শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

বিনামূল্যে বই বিতরণ

শিক্ষার মানোন্নয়নে নজর দিতে হবে
  ০৩ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
বিনামূল্যে বই বিতরণ

প্রতি বছরের মতো চলতি বছরের প্রথম দিন সারাদেশে 'বই উৎসব' পালিত হয়েছে। বছরের প্রথম দিন দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই বিতরণ শেখ হাসিনা সরকারের বড় কৃতিত্ব। করোনাভাইরাসের কারণে প্রতি বছরের মতো যদিও এবার বই উৎসব প্রাণ পায়নি। প্রাথমিকের সব বই সময়মতো হাতে পাওয়ায় শুক্রবার ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে। তবে মাধ্যমিক স্তরের প্রধান শিক্ষকরা বলেছেন, সব ক্লাসের বই এখনো হাতে পাননি তারা। আগামী দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে সব বই পাওয়া যাবে বলে শিক্ষা অফিস থেকে তাদের জানানো হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার বছরের প্রথম দিন একসঙ্গে পাঠ্যপুস্তক উৎসব না করে ভাগে ভাগে ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি বই তুলে দেওয়া হবে। প্রাথমিক স্তরের বইগুলো শুক্র ও শনিবার এবং মাধ্যমিকের বইগুলো ১ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বিতরণ করতে সরকারের তরফ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রথম দিনেই বেশির ভাগ বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা না এসে অভিভাবকরা এসে বই সংগ্রহ করেছে।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সকাল থেকে বিনামূল্যে বই তুলে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের হাতে। নতুন বছরের প্রথম দিনে চার কোটি ১৬ লাখের বেশি শিশু-কিশোরের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেয়া সহজ ব্যাপার নয়। এতসংখ্যক ছেলেমেয়ের শিক্ষাদীক্ষায় সরকারি সুবিধা নিশ্চিত করা সহজ বিষয় নয়। সংগত কারণে এই 'বই উৎসব' শিক্ষার্থীদের মাঝে অন্যরকম উদ্দীপনা জোগায়।

বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পেয়ে নতুন স্বপ্নের হাতছানিতে এগিয়ে যায় আমাদের দেশে ছেলেমেয়েরা। এত শিশুর হাতে একসঙ্গে বই তুলে দেওয়া নিঃসন্দেহে এক মহাযজ্ঞ।

এবারও যথাসময়ে বই ছাপা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল, গণমাধ্যমে এসেছিল এমন খবর। এরপরও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সব বাধা কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে এত বড় সাফল্য যাতে কলঙ্কিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়ার আগে থেকেই কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করা।

অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, বছরের প্রথম দিন নতুন বই প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে দেশের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের আনন্দের ঝিলিক চোখে পড়ে। নতুন বই হাতে পাওয়ার আনন্দই আলাদা। ২০১৭ সাল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্রেইল বই, পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য তাদের নিজেদের ভাষায় লেখা প্রাক-প্রাথমিকের বই ও শিক্ষা উপকরণ এবং শিক্ষকদের শিক্ষক নির্দেশিকা বিতরণ শুরু হয়। করোনাকালেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রতি বছর বই বিতরণকে ঘিরে যে উৎসব তা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক বাড়তি আনন্দ যোগ করে। তবে বিনামূল্যের বই কালোবাজারে বিক্রির ঘটনা প্রতি বছরই সামনে আসে। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজরদারি বাড়াতে হবে।

এটা সত্য, করোনাকাল বাদে গত ১১ বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সফলতা এসেছে আমাদের। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। শিক্ষা যে দারিদ্র্যমুক্তির একটি প্রধান দিক তাও প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশে। দেশের শিক্ষা খাতে এটি সরকারের একটি অন্যতম সাফল্য। বিনামূল্যের বই বিতরণ শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধেও সহায়ক ভূূমিকা পালন করে। সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, এই মহৎ উদ্যোগের পূর্ণাঙ্গ সফলতার জন্য শিক্ষা এবং শিক্ষা উপকরণের মানের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। দেশে শিক্ষা বিকাশে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষা উপকরণ পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা হতে হবে যুগোপযোগী, আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত। এ ছাড়াও নৈতিকতাবোধসম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরির দিকেও সমান গুরুত্ব দেয়া সমীচীন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে