সরে গেছে।

ভারত মহাসাগরের কেন্দ্রস্থলে দুর্বল মাধ্যাকর্ষ টানের কারণ হিসেবে ভূত্বকের নিচে পৃথিবীর ম্যান্টেল স্তরের গলিত ম্যাগমাকে দায়ী করা হচ্ছে। এই ম্যাগমাই দুই কোটি বছর আগে পৃথিবীর আকৃতি গড়ে দিয়েছিল।

ভূত্বকের নিচ দিয়ে দুই কোটি বছর ধরে বয়ে চলেছে এই তরল তপ্ত ম্যাগমা। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ম্যাগমার স্রোত যদি কখনো থমকে যায়, ভারত মহাসাগরের তলদেশে তৈরি হওয়া গর্তটিও মিলিয়ে যাবে।

বাইরে থেকে দেখে ভারত মহাসাগরের তলদেশে গর্তের উপস্থিতি বোঝা সম্ভব নয়। এই 'গ্র্যাভিটি হোল' নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা চলছে। আগামীদিনে এ বিষয়ে আরও নতুন তথ্য, নতুন ভাবনা উঠে আসতে পারে। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে