শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্যচিত্রে বাংলাদেশের অদম্য উন্নয়ন খতিয়ান

দেশকে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে প্রতিটি সেক্টরে নির্ভুল ও সময়ানুগ পরিসংখ্যানের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বলা বাহুল্য যে বর্তমান বিশ্বে যে কোনো ধরনের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশও এর ব্যতিক্রম নয়।
মো. আজগর আলী
  ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ (এসআইডি) এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) যৌথ উদ্যোগে 'গুণগত পরিসংখ্যান উন্নত জীবনের সোপান' এ প্রতিপাদ্য নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস পালিত হলো। বর্তমানের অবস্থা বুঝে ভবিষ্যতে কোনো জিনিস কী অবস্থায় থাকবে সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা কেবল পরিসংখ্যানের মাধ্যমেই আমরা অবহিত হতে পারি। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি জাতীয় আয় কীভাবে নিরূপণ হবে এবং কীভাবে বন্টন করতে হবে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব, দরিদ্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও সমস্যার প্রকৃতি নিরূপণ ও পর্যালোচনা পরিসংখ্যানের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। যাহোক, পরিসংখ্যান কোনো একটি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার চিত্র ফুটিয়ে তোলে- যা ওই দেশের অগ্রগতি ও বৈষম্যের চিত্র আমাদের সামনে প্রতিভাত করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জানতেন যে, সঠিক পরিসংখ্যানই কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নের পূর্বশর্ত। যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে আর্থিক সংকট ও নানা ব্যস্ততার মাঝেও বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের প্রথম আদমশুমারি সম্পন্ন করেন। তখন তার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন। জনসংখ্যার নু্যব্জ ভারে ভারাক্রান্ত স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, গ্রামীণ গৃহায়ণ ও পানি সরবরাহ প্রভৃতি বিষয়ে সম্যক ধারণা নিয়ে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈষম্যহীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য যে সমস্ত সূচক ওতপ্রোতভাবে জড়িত সে লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই থেকে প্রথম পাঁচশালা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮) কার্যকর করেন। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্য হ্রাস। তখন লক্ষ্য অর্জনের জন্য কৌশল হিসেবে বলা হয়েছিল কর্মের সুযোগ বৃদ্ধি, সমতাভিত্তিক বণ্টন, কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩% থেকে ৫.৫%-এ উন্নীত করা। বাংলাদেশে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে পরিসংখানের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিসংখ্যান কার্যক্রমে নিয়োজিত কয়েকটি পৃথক প্রতিষ্ঠানকে একীভূত ও সুসমন্বিত করে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে শিল্পের অবদান ছিল ৭.২৮% ভাগ। বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনে শিল্প খাতের অবদান ৩১.১৩ % (শতাংশ)। বর্তমানে তা বহুগুণ তরান্বিত হওয়ার ফলে দেশের রপ্তানি আয়ও বেড়ে যাচ্ছে। গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে যে শিল্পটি দেশের অর্থনীতির চাকাকে গগনচুম্বী করে স্বকীয়তা বজায় রেখে দুর্বার গতিতে বেগবান সে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প যা বার্ষিক রপ্তানি আয়ের ৮২% (শতাংশ) দেশের জন্য আয় করছে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বৃদ্ধির সঙ্গে জাতীয় উৎপাদনের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ও কম যায় না। ২০০১-০২ থেকে ২০০৮-০৯ মোট জাতীয় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫.৬%, এরপর প্রতি বছরই তা ৬% এর অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১-এ ৮.২ উন্নীত হয়েছে। ১৯৭২-৭৩ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৮৮ মার্কিন ডলার, ১৯৮২-৮৩ সালে ১৮৯ ডলার, ১৯৯২-৯৩ সালে ২৮৫ ডলার, ২০০২-০৩ সালে ৪৭১ ডলার, ২০১২-১৩ সালে ১০৫৪, ২০১৭-১৮ সালে ১৭৫২ ডলার এবং বর্তমানে ২২২৭ ডলার এ উন্নীত হয়েছে। অন্যান্য সামাজিক সূচকেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পৃথিবীর অনেক উন্নয়নশীল দেশ থেকে অনেক অগ্রগামী। যেখানে ২০০০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮%, ২০১৮ সালে তা হ্রাস পেয়ে ২০.৫% এ পৌঁছেছে। অতি দারিদ্র্যর হার ২০০০ সালে ছিল ৩৪.৫%- যা ২০১৮ সালে কমে ১০.৫% হয়েছে। মাতৃমৃতু্য ও ৫ (পাঁচ) বছরের নিচে শিশু মৃতু্যর হার হ্রাস পেয়েছে। ২০১২ সালে প্রতি হাজার জীবিত শিশু ৫ (পাঁচ) বছরের নিচে শিশু মৃতু্যর হার ছিল ৪২- যা ২০২০ সালে কমে ২৮ পৌঁছেছে। ২০১২ সালে মাতৃ মৃতু্যর অনুপাত ছিল ২.০৩- যা ২০২০ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১.৬৩। অন্যদিকে দেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ২০১২ সালের ৬৪.৯ বছর থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ৭২.৮ বছর হয়েছে। কৃষি খাতে বৈপস্নবিক উন্নতি সাধিত হয়েছে। ১৯৭২-৭৩ সালে দেশে মোট ধান উৎপাদন ছিল ৯৯.৩ লাখ মে.টন বিগত ৫০ বছরে বেড়ে অর্থাৎ ২০২০-২০২১ সালে ৩৭৬.০৮ লাখ মে.টনে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে বিশ্ব বাজারে ৪র্থ অবস্থানে রয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে ২য় অবস্থানে, যথাক্রমে পাট, কাঁঠাল ও ছাগলের দুধ। অন্যদিকে বাংলাদেশ অন্যান্য ফসল যথা- সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে ৬ষ্ঠ এবং অষ্টম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে আম ও পেয়ারা। বিগত ৫০ বছরে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর সাফল্য লাভ করেছে। শুনতে ভালো লাগে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ভাবতেও অবাক লাগে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো ছন, খড় ও গোলপাতার ছাউনি দিয়ে বাসগৃহ তৈরি হয় না। সে জায়গায় তৈরি হচ্ছে টিনের/আধা পাকা ঘর। এখন দেশের মানুষের খোলা জায়গায় যততত্র মলমূত্র ত্যাগ ও কাঁচা পায়খানা (নন-স্যানিটারি) ব্যবহার করার অভ্যাস কদাচিৎ লক্ষ্য করা যায় তদস্থলে স্যানিটারি টয়লেট সুবিধা ৮১.৫% (২০২০)। খাবার পানি (ট্যাপ এবং নলকূপ) এর ব্যবহার ৯৮.৩% (২০২০) পৌঁছেছে। কেরোসিন ব্যবহৃত কুপি/হারিকেনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। সে সঙ্গে বৈদু্যতিক বাতির ব্যবহারও আশাতিত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে (২০২০) ৯৬.২% বিদু্যৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। ও সব দেখতে কার না ভাােল লাগে। কার না মন জুড়ায়। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ঢাকা মোট্রোরেল, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলি টানেল নির্মাণ এবং রপ্তানিমুখী বৃহৎ শিল্পের বিকাশের নিমিত্ত মেগা প্রকল্পসমূহের কাজ দ্রম্নত গতিতে সম্পাদিত হতে চলছে। এগুলো খুশির এক পশলা চমক বৈকি! নিঃসন্দেহে আমাদের অর্থনীতিতে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। অর্থনৈতিক সূচকসমূহের নাম ছাপার অক্ষরে লিখলে অনেকে হয়তো ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজনীতির ময়দানে স্বভাবসুলভ বিরোধিতার ফাঁকা বুলি আওড়াবেন এটাও যেমন সত্য তেমনিভাবে প্রবন্ধে উলিস্নখিত ৫০ বছরের পরিসংখান তথ্য-উপাত্ত দেখে এও প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। এখানেই গল্পের শেষ নয়। জাতির ইতিহাসে এটি একটি প্রধান মাইলফলক হলেও, অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো আগামী দিনগুলোতে আরও জোরালো হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টে যেতে পারে। এলডিসি থেকে বের হয়ে পূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার চূড়ান্ত স্বীকৃতি মিলতে বাংলাদেশকে আরো চার বছর অপেক্ষা করতে হবে। কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)-এর প্রস্তাবের আলোকে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ দ্বারা প্রতি তিন বছরে এলডিসি তালিকাটি পর্যালোচনা করা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থানগত বলয় নির্ণীত হবে। তবে প্রতীক্ষার শেষ প্রহর নির্ণীত হবে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দেয়ার মাধ্যমে। এজন্য উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। তবে উন্নত দেশগুলোর সমান স্তরে পৌঁছাতে হলে আমাদের আরও অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে। অর্থনৈতিক বিকাশের ধারা 'আত্মনির্ভরশীল' স্তরে উন্নীত হওয়ার প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে। দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিদু্যৎ, গ্যাস, জ্বালানি, যোগাযোগ, কর্মমুখী শিক্ষা, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ভারী শিল্পের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। আমাদের উচিত এমন এক বিনিয়োগ কর্মসূচি গ্রহণ করা যাতে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি। আর এগুলোর জন্য দরকার নির্ভরযোগ্য পরিসংখান তথ্য ও সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা। যেনতেন প্রকারে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলে পরিণাম ভালো হবে না।সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের জন্য যা যা দরকার তা-ই বাস্তবায়ন করতে হবে। এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে পরিসংখ্যান একটি উচ্চতাত্রার কারিগরি বিজ্ঞান। এ বিজ্ঞান নিয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। যাহোক, প্রবন্ধ প্রসঙ্গ জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস আরও গুরুত্বপূর্ণ তা এই যে, বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য ক্রমাগত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল বলয়ে উত্তরণ সেটি ব্যক্তিগত উত্তরাধিকার নয়; বরঞ্চ যে কারণে সে বড় হয়ে উঠেছে তা মোটাদাগে বেশ কয়েকটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচক- যা তথ্য-উপাত্ত আকারে পরিসংখ্যানবিদরা নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে জাতির সামনে তুলে ধরেন। যা একটি জাতির সফলতা, ব্যর্থতা ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার জ্বলন্ত মশাল ও গাণিতিক দলিল। সত্যি বলতে কি দৈনন্দিন জীবনে এমন কি কবর পর্যন্ত পরিসংখ্যানিক তথ্য ব্যবহার করা হয় না এমন কোনো ক্ষেত্র এ পৃথিবীর সভ্য মানুষের আছে কী ? আমরা জানি, মানবজীবনের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা যথা- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা এগুলোর অতীত, বর্তমান উৎপাদন, আয়তন, ভোগ, ব্যবহার, বিনিময় ও মানব আচরণ সংক্রান্ত সববিষয়েই কোনো না কোনোভাবে পারিসাংখ্যিক তথ্যের ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। তাই বিভিন্ন দেশে জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থার মাধ্যমে দেশের প্রয়োজনীয় সব তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত ও প্রকাশিত হয়- যা দেশের সব পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হলো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো। বর্তমানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোই সরকারি পরিসংখ্যানপ্রস্তুত ও প্রকাশের জন্য একমাত্র সংস্থা হিসেবে স্বীকৃত। অর্থনৈতিক, জনমিতিক, সামাজিক সব ক্ষেত্রে পরিমাণগত ও গুণগত পরিমাপে পরিসংখ্যানের ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।

দেশকে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে প্রতিটি সেক্টরে নির্ভুল ও সময়ানুগ পরিসংখ্যানের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বলা বাহুল্য যে বর্তমান বিশ্বে যে কোনো ধরনের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

আশার কথা, জনস্বার্থ রক্ষার জন্য পরিসংখ্যান আইন-২০১৩ প্রণীত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ও সচেতন সরকারি নীতির আলোকে তা বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন রয়েছে। স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়ন এবং সার্বিকভাবে জাতীয় উন্নয়নের জন্য সঠিক ও সমোয়চিত পরিসংখ্যানের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়াও, ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, রূপকল্প-২০৪১ এবং ডেল্টা পস্ন্যান ২১০০ সহ সব জাতীয় ও আঞ্চলিক মাইলফলক অর্জনের জন্যও সঠিক ও গুণগত পরিসংখ্যান অপরিহার্য। সহস্রাব্দ উন্নয়ন অর্জনে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। যারা একদিন গাঁটছড়া বেঁধে বাংলাদেশের টিকে থাকা নিয়ে সন্দিহান প্রকাশ ও 'বাস্কেট কেস' অপবাদে আখ্যায়িত করেছিল তাদের মুখে ফুলচন্দন পড়ুক। যাহোক বাংলাদেশকে বলা হয়ে থাকে উন্নয়নের রোল মডেল। এ সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে আগামীতে ২০৩০ টেকসই লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়া এবং ২১০০ সালে ডেল্টাপস্ন্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ব্যবস্থার প্রচলন, সব স্তরে কার্যকর, জবাদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র পরিচালনের জন্য সঠিক, নির্ভুল ও গুণগত পরিসংখ্যান নিশ্চিত করতে পারি এই হোক জাতীয় পরিসংখ্যান দিবসের অঙ্গীকার।

মো. আজগর আলী : গবেষক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে