শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে আজ উন্নয়নের রোল মডেল

১৫ বছর আগের সঙ্গে দেশের বর্তমান অবস্থার তুলনা করলে দেখা যায়, সর্বক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের অর্জন অনেক এবং সব সূচকে এগিয়ে আছে আজকের বাংলাদেশ। আগের সরকারের আমলে গড় জিডিপি ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলার, এখন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তা সাড়ে সাত গুণ বেড়ে ৪৬০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে এবং বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর ৩৫তম বড় অর্থনীতির দেশ। আর এটি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ও বাস্তবমুখী প্রকল্প এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে।
ড. লায়লা আক্তার রাত্রি
  ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে আজ উন্নয়নের রোল মডেল
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে আজ উন্নয়নের রোল মডেল

আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ। প্রতিদিনই বদলাচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে, অগ্রগতির পথে, সমৃদ্ধির পথে।

১৫ বছর আগের সেই বাংলাদেশ আর নেই। একটু একটু করে উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এক সময় বাংলাদেশকে বিশ্ববাসী পিছিয়ে পড়া দেশ হিসেবে দেখত কিন্তু এখন তার চিত্র ভিন্ন।

এখন বাংলাদেশকে কেউ অবহেলা করতে পারে না। বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে এখন সম্মানের চোখে দেখে। শেখ হাসিনা সরকার দেশের অভূতপূর্ব উন্নতি করতে পেরেছেন বলেই বিশ্ববাসী আজ বাংলাদেশকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করে।

২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রতিদিন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

ক্ষুদ্র আয়তনের একটি দেশ ও উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের কাছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে লাখো প্রতিবন্ধকতা।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যজাত বাঙালি জাতির ৫২ বছরের অর্জনের পরিসংখ্যান আজ নিতান্ত অপ্রতুল নয়।

\হশিক্ষা, শিশুমৃতু্য হার কমানো, স্বাস্থ্যসেবা উন্নতিকরণ, টীকাদান কার্যক্রমে ব্যাপক সফলতা, বেকারত্ব দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং দারিদ্র্য হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উলেস্নখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে।

বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। সব শ্রেণিপেশার লোক তাতে উপকৃত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর সেশনজট নেই, হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ নেই, আন্দোলন নেই, সন্ত্রাস নেই। গত কয়েকদিন ধরে যে অবরোধ হলো তাতে আমরা দেখলাম সাধারণ মানুষ তা একেবারেই মানছে না, রাস্তায় পর্যাপ্ত গাড়ি চলছে, মানুষজন কাজকর্মে যাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা স্কুল-কলেজে যাচ্ছে। এখন ছেলেমেয়েরা নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতে পারে কিন্তু ১৫ বছর আগে এ অবস্থা ছিল না। ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করছেন। সাধারণ মানুষের হাতে টাকা এসেছে। খাদ্য আছে, চিকিৎসা আছে, বাসস্থান আছে। মানুষের আয় বেড়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অর্জন এখন সারা বিশ্বে বিস্ময়।

জাতিসংঘের মতে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল- যা মানুষের চিন্তাধারায় অকল্পনীয় ছিল সেগুলো শেখ হাসিনা সরকার বাস্তবে সম্ভব করেছেন এবং মানুষ তার সুফল ভোগ করছে। মানুষ এখন বিশাল যানজট ছাড়াই খুবই অল্প সময়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে পারছে মেট্রোরেলে। টিএসসি ও মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলে যাতায়াত সুবিধা থাকায় ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অফিসগামী মানুষসহ সব পেশার মানুষ ও সাধারই মানুষ ভীষণভাবে উপকৃত ও খুশি। দেশের অবকাঠামোতে বৈপস্নবিক অবস্থার সৃষ্টি করেছেন শেখ হাসিনা সরকার।

আজ ঘরে ঘরে বিদু্যৎ পৌঁছে গেছে, ভাবা যায়! কোথাও আর অন্ধকার নেই। অথচ ১৫ বছর আগে কি ছিল বিদু্যতের অবস্থা।

\হএক সময় যা আমাদের দেশে কল্পনার বাইরে ছিল যেমন- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, যারা নির্যাতিত, বিধবা, যাদের কাজ নেই, বেকার, তাদের জীবনমান উন্নয়ন করার জন্য শেখ হাসিনা সরকার ধনী ও উন্নত দেশের মতো সোশ্যাল প্রটেকশন প্রোগ্রাম চালু করেছেন। যেমন- আমেরিকায় সোশ্যাল সিকিউরিটি প্রোগ্রাম আছে। শেখ হাসিনা সরকার বাজেটের একটি বিরাট অংশ প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা সোস্যাল সিকিউরিটি প্রোগ্রাম বাবদ বরাদ্দ করেছেন, উন্নয়নশীল দেশও যে পারে তার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। এর ফলে করোনার মধ্যেও আমাদের অর্থনীতির সচল ছিল জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৯৪%- যা দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ।

১৫ বছর আগের সঙ্গে দেশের বর্তমান অবস্থার তুলনা করলে দেখা যায়, সর্বক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের অর্জন অনেক এবং সব সূচকে এগিয়ে আছে আজকের বাংলাদেশ। আগের সরকারের আমলে গড় জিডিপি ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলার, এখন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তা সাড়ে সাত গুণ বেড়ে ৪৬০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে এবং বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর ৩৫তম বড় অর্থনীতির দেশ। আর এটি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ও বাস্তবমুখী প্রকল্প এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে।

\হআগের সরকারের আমলে মাথাপিছু আয় ছিল গড়ে ৪৪৯ ডলার তা সোয়া ছয় গুণ বেডে এখন ২৮২০ ডলার। বিএনপি সরকারের সময়ে গড় রপ্তানি ছিল ৭.৪ বিলিয়ন ডলার, আর এখন সাতগুণ বেড় ৫২ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে। বিএনপি সরকারের সময় শিক্ষার হার ছিল ৪৭ ভাগ, আর এখন ৭৪ ভাগ। বিএনপি সরকারের সময় শিশুমৃতু্যর হার ছিল প্রতি হাজারে ৫৫ জন, আর এখন ২৫ জন। বিএনপি সরকারের সময়ে ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ ছিল গড়ে মাত্র ৩.৪ বিলিয়ন, আর এখন ১০ গুণ বেড়ে ৩৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

স্বাধীনতার ৫২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ যে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে এবং সব সূচকে এগিয়ে গেছে অবিশ্বাস্যভাবে। এই উন্নয়নের কথা বলতে গেলে উঠে আসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কথা। উঠে আসে জাতির পিতা কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে কীভাবে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আজকের যে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ তা জাতির পিতার গৃহীত পদক্ষেপের সফল বাস্তবায়নের ফলাফল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ওষুধশিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন সূচকে ও অর্থনৈতিক সূচকে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, থার্ড টার্মিনাল, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা সরকার।

শেখ হাসিনা সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছেন। দেশের তরুণদের ইনোভেশন বা সৃজনশক্তির বিকাশে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন, এন্টারপ্রেনারশিপ বা ব্যক্তি উদ্যোগ এবং ফ্রি মার্কেট লিবারেল এন্টারপ্রাইজের ওপর অধিক জোর দিয়েছেন। ইন্টারনেটকে সহজলভ্য করে ও বিভিন্ন আইটি ও ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করে নারী ও পুরুষ এবং তরুণ ও কিশোরদেরও ফ্রিল্যান্সিং করার সুযোগ করে দিয়েছেন। ফ্রিল্যান্সারা দেশে ঘরে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। যার ফলে আমাদের অর্থনীতি আজ শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, 'আসুন দলমতনির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।'

ড. লায়লা আক্তার রাত্রি : লেখক, গবেষক, রাজনীতিবিদ, চেয়ারম্যান, সোশ্যাল ওয়ার্ক অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে