মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্বলতা কোথায় বাস্তবানুগ হয়ে খতিয়ে দেখতে হবে বিএনপিকে

দল নিবেদিত নেতাকর্মী তৈরির কারখানা বলা যায় ছাত্র সংগঠনকে। ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালে পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি প্রয়োগ করেছিল। এতে আওয়ামী লীগের কমান্ড কাঠামো অনেকটাই ভেঙে পড়েছিল। সে সময় আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অকুতোভয় নেতাকর্মীরা এগিয়ে এসে দলকে বিপর্যয় থেকে রক্ষাই শুধু করেনি, দলকে শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতাও এনে দিয়েছিল। বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এক সময় দেশের সর্ববৃহৎ ছাত্রসংগঠনই শুধু ছিল না, দলের শক্তির মূল উৎসও ছিল। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির মূলশক্তি ছিল ছাত্রদল। ছাত্রদল হতে পারত বিএনপির নিবেদিত নেতাকর্মী তৈরির ফ্যাক্টরি, দুঃসময় উতরানোর অদম্য কান্ডারি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদল যেভাবে গড়ে তুললে জাতীয়তাবাদী শক্তির ভ্যানগার্ড হতে পারত সেভাবে গড়ে তোলা যায়নি বা গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি
জহির চৌধুরী
  ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দুর্বলতা কোথায় বাস্তবানুগ হয়ে খতিয়ে দেখতে হবে বিএনপিকে

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল- এটা অস্বীকারের জো নেই। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। দলটির জন্ম নিয়ে রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের নেতিবাচক মন্তব্য থাকলেও বাস্তবতা এটাই, আত্মপ্রকাশের পরপরই দলটির প্রতি দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর উলেস্নখযোগ্য সমর্থন লক্ষ্য করা গেছে। নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সাড়ে চার দশকেরও বেশি সময় বৃহৎ জনগোষ্ঠী সমর্থিত দল হিসেবে টিকে আছে বিএনপি। ৫ বার সরকার গঠনও করেছে দলটি। দলটি সর্বশেষ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। ২০০৬ সালের অক্টোবরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর পর থেকে দলটি আজ অবদি ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। এত দীর্ঘ সময় দলটির রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকার নজির নেই। প্রায় ১৮ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দলটির জনসমর্থনে চিড় লক্ষণীয় নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি সরকার গঠনে সক্ষম হবে।

\হবিপুল জনসমর্থিত দল হওয়া সত্ত্বেও বিএনপি কেন প্রায় দেড়যুগ রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে, আন্দোলনে কেন সফলতা নেই কেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের ব্যাপক আলোচনা ও বিশ্লেষণ রয়েছে। আলোচনা-বিশ্লেষণে যে কারণগুলো ব্যাপকভাবে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, বিএনপির ক্ষমতামুখী রাজনীতি, প্রধান প্রতিপক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দমননীতি, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিএনপি নেতাদের একটা অংশের প্রতিপক্ষের সঙ্গে আঁতাত, দলে নিবেদিত ত্যাগী নেতাকর্মী অবমূল্যায়ন, দলের একটা অংশের অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, প্রতিপক্ষের কৌশল বুঝে পাল্টা কৌশল গ্রহণের সক্ষমতার অভাব, প্রতিপক্ষের প্রোপাগান্ডা মোকাবিলার ব্যর্থতা, সাংগঠনিক দুর্বলতা, পেশাজীবীদের কর্মসূচিতে আশানুরূপ সম্পৃক্ত করতে না পারা, কূটনৈতিক তৎপরতায় অপরিপক্বতা, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উদারতা-সরলতা, একগুঁয়েমি, অহমিকা, আবেগপ্রবণ, বিচক্ষণতার অভাব, অবিশ্বাস-অতিবিশ্বাস, স্বেচ্ছাচারিতা, দলের কার্যক্রম মনিটরিংয়ে ত্রম্নটি-বিচু্যতি ইত্যাদি।

আলোচক-বিশ্লেষকদের মূল্যায়নগুলো 'নানামুনির নানা মত'-এর মতো হলেও উঠে আসা কারণের সবকয়টি যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, আবার সবকয়টি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মতোও না। এ নিবন্ধে বিষয়টি আমার দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করব। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, বাংলাদেশের মানুষের অনুভূতি-আকাঙ্ক্ষা, মন-মানসিকতা, আত্মসামাজিক অবস্থা, আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট-পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি গঠন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন দেশের মানুষকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং জাতীয়তাবাদী শক্তির ভিত মজবুতকরণের বিকল্প নেই। এর জন্য দরকার প্রকৃত জাতীয়তাবাদী দল। প্রকৃত জাতীয়তাবাদী দল গঠনের চিন্তা থেকেই গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি)। বাংলায় দলটিকে বলা হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। ওই সময়কার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশায় অবস্থান করা জাতীয়তাবাদী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল দলটি। দল গঠনের পর এ দলের প্রতিষ্ঠাতা দেশের আপামর মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশায় নিয়োজিত/অন্তর্ভুক্তদের জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এক কথায় বলতে গেলে এ দলের প্রতিষ্ঠাতা দেশে শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী শক্তি গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন। দলটির প্রতিষ্ঠাতার জীবদ্দশাতেই তরুণ প্রজন্ম এবং জনগোষ্ঠীর উলেস্নখযোগ্য অংশ জাতীয়তাবাদী আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল, দেশে জাতীয়তাবাদী শক্তির মোটামুটি শক্ত ভিতও গড়ে উঠেছিল। সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত, বিএনপির সব কর্মকান্ডের সঙ্গে একমত নন এমনরাও পরোক্ষ-প্রত্যক্ষভাবে নবগঠিত বিএনপিকে সহায়তা দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী শক্তি সুদৃঢ়করণের স্বার্থে।

আত্মপ্রকাশ কালে বিএনপির মূল লক্ষ্য/এজেন্ডা ছিল দেশে জাতীয়তাবাদী শক্তি সৃষ্টি ও শক্তিশালীকরণ। বিএনপির রাজনীতির প্রাণভোমরা কি এমন প্রশ্নের একমাত্র উত্তর জাতীয়তাবাদী শক্তি। রাজনৈতিক বোদ্ধাদের কেউ কেউ মনে করেন বিএনপি মূল লক্ষ্য থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। এ অভিমত ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আমার মূল্যায়নে ১৯৯১ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপি জাতীয়তাবাদী শক্তি সৃষ্টি এবং শক্তিশালীকরণের মিশন থেকে অনেকটা সরে এসে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকাকে প্রধান্য দিচ্ছে, এর ফল দলের জন্য ভালো হয়নি। ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার পর বিএনপি জাতীয়তাবাদী শক্তির বিকাশ ও মজবুতকরণ অগ্রাধিকার না দিয়ে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির প্রতি বেশি মনোযোগ দিয়ে দলে সুযোগ-সুবিধা সন্ধানীদের ব্যাপক সম্মিলনের সুযোগ করে দিয়েছে। আমার মূল্যায়নে বিএনপি এতটা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়ার মূল কারণ জাতীয়তাবাদী সৃষ্টি ও শক্তিশালীকরণের গরজ অনুভব না করা। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে ব্যাপক জনসমর্থন কখনো কখনো ক্ষমতা যাওয়া বা দলের প্রতিকূল পরিস্থিতি উৎরানোর সহায়ক হয় না। বিপুল জনসমর্থন সত্ত্বেও বিএনপি প্রতিকূল পরিস্থিতি উৎরাতে পারছে না-এর বড় কারণ জনসমর্থন ছাড়াও স্থানীয় যে জায়গাগুলোর (বিভিন্ন শ্রেণিপেশা) পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ সাহায্য-সহযোগিতা আবশ্যক হয় সে জায়গাগুলোতে ব্যাপক জাতীয়তাবাদী মনোভাবাপন্ন সৃষ্টির ব্যর্থতা, জায়গাগুলোর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি। বিভিন্ন শ্রেণিপেশায় অবস্থানকারী জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধরা সরাসরি দলের কর্মকান্ডে না জড়ালেও, দলের কিছু কর্মকান্ডের সমালোচনা করলেও দল জাতীয়তাবাদীদের ঠিকানা হওয়ার কারণে দলের ক্রান্তিকালে সাধ্যমতো সহযোগিতা দিতে কাপর্ণ্য করে না।

বিভিন্ন সময় বিএনপির দুর্বলতাগুলো বিশ্লেষণ করে পত্রপত্রিকায় অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ দৈনিক যায়যায়দিন-এ 'নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় করতে কঠোর অবস্থান বিএনপির' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এর আগে ২৭ ফেব্রম্নয়ারি, ২০২৩ তারিখে একই পত্রিকায় 'নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় করতে কঠোর হচ্ছে বিএনপি' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। দুটি প্রতিবেদনের প্রথমটি বছরের দ্বিতীয় মাসে দ্বিতীয়টি বছরের শেষ মাসে প্রকাশ হয়েছে। দুটি প্রতিবেদনের সারকথা দলের কর্মসূচিগুলোতে নেতাদের উলেস্নখযোগ্য অংশের ভূমিকা কাঙ্ক্ষিত হয়নি, ফেব্রম্নয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসেও দলের কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় নেতাদের সক্রিয় করা সম্ভব হয়নি। ডিসেম্বর মাসে দৈনিক যুগান্তরে 'বিএনপি নেতাদের মাঠে চায় হাইকমান্ড' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এ প্রতিবেদনেরও সারকথা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলের কর্মসূচি সফলে মাঠে জীবনমরণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হলেও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের উলেস্নখযোগ্য অংশের অংশগ্রহণ ছিল হতাশাজনক। এসব প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, দলের কর্মসূচিতে যাদের উপস্থিতি জরুরি তাদের উলেস্নখযোগ্য সংখ্যকের অনুপস্থিতি, দলে নিষ্ক্রিয় নেতার আধিক্য, সুযোগ-সুবিধা সন্ধানীদের অতিমূল্যায়ন দলকে ভোগাচ্ছে।

রাজনীতিতে প্রচার-প্রচারণা, প্রোপাগান্ডা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বিএনপি প্রতিপক্ষের কাছে ধরাশায়ীই বলা যায়। বিএনপির প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ প্রচার-প্রচারণা, প্রোপাগান্ডায় জন্মলগ্ন থেকে শুধু পারদর্শীই নয়, কৌশলগত দিক থেকেও অগ্রসর। বিএনপির প্রতিপক্ষ নানা কায়দায় ভুল, মনগড়া, অসত্য, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে ফায়দা লুটলেও বিএনপি প্রায় ক্ষেত্রে কাউন্টার পর্যন্ত দিতে না পারা খোলামেলা। আগে দলের চিন্তা পরে ক্ষমতার চিন্তা হলে দল অপ্রতিরোধ্য হয়- এটা বিএনপির নেতাদের বড় অংশের ধর্তব্যে আছে বলে মনে হয় না। চাতক পাখি যেমনি মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকে, তেমনি বিএনপি নেতাদের বড় অংশ ক্ষমতার দিকে তাকিয়ে থাকেন। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জন্য আপাদমস্তক জাতীয়তাবাদী হতে হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রতিপক্ষের পক্ষে জাতীয়তাবাদীদের মাঠ-ময়দানে, যুক্তিতর্কে মোকাবিলা তখনই কঠিন হয় যখন জাতীয়তাবাদীরা ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে, জাতীয়তাবাদের চেতনাধারণ করে মোকাবিলা করে।

\হবিএনপি যদি আগাছা-পরগাছা, সুযোগ-স্বার্থসন্ধানীদের দিয়ে দল ভারী না করে জাতীয়তাবাদী তৈরির কারখানা হতো তাহলে দলের কর্মসূচিকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার নেতাকর্মীর অভাব অনুভূত হতো না, কিছুসংখ্যক সুযোগ-সুবিধা সন্ধানী, ঘরের শত্রম্ন বিভীষণ দলে থাকলেও কোণঠাসা থাকত, বিভিন্ন শ্রেণিপেশায় জাতীয়তাবাদী আদর্শ/চেতনার ধারক-বাহক সৃষ্টি হয়ে শক্তিশালী হতো। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে জনসমর্থন একটি ইনস্ট্রুমেন্টস মাত্র। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে, রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার মতো দল গড়তে আরো ইনস্ট্রুমেন্টস দরকার হয়। এসব ইনস্ট্রুমেন্টস-এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয় সামরিক-বেসামরিক-পুলিশ বিভাগ, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবীগোষ্ঠী, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, বহির্শক্তিকে। বাংলাদেশের মতো দেশে এসব ইনস্ট্রুমেন্টসের পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়া রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া বাস্তবিক অর্থেই কঠিন। জনসমর্থনের ইনস্ট্রুমেন্টস ছাড়া অন্যান্য ইনস্ট্রুমেন্টসের সহায়তা বিএনপি আশানুরূপ পাচ্ছে বলে মনে হয় না।

দল নিবেদিত নেতাকর্মী তৈরির কারখানা বলা যায় ছাত্র সংগঠনকে। ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালে পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি প্রয়োগ করেছিল। এতে আওয়ামী লীগের কমান্ড কাঠামো অনেকটাই ভেঙে পড়েছিল। সে সময় আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অকুতোভয় নেতাকর্মীরা এগিয়ে এসে দলকে বিপর্যয় থেকে রক্ষাই শুধু করেনি, দলকে শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতাও এনে দিয়েছিল। বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এক সময় দেশের সর্ববৃহৎ ছাত্রসংগঠনই শুধু ছিল না, দলের শক্তির মূল উৎসও ছিল। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির মূলশক্তি ছিল ছাত্রদল। ছাত্রদল হতে পারত বিএনপির নিবেদিত নেতাকর্মী তৈরির ফ্যাক্টরি, দুঃসময় উতরানোর অদম্য কান্ডারি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদল যেভাবে গড়ে তুললে জাতীয়তাবাদী শক্তির ভ্যানগার্ড হতে পারত সেভাবে গড়ে তোলা যায়নি বা গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি।

বিএনপির কর্মসূচিতে বিপুল জনসমাগম ঘটছে ঠিক। জনসমাবেশে আগতের বড় অংশ এসেছে সরকারে নানা কর্মকান্ডে অসন্তুষ্ট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অতিষ্ঠ হয়ে। দলের জনসমাবেশে বা কর্মসূচিতে আগত আমজনতা 'ডু অর ডাই' ভূমিকা নেয় না; 'ডু অর ডাই' ভূমিকা নেয় দলের একনিষ্ঠ সদস্যরা। দল একনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক দলের নিজস্ব শক্তি। নিজস্ব শক্তিই প্রকৃত শক্তি। দলের নিজস্ব শক্তি কতটা তা দেখেই দলের বাইরের শক্তি সহযোগী হতে এগিয়ে আসে। বিএনপি প্রাণ ন্যাশনালইজম, 'পাওয়ারইজম' নয়। কেবল ক্ষমতামুখী রাজনীতি রাজনৈতিক দলকে লাইনচু্যত এবং সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে- যার খেসারত দলকেই দিতে হয়। বিএনপি কেন প্রায় দেড় যুগ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তা বাস্তবানুগ হয়ে খতিয়ে দেখে উতরানোর পথ খোঁজা উচিত।

জহির চৌধুরী : কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে