বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সীমান্তে আতঙ্ক উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

নতুনধারা
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সীমান্তে আতঙ্ক উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

কোনো ঘটনায় সীমান্তে আতঙ্ক সৃষ্টি হলে তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক। যা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, ঘুমধুম, তুমব্রম্ন ও কক্সবাজারের টেকনাফের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পাশাপাশি আবারও রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক এ পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং সতর্কতাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য গুলি ও মর্টারের শব্দে প্রকম্পিত। সেখানে আরাকান আর্মির সঙ্গে তীব্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে মিয়ানমার সামরিক জান্তা। দিন যাচ্ছে আর জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে পরিস্থিতি। দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রম্নপের সঙ্গে সীমান্তবর্তী প্রদেশে সামরিক বাহিনীর লড়াই এখন তুঙ্গে। এই সংঘাতের আঁচ মিয়ানমারের সীমান্ত ছাপিয়ে বাংলাদেশেও লেগেছে গত বেশ কয়েক দিন ধরে। মাঝেমধ্যে গুলির খোসা ও মর্টার শেল এসে পড়ছে সীমান্তবাসীর বাড়িতে। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।

সংবাদ সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত, তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এর মধ্যে আরাকান সলভেশন আর্মি শক্তি বাড়িয়ে গত প্রায় ১৫ দিনে দু'টি রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিয়েছে। তাতে বিচলিত হয়ে পড়েছে মিয়ানমার সরকার। এখন থেকে তিন বছর আগে মিয়ানমারে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে হটিয়ে ক্ষমতা নেয় সামরিক সরকার। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জান্তাবিরোধী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ জোরালো হতে থাকে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন তাদের শক্তি আরও বাড়িয়ে তোলে। এসব গ্রম্নপই জান্তা সরকারের সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করে। তিন বছরের মাথায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির শান ও রাখাইন প্রদেশে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে।

এ কথা বলা দরকার, মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে- এটাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা, এ সংঘর্ষের রেশ এসে পড়েছে। ফলে মিয়ানমানের ঘটনার দিকে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের নজর রাখতে হবে এবং সীমান্তে সতর্ক অবস্থান বজায় রাখাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে জান্তাবিরোধী গোষ্ঠী মিয়ানমারে ৩শ'র বেশি সামরিক চৌকি এবং ২০টি শহর দখল করে নিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারে চলা ওই সংঘাতের আঁচ এসে লেগেছে বাংলাদেশের সীমা অঞ্চলে। এছাড়া বলা দরকার, এর আগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে নিরাপত্তার কারণে সীমান্তের পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। অন্যদিকে গত বুধবার অবিস্ফোরিত তিনটি মর্টার শেল নাইক্ষ্যংছড়ির ঘোনারপাড়া লোকালয়ে এসে পড়ে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে সোমবারও দুপুরে কোনারপাড়া এলাকায় বিস্ফোরিত মর্টার শেলের খোসা পাওয়া যায়। মঙ্গলবারও দিনগত রাতে ঘোনারপাড়া এলাকায় মিয়ানমার থেকে নিক্ষিপ্ত অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে। এসব ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানা যাচ্ছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এছাড়া রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে- এটাকেও এড়ানো যাবে না। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যেমন উদ্যোগ জারি রাখতে হবে, তেমনি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর এই সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইসু্যর কোনো গ্রহণযোগ্য বা দৃশ্যত সমাধান হয়নি- যা উদ্বেগের। ফলে মিয়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতি বা যে কোনো কারণেই হোক বাংলাদেশে রোহিঙ্গা যেন আবার প্রবেশ করতে না পারে সেই বিষয়টিকে সামনে রেখেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে