গাজা যুদ্ধের সময় কিছু কিছু ঘটনায় ইসরাইল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে। এক্ষেত্রে তারা আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে। আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্রগুলো যে ইসরাইল অসঙ্গত কারণে ব্যবহার করেছে, এটার মূল্যায়ন করা জরুরি। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, তারা কী মাত্রায় এর ব্যবহার করেছে তার বিস্তারিত তথ্য তাদের কাছে নেই। শুক্রবার কংগ্রেসে এই প্রতিবেদন পেশ করা হয়। তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা
হোয়াইট হাউসের এই পর্যালোচনায় উঠে এসেছে শুধু গাজা নয়, আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করে আরও অন্তত ছয়টি দেশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরাইল।
গাজায় পরিচালিত ইসরাইলের 'কিছু' অভিযানের সরাসরি সমালোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে, কিন্তু তার মাধ্যমে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী- আইডিএফ সেখানে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে কিনা, তা নিয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইসরাইলকে একটা সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মার্কিন অস্ত্রের আইনি ব্যবহার মেনে চলতে ইসরাইলের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল। সে কারণেই এই অস্ত্রের সরবরাহ চালু রাখতে রাজি হয়েছিল আমেরিকা। মার্কিন এই প্রতিবেদনে এটিও বলা হয়েছে যে, হামাস 'সামরিক উদ্দেশ্যে বেসামরিক অবকাঠামো এবং নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার' করেছে যুদ্ধের সময়। যুদ্ধ চলার সময় কোনটা বৈধ লক্ষ্যবস্তু, সেটা যাচাই করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে, মার্কিন অস্ত্রের ওপর ইসরাইলের অতিমাত্রায় নির্ভরতার কারণেই হয়তো তারা বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আইএইচএল বা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মানার চেষ্টা করেছিল। এতে আরও বলা হয়, বেসামরিক ক্ষতি কমানোর মতো জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও সরঞ্জাম সবই ইসরাইলের রয়েছে। এ কারণেই গাজায় স্থল অভিযানে এত হতাহতের সব ঘটনায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী সেসব সক্ষমতা ঠিক মতো ব্যবহার করছে কিনা, সেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো বেসামরিক ক্ষতি কমাতে ইসরাইলের প্রচেষ্টাকে অকার্যকর ও অপর্যাপ্ত বলে বর্ণনা করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এটাও লক্ষ্য করেছে যে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথম মাসগুলোতে গাজায় সর্বোচ্চ মানবিক সহায়তা সর্বাধিক করতে আমেরিকার যে প্রচেষ্টা ছিল, তাতে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করেনি ইসরাইল। এ কারণেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে খারাপের দিকে গেছে। তবে বর্তমানে গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়া গাড়িগুলোকে ইসরাইল আটক কিংবা বাধা দিচ্ছে না বলেও উঠে এসেছে মার্কিন ওই প্রতিবেদনে।
এই প্রতিবেদন যারা প্রস্তুত করেছেন, তাদের একজন আমেরিকায় নিয়োজিত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড স্টারফিল্ড বলেছেন, গাজা যুদ্ধের প্রথম থেকেই ইসরাইলি পদক্ষেপগুলো পর্যবেক্ষণে এনেছে আমেরিকা। তিনি বরৈন, 'সারা বিশ্ব দেখেছে, এটা অন্যসব যুদ্ধ কিংবা সংঘাতের মতো ছিল না। আমরা একদম খোলামেলাভাবে প্রতিটি বিষয়ের বিশ্বাসযোগ্য মূল্যায়ন তুলে আনার চেষ্টা করেছি এই প্রতিবেদনে।'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রকাশ্যে ইসরাইলের কাছ থেকে কিছু বোমা এবং আর্টিলারি শেল প্রত্যাহার করার হুমকি দেওয়ার কয়েকদিন পরে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছে। যখন রাফাহতে হামাসের শেষ শক্ত ঘাঁটিতে ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, রাফাহ অভিযান হবে 'চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করা'।
সোমবার থেকে এক লাখের বেশি মানুষ রাফাহ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। জাতিসংঘ বলছে, অব্যাহত বোমাবর্ষণের মধ্যে ইসরাইলি ট্যাংকগুলো আরও কাছাকাছি চলে আসছে। অভিযানের শুরুতে মিসরের কাছে রাফাহ সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরাইলি বাহিনী এবং সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। তখন থেকেই জাতিসংঘ বলে আসছে, এই সীমান্ত দিয়ে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো বেশ বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।
ইসরাইলি হামলায় ৮ শিশুসহ নিহত ২০
গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় আট শিশু এবং আট নারীসহ কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন। দেইর আল-বালাহ শহরের আল-আকসা হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এছাড়া বুরেইজ শরণার্থী শিবিরসহ আজ-জুয়াইদা এবং আল-মুঘরাকা শহরেও হামলা চালানো হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ইরেজ সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরই গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরাইল। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সেখানে ৩৪ হাজার ৯০৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।